সংগীত শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের কারণে নানা ধরনের গান ও যন্ত্রসংগীত আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে । কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ,অফিসে কাজ করার সময় এবং বাড়িতে বিশ্রামের সময় গান শোনার অভ্যেস এখন তরুণদের পাশাপাশি বয়স্কদের মধ্যেও প্রভাবিত হয়েছে । এ ধরনের উচ্ছাসের সঙ্গেও আমাদের শ্রবণশক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । তবে বহু লোক ভুল পদ্ধতিতে গান শোনার কারণে নিজেদের শ্রবণশক্তি হারাতে বসেছে । যদি কানের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয়, তাহলে কোনো ধরনের যন্ত্র সংগীত বা কন্ঠ সংগীত স্পষ্টভাবে শুনতে পারবে না । তার ফলে তাদের মন খারাপ হবারই কথা । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে কানের শ্রবণশক্তির ক্ষতি প্রতিরোধক কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানাবো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত 'বিশ্বে শ্রবণশক্তি হারানো ও ক্ষতি সম্পর্কিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, একটু সচেতন হলেই কমপক্ষে শ্রবণশক্তির ক্ষতি অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায় । এ জন্য আমাদের শ্রবণশক্তির দিকটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত ।
শান্ত পরিবেশে সংগীত শোনা কানের শ্রবণশক্তির জন্য সহায়ক । সংশ্লিষ্ট গবেষণা থেকে জানা যায় যে, শান্ত পরিবেশে অধিকাংশ ইয়ারফোনের শব্দ প্রায় একই রকম । তবে বাইরে পরিবেশ অর্থাত্ কোলাহলপূর্ণ হলে ইয়ারফোনের শব্দের ফলাফল উচ্চ ও সর্বনিম্ন স্বরে হতে থাকবে । যার ফলে শ্রোতার শরীর চর্চা করার সময় কানের রক্তনালীতে রক্ত চলাচল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে । যা খুবই ক্ষতিকর । সবসময় এমপিথ্রি বা মোবাইল ফোনে সংগীত না শোনাই ভালো ।
যদি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সংগীত শুনতে চান, তাহলে আপনাদের এমপিথ্রি বা মোবাইল ফোনের ভল্যুম ৪০ থেকে ৫০ পরিমাপক মানের নীচে থাকা ভালো । কানের জন্য সর্বোচ্চ শব্দের তীব্রতার পরিমাপক মান হচ্ছে ৬০। যদি দীর্ঘকাল ধরে ইয়ারফোনের মাধ্যমে ৬০ পরিমাপক মানের চেয়ে উচ্চ স্বরে সংগীত শোনেন, তাহলে সহজেই কানের শ্রবণশক্তির ব্যাপক ক্ষতি হবে ।
ইয়ারফোন দিয়ে সংগীত শোনার সময়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত । যদিও ভল্যুম অনেক বেশি নয়, তারপরও দীর্ঘকাল ধরে ইয়ারফোন ব্যবহার করা বিশেষ করে ঘুমের সময় ইয়ারফোন ব্যবহার করা একেবারেই ঠিক নয় । রক সংগীত শোনার ১ ঘন্টা পর কানকে খানিকটা বিশ্রাম দেয়া উচিত । একটি সিডি শোনার পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট বিশ্রাম নেয়া উচিত । হালকা সংগীত বা আধুনিক গান শোনার ১০০ মিনিট পর কানকে অবশ্যই কিছুক্ষণের জন্য একবার বিশ্রাম দেয়া উচিত ।
এছাড়া, মোবাইল ফোন দিয়ে সংগীত শোনা বা কথাবার্তা যত কম বলা যায় তত ভালো । বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, প্রতিবার মোবাইল ফোনে কথাবার্তার সময় ১০ মিনিটের চেয়ে কম হলে ভালো। তাতে লোকজনের কানের শ্রবণশক্তির ওপর কোনো প্রকার চাপ পড়বে না । তবে ১০ মিনিটের বেশি কথা বলা শ্রবণশক্তির ক্ষতি করবে । এবং মোবাইল ফোনে ফোন আসার সময় বিরাট পরিমাণ চৌম্বকীয় তারত্ সৃষ্টি করে, তা মানুষের কানের জন্য অনেক ক্ষতিকর । এ জন্য দীর্ঘদিন মোবাইল ফোন নিয়ে কথাবার্তার সময় ইয়ারফোন ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজনীয়।
যদি আপনাদের থাকার পরিবেশে অনেক কোলাহলের শব্দ থাকে তাহলে আপনারা কান সংরক্ষণের জন্য স্পঞ্জইয়ারফোনব্যবহার করতে পারেন । এমপিথ্রিতে সংগীত শোনার সময় ইনসার্ট ইয়ারফোন ব্যবহার না করা উত্তম, মাথায় ওপর দিয়ে জড়িয়ে থাকা ইয়ারফোন কানের শ্রবণশক্তি সংরক্ষণের জন্য সহায়ক ।
উল্লেখ্য যে, যদি আপনাদের মাথা ব্যথা, কানে ব্যথা, শান্ত পরিবেশেও কানে নানা ধরনের শব্দ শুনতে পান,তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর পরীক্ষা করুন । নইলে দীর্ঘকাল এ অবস্থা চললে শ্রবণশক্তির পুনরুদ্ধার করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ।
|