১৬ মার্চ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আফগান সীমান্তসংলগ্ন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের আদিবাসী অঞ্চলে এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্ততপক্ষে ২০জন নিহত ও ৫জন আহত হয়েছে। এ বছরে এটি পাকিস্তানের ঐ অঞ্চলের ওপরে এ ধরণের তৃতীয় হামলা।
এদিন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের প্রধান নগর ওয়ানার কাছাকাছি একটি গ্রামের ওপর কমপক্ষে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে একটি ঘর বিধ্বস্ত, ২০জন নিহত ও ৫জন আহত হয়েছে। পাক গণ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিধ্বস্ত ঘরটি স্থানীয় গোত্র প্রধান নুরুল্লাহ ওয়াজিরের বাসভবন। তখন ঐ বাড়িতে একটি সমাবেশ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো চালকবিহীন বিমান থেকে ছোঁড়া হয়েছে। পাক বাহিনীর মুখপাত্র আতহার আব্বাসও এবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সত্যতা সম্পর্কে প্রমাণ তুলে ধরেছেন।
এ বছরের শুরু থেকে আফগানিস্তানসংলগ্ন কাছাকাছি পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলিয় আদিবাসী অঞ্চল তিনবার এ ধরণের হামলার শিকার হয়েছে। গত জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি হয়। এতে সশস্ত্র সংস্থার একজন নেতাসহ ১২জন নিহত হয়। ১২ মার্চ সেখানে দ্বিতীয় হামলাটি হয়। এতে ২টি মহিলা ও ২জন শিশু নিহত হয়। এরপর আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী পাকিস্তানে লক্ষ্যের ওপর নির্ভূলভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা স্বীকার করে।
এবারের হামলা সম্পর্কে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, সম্প্রতি আফগানিস্তানে মোতায়েন যৌথ আন্তর্জাতিক বাহিনী দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এই হামলার ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানেন না। তিনি মনে করেন, ঐ অভিযানের সঙ্গে এই হামলার কোনো সম্পর্ক নেই। পাক স্থল বাহিনীর মুখপাত্র মোহম্মদ তারিখ জিলানী বলেন, পাক বাহিনী কোনো সামরিক অভিযান চালায় নি। সংশ্লিষ্ট পক্ষ এবারের হামলার তদন্ত করছে।
এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার না করলেও গণ মাধ্যমগুলো মনে করে, এবারের হামলা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সশস্ত্র শক্তির ওপর আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীরআঘাত হানার অংশ। আফগানিস্তানে যৌথ বাহিনী সন্দেহ করে যে, পাকিস্তানের আফগান সীমান্তসংলগ্ন এলাকা হল আল-কায়েদা ও তালেবান জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য। এর আগে যৌথ বাহিনী বহুবার আফগানিস্তান থেকে সশস্ত্র ব্যক্তিদের অবস্থানের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সামর্থ্য কেবলমাত্র আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীরই আছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বারবার এ ধরণের হামলার ঘটনা সম্পর্কে পাক সরকারের অবস্বান খুব স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন অভিযানের মিত্রদেশ হওয়া সত্বেও পাকিস্তান বরাবরই আফগানিস্তানে যৌথ বাহিনীর একতরফা অভিযানের বিরোধিতা করে এসেছে। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী শক্তির পাকিস্তানে সন্ত্রাসী শক্তির ওপর আঘাত হানার বিরোধিতা করে আসছে। এ সমস্যায় পাকিস্তান বহুবার নিজের কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ জোর দিয়ে বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পাকিস্তানের আদিবাসী এলাকায় সশস্ত্র শক্তির ওপর আঘাত হানার অনুমতি দেবেন না। কারণ তা হবে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লংঘনের শামিল। ১২ মার্চ আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলা ঘটনায় সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। পাক বাহিনীর মুখপাত্র আতহার আব্বাস এর তীব্র নিন্দা করেছেন। পাক স্থল বাহিনীর মুখপাত্র জিলানি ১৫ মার্চ বলেন, পাকিস্তান এ সমস্যা নিয়ে পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের বাহিনী ও কূটনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিশনে আলোচনা করবে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, পাকিস্তান জনগণকে শান্ত রাখার জন্য লোক দেখানো কঠোর অবস্থান বজায় রাখে। আসলে তারা এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী তত্পরতা চালাবে না। সন্ত্রাস দমন সমস্যায় পাক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বড় ধরণের চাপের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তান নতুন সরকার গঠন ও পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ঘটনার অবনতি ও জনগণের যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অনুভূতিকে তীব্রতর হোক তা চায় না।
ছাই ইউয়ে
|