v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-19 16:16:17    
তুন হুয়া গুহা প্রদশর্নী পেইচিংয়ে প্রদর্শীত

cri
    কানসু প্রদেশের তুনহুয়ান গুহা শিল্প চীনের বৌদ্ধ ধর্মশিল্পের রত্ন গুদাম । ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কমর্সূচী হিসেবে চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীতে ইতিহাসের বৃহত্তম তুনহুয়ান গুহা শিল্প প্রদশর্নী হাজার হাজার দশর্কদের দৃষ্টি আকষর্ণ করেছে । প্রতিদিন হাজার হাজার দশর্ক এ প্রদশর্নী দেখতে আসেন এবং প্রদশর্নী কক্ষে প্রবেশের জন্য ধৈর্যসহকারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন ।

    গত বছরের শেষ দিক থেকে চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীর গেটের সামনের সাজসজ্জা পথযাত্রীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । গ্যালারীর প্রধান ভবনকে হাজার বছর আগেকার পাথরের দেওয়াল ও গুহার মতো সাজানো হয় । গেটের সামনে খাড়া করা একটি প্রাচীন তোরণের উপর লেখা রয়েছে মো কাও খু তিনটি বড় অক্ষর । এ তিনটি অক্ষর দেখে মানুষের মনে উত্তর-পশ্চিম চীনের কান সু প্রদেশের তুনহুয়ানের –মো কাও গুহার কথা মনে পড়ে । তাই এ প্রদশর্নী শুরুর প্রথম দিন থেকেই দশর্কদের ভীড় জমে । জানা গেছে , প্রদশর্নীটি উদ্বোধনের প্রথম দিন দশর্কের সংখ্যা ছিল সাত হাজার। যেদিন দশর্কের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি , সেদিন দশর্কের সংখ্যা দাড়িঁয়েছিল ২০ হাজার । এটা জাতীয় চারুকলা গ্যালারির সর্বোচ্চ রেকর্ড ।

    তুন হুয়ান প্রাচীন চীন এবং মধ্য এশিয়া , পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বাণিজ্যিক পথ ' সিল্ক রোডের ' গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত । খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে বৌদ্ধধর্মের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীরা তুনহুয়ান অঞ্চলের পাহাড়ের খাদে গুহা খনন করতে শুরু করে এবং গুহার দেওয়ালে চিত্র আঁকতে শুরু করে । এখন সেখানে মোট ৮ শ'টি গুহায় ৫০ হাজার মিটার লম্বা দেওয়াল চিত্র এখনো রয়েছে । এ সব গুহার মধ্যে তুন হুয়ানের মো কাও গুহা সবচেয়ে বিখ্যাত । মো কাও গুহার আরেক নাম ' ছিয়েন ফো তোং ' । এ গুহায় গত এক হাজার বছরের ভাষ্কর্য ও দেওয়ালচিত্র ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে । মো কাও গুহায় সংরক্ষিত শিল্পকর্মগুলোতে চীনের ও বিদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রতিফলিত হয়েছে । ১৯৮৭ সালে মো কাও গুহাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

    তুন হুয়ানকে চীনের চিত্রশিল্পীদের তীর্থস্থান বলা যায়। চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারি মো কাও গুহার ঐতিহ্যিক স্থাপত্য রীতি ও আধুনিক স্থাপত্য রীতির সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । গ্যালারীর বতর্মান প্রদশর্নীতে তুন হুয়ানের দশটি গুহা , বিশটি ভাষ্কর্য ও ১২০টি দেওয়াল চিত্রের প্রতিলিপি প্রদর্শন করা হয়েছে । এ গুলো হল চতুর্থ শতাব্দী থেকে চতুদর্শ শতাব্দী সময়ের সবচেয়ে মূল্যবান শিল্পকর্ম। তুন হুয়ান গবেষণাগারের পরিচালক ফান চিন সি বলেন এর আগে আমরা কখনও তুনহুয়ানের দশটি গুহা ও শতাধিক দেওয়ালচিত্র একসঙ্গে দেখানোর ব্যবস্থা করি নি । এ সব গুহা ও দেওয়াল চিত্র বিভিন্ন সময়কালেরপ্রতিনিধিত্বকারী সবচেয়ে উত্কৃষ্ট শিল্পকর্ম । আমরা এবার একটি সম্পূর্ণ তুনহুয়ান গুহা দশর্কদের সামনে দেখানোর চেষ্টা করেছি । তুন হুয়ান হুহা শিল্প স্থানান্তর করা যায় না , কাজেই গুহার প্রতিলিপি দেখানো একমাত্র ভালো উপায় । এতে যারা তুন হুয়ানে যেতে পারেন না , তারাও তুন হুয়ান গুহাশিল্প উপভোগের সুযোগ পান ।

    চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারি এ প্রদশর্নী সাজানোর জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করে নি । গ্যালারির কর্মীরা চার হাজার বর্গমিটার বিস্তৃত প্রদর্শনী কক্ষকে তুন হুয়ান গুহার মতো সাজিয়েছেন । দশর্করা প্রদশর্নী কক্ষে প্রবেশ করেই অনুভব করবেন যেন রহস্যময় প্রাচীন গুহায় প্রবেশ করেছেন । প্রদশর্নী কক্ষের মাটিতে তুন হুয়ানের পদ্ধফুল ডিজাইনের ইট , মাথার উপর ও চার পাশে তুন হুয়ানের মত দেওয়াল চিত্র । প্রদশর্নী কক্ষের প্রাচীন দেওয়াল চিত্র ও নানা ভংগীর বৌদ্ধমূর্তি ও প্রতিকৃতি দেখে দশর্করা মুগ্ধ হন । ৭৫ বছর বয়সী দশর্ক উ চিন মিন বলেন , আমি তুন হুয়ান যাই নি । তবে যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল । কান সু প্রদেশ অনেক দূর , আমার মত বয়োস্কদের পক্ষে যাওয়া মুস্কিল । এ প্রদশর্নী আমার দীর্ঘ দিনের আকাংখা পূরণ করেছে । আমি প্রদশর্নী কক্ষে প্রবেশ করেই মনে করি গুহার মধ্যে ঢুকেছি । এতো বেশি শিল্পকর্ম আমি একবারে শেষ করতে পারি না, আমি আরেকবার আসব । প্রতিটি গুহা , প্রতিটি দেওয়াল চিত্র ও বৌদ্ধমূর্তি আমি ধীরে ধীরে উপভোগ করবো ।

    দশর্ক মা ইয়ে উয়ে বলেন , এ প্রদশর্নী দেখার পর আমার তুন হুয়ান যাওয়ার ইচ্ছা আরো প্রবল হয়েছে । তিনি বলেন , আমি সকাল বেলায় এসেছি । এতো বড় একটি প্রদশর্নী দেখতে পুরো একদিন সময় লাগবে। তুন হুয়ান গুহার এ সব প্রতিলিপি দেখে আমি মনে করি আমাকে একবার তুন হুয়ান যেতেই হবে । সেখানে নিজের চোখে গুহা , দেওয়ালচিত্র ও বৌদ্ধমূর্তি দেখতে পেলে আরো মুগ্ধ হবো ।

    ওয়াং ইয়ু বলনে , গুহায় বৌদ্ধমূর্তিগুলো সত্যিই সুন্দর । এ ধরনের সৌন্দর্য আমি ভাষায় স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে পারছি না । দেওয়াল চিত্রের প্রতিলিপি তৈরীর জন্য চীনের অনেক নামকরা চিত্রশিল্পী তুন হুয়ানে গিয়েছেন । তারা চমত্কারভাবে বৌদ্ধমূতি ও প্রতিকৃতির সৌন্দর্য অনুকরণ করেছেন ।

    তুন হুয়ান গবেষণাগারের পরিচালক ফান চিন সি বলেন , দীর্ঘদিনের বাতাস , বৃষ্টি ও বালু ঝড়ের প্রভাবে তুন হুয়ানের দেওয়াল চিত্রগুলোর অনেক ক্ষতি হয়েছে । ১৯৪৩ সাল থেকে চীনের অনেক শিল্পী শহরের আরামদায়ক জীবন ছেড়ে দিয়ে নিজর্ন গোবি মরুভূমির তুন হুয়ানে গিয়ে গুহা সংরক্ষণের কাজ করেন । তাদের অন্যতম কাজ হল গবেষণা ও প্রদশর্নীর জন্য গুহাগুলোর প্রতিলিপি তৈরী করা । একটি গুহার প্রতিলিপি তৈরী করতে চার বছর সময় লাগে । চীনের কয়েক প্রজন্মের চিত্রশিল্পীরা ৬৫ বছর নিরলস চেষ্টা চালিয়ে বারোটি গুহার প্রতিলিপি তৈরীর কাজ সম্পন্ন করেছেন । তিনি আরো বলেন , তুন হুয়ানে চিত্রশিল্পীদের জীবন অত্যন্ত কষ্টকর । তারা বারোটি গুহার প্রতিলিপি এবং দু' হাজার ছবি এঁকেছেন । শিল্পীদের হৃদয় ও রক্ত দিয়ে তৈরী এ সব শিল্পকর্ম চীনের অমূল্য সম্পদ।

    জানা গেছে , তুন হুয়ানের মো কাও গুহা সংরক্ষণের জন্য চীন সরকার সম্প্রতি নতুন দফা সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করবে । এ খাতে সরকার ২৬০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । এ প্রকল্পটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রকল্প। আশা করি , চীনের চিত্রশিল্পীর তীর্থস্থান তুন হুয়ান চিরদিন স্থায়ী থাকবে ।