আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানে আপনাদেরকে রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থার পেইচিং শাখার প্রধান গেনাদি ক্রিভোশেভের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো ।
ক্রিভোশেভ চীনা ভাষায় সবাইকে নিজের পরিচয় নিজেই করিয়ে দিচ্ছেন । কারো সঙ্গে প্রথমবার দেখা হলে তিনি এভাবে নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন । তিনি যদিও রুশ মানুষ , তবে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে পেইচিংয়ে আছেন । তিনি অধিকাংশ চীনাদের চেয়েও চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেস ও জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন সম্পর্কে ভালো জানেন ।
রাশিয়ার ইন্টারফ্যাক্স বার্তা সংস্থা গত শতাব্দীর ৯০ দশকের শুরুতেই প্রতিষ্ঠিত হয় । বর্তমানে তা হল রাশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক বার্তা সংস্থা । এ বার্তা সংস্থার পেইচিং শাখার প্রধান হিসেবে ক্রিভোশেভ পরিচালনার কাজ ছাড়াও প্রয়োজন হলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যান । চীনের ১১তম জাতীয় গণ কংগ্রেস ও রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ১১তম জাতীয় কমিটির দু'টি অধিবেশন শুরু হওয়ার পর তিনি এখন আরো ব্যস্ত । আমাদের সংবাদদাতা তার সঙ্গে সাক্ষাত্কারের সময় ঠিক করেছেন , তবে তিনি খুব ব্যস্ত বলে সাক্ষাত্কার বেশ কয়েক বার স্থগিত হয়েছে । আমাদের সংবাদদাতাকে দেখে তিনি অনেক বার দুঃখিত শব্দটি বলেছেন । তিনি বলেন :
দু'টি অধিবেশনের সময় আমি খুবই ব্যস্ত । যেমন আজ , আমি অনেক আগেই বাসা ছেড়ে দিয়ে মহাগণভবনে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছি এবং চারটি সংবাদ প্রকাশ করেছি । এর পরই আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য গিয়েছি । তারপর আমার আরো দু'তিনটি অনুষ্ঠানে যেতে হবে ।
৫৯ বছর বয়সী ক্রিভোশেভ এখন পেইচিংয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিদেশি সাংবাদিকের অন্যতম । তিনি এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মত পেইচিংয়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিযুক্ত হয়েছেন । তার এ তিন মেয়াদের সময় প্রায় ১৫ বছর । তিনি অনেক বার চীনের দু'টি অধিবেশনের সাক্ষাত্কারে অংশ নিয়েছেন । গত শতাব্দীর ৮০ দশকে ক্রিভোশেভ প্রথমবার চীনের দু'টি অধিবেশনে খবর সংগ্রহের কাজে অংশ নেন । তখন তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতার তাস বার্তা সংস্থার সাংবাদিক ছিলেন । তখন তিনি অন্য বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতেন । তিনি বলেন :
গত শতাব্দীর ৮০ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সব সাংবাদিকদের মত আমিও চীনের কূটনীতির ওপর দৃষ্টি রাখতাম । বিশেষ করে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার আগে , আমরা চীনের নেতৃবৃন্দের পরিবর্তন এবং এ পরিবর্তন দু'দেশের সম্পর্কের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সে সব বিষয়ের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখতাম ।
২১ শতাব্দী আসার পর এবং চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত অংশিদার সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা এবং গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'দেশের নেতারা বার বার বলেছেন যে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো সময়পর্বে রয়েছে । দু'দেশের দ্বিপক্ষীয় আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরো জোরদার করতে হবে । ক্রিভোশেভ বলেন , এখন অনেক রাশিয়ান পাশ্চাত্য দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে পছন্দ করেন । চীনের সঙ্গে কম বাণিজ্যিক বিনিময় করার প্রধান কারণ হল চীন সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি কম । ক্রিভোশেভ বলেন , চীনে রাশিয়ার দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করা সাংবাদিক খুব কম , তাই রুশ জনগণকে একটি সত্য চীনকে জানানোর দায়িত্ব তার রয়েছে । তিনি বলেন :
আমি চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিরাট বাণিজ্যিক সুযোগ সম্পর্কে রিপোর্ট করতে খুই ইচ্ছুক । যাতে রাশিয়ার বাণিজ্য মহলকে জানাতে পারি যে , এখনকার চীন বিশ বছর আগের সে চীনের চেয়ে একদম আলাদা । চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনেক সুবিধা আছে । তবে দু'দেশের বাণিজ্য মহলের পারস্পরিক উপলব্ধি এখনো যথেষ্ট নয় । তাই আমার চীনের দুটি অধিবেশনের সাক্ষাত্কারে অংশ নেয়ার একটি প্রধান কারণ হল রাশিয়ার বাণিজ্য মহলকে চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত করা ।
যদিও এখন চীনের দুটি অধিবেশন শেষ হয়েছে এবং তিনি অনেক বার এর সংবাদ সংগ্রহের কাজে অংশ নিয়েছেন , তবে ক্রিভোশেভ এবারের সাক্ষাত্কারে অনেক নতুন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন , বিশেষ করে চীনের দু'টি অধিবেশন আরো স্বচ্ছল এবং উন্মুক্ত হয়েছে । এতে ক্রিভোশেভের সাক্ষাত্কার আরো সহজ এবং সুষ্ঠু হয়েছে । তিনি বলেন , তরুণকালে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধির সাক্ষাত্কার নেয়া ততটা সহজ ছিল না । কারণ তখন চীনারা বিদেশিদের সাক্ষাত্কার দিতে চায়তেন না । তবে এখন এ অবস্থার বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । তিনি বলেন :
দু'টি অধিবেশন চলাকালে আমি থিয়েন আন মেন মহাচত্তরে দাঁড়াই । প্রতিনিধিদের গাড়ি পৌঁছার পর আমি সোজা প্রতিনিধিদের সামনে এসে তাদেরকে যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি । কেউ আমাকে সাক্ষাত্কার দিতে অস্বীকার করেন না , এমন কি কেউ আমার সাক্ষাত্কারে হস্তক্ষেপও করেন না । একদম স্বাধীন এবং অবাধ বিনিময় । তা ছাড়া , চীনের দু'টি অধিবেশন চলাকালে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন , পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় , অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনসহ বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় । বিদেশি সাংবাদিকরা এসব সম্মেলনে যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন । এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন । এসব পরিবর্তন চীনের দু'টি অধিবেশনের অবাধ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের দিকটাই প্রকাশ করেছে ।
|