v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-14 17:27:29    
৯৬ বছর বয়সী অলিম্পিক গেমসের স্বেচ্ছাসেবক

cri
    ২০০৮ সালের পেইচিং অলিম্পিক গেমস দিন দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গেসঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর লোক স্বেচ্ছাসেবক দলে যোগ দিয়ে নিজদের বাস্তব কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসের জন্য সেবা করছেন । পেইচিংয়ের ৯৬ বছর বয়সী নাগরিক লি সুফেন তাদের মধ্যে একজন । তিনি নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পদ্ধতি-- কাগজ কাটা দিয়ে অলিম্পিক গেমসের প্রতি নিজের ভালবাসা ও সমর্থন ব্যক্ত করেন ।

    ৯০ বছর বয়সের সময় বুড়িমা লি সুফেন এক আছাড় খেয়েছেন । বাড়িতে বিশ্রাম নেয়াকালে সময় কাটানোর জন্য তিনি কাগজ কাটার কাজ শুরু করেন এবং এতে মোহিত হন । প্রথমদিকে তিনি শুধু কিছু অতি সাধারণের ফুল, ঘাস বা মানুষের আকার কাটতেন । কাগজ কাটার মানের দিন দিন উন্নতির সাথেসাথে তিনি সাধারণ ফুল,  ঘাস বা মানুষের আকার কাটতে আর সন্তুষ্ট নন । ২৯তম অলিম্পিক গেমসের স্বাগতিক রাষ্ট্র হওয়ার পর বুড়ি লি সুফেন ভাবেন , বিদেশীরা নিশ্চয়ই চীনের কাগজ কাটা পছন্দ করবেন । আমি নানা ধরণের কাগজ কাটা উপহার হিসেবে দূর থেকে আসা বিদেশী বন্ধুদের দিতে পারি ।

    বুড়ি লি সুফেন নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন । তিনি অলিম্পিকের প্রতিমূর্তির সঙ্গে চীনের ঐতিহ্যবাহী কাগজ কাটা সমন্বয় করে প্রথম সেটের ২০টি কাগজ কাটার নকশা করেছেন । তার পর তিনি নকশা অনুযায়ী ২০ ধরণের কাগজ কাটা বানালেন এবং এগুলোকে পুস্তকে বাঁধাই করলেন । বুড়ি লি সুফেনের প্রথম উপহার বানানো হল ।

    নিজের উপহার দেখে বুড়িমা লি মনে করেন , আমার তৈরী এ ধরণের উপহার অলিম্পিক গেমসের প্রতিনিধি দলকে দিতে পারলে কত ভাল হত । তখন থেকেই বুড়িমা লি তাঁর অলিম্পিক গেমসের স্বেচ্ছাসেবকেরকার্যক্রম শুরু করেন । তিনি কী কী বিষয় তাঁর কাগজ কাটার মর্মবস্তু হিসেবে গ্রহণ করেন ? প্রথমে তিনি চীনের কানফুসিয়াস, ছু ইউয়ান , লি পাই সহ চীনের প্রাচীনকালের জ্ঞানী লোকদের প্রতিমূর্তি তাঁর মডেল হিসেবে কাগজ কাটার কাজ করেছেন । কিন্তু অলিম্পিক গেমসের দর্শনের প্রতিমূর্তির প্রকাশের সঙ্গেসঙ্গে বুড়িমা লি সুফেনের কাগজকাটার বিষয়েরও পরিবর্তন হয় । যেমন ফুওয়া আছে তেমনি আছে সিলমোহর ও মশাল । তিনি বলেন , তিনি কাগজকাটার মাধ্যমে বিশ্বকে চীনের ইতিহাস , সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অবহিত করতে চান । নিজের কাগজকাটার মর্মবস্তুর বেড়ে যাওয়াকে দেখে বুড়িমা লি মনে করেন , নিজের অলিম্পিকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য শুধু কাগজকাটার ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয় । তাঁকে আরও অনেক বাস্তব ও কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে ।

    ২০০১ সাল থেকে লি নানি ইংরেজী শিখতে শুরু করেন । সুযোগ পেলেই তিনি মন দিয়ে ইংরেজীর কথাবার্তা অনুশীলন করতে থাকেন । আজকাল পর্যন্ত তাঁর এই অভ্যাস বজায় রয়েছে । লি নানির পরিকল্পনা অনুযায়ী মুখোমুখী বিদেশী বন্ধুদের কাগজকাটা উপহার দেওয়ার সুযোগ থাকলে তিনি ইংরেজী ভাষায় সরাসরি বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন ।

    প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৫টায় লি নানি উঠেন । তারপর তিনি নিজেই ইংরেজী শিখতে শুরু করেন । এখন তিনি অল্প অল্প ইংরেজী দিয়ে অন্য লোকের সঙ্গে সহজ কথাবার্তা বলতে পারেন ।

    কিন্তু শুরুতে সবাই বিশ্বাস করেন না যে , লি নানির অলিম্পিকের উপহার প্রদান করার ধারণা বাস্তবায়িত হতে পারবে । তিনি স্থির করলেন । কেউই তাঁর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারবে না । তিনি একটি হিসাব করলেন । তিনি মাসে পাঁচটি কাগজকাটার বই কাটতে পারেন । প্রতি বইতে ২০টি কাগজকাটা আছে । এক বছরে তিনি ৬০টি কাগজকাটার বই বানাতে পারেন । ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ২০০টি বই সম্পন্ন করতে পারবেন ।

    অন্যান্যদের সন্দেহ বিন্দুমাত্র এই নব্বই বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবকের কাগজকাটা তৈরীর আগ্রহের ওপর প্রভাব বিস্তার করেনি । প্রতিদিন সকাল ঠিক আটটায় তিনি দিনের কাজ শুরু করেন । একটা ছোট কাঁচি, পাতলা পাতলা ও নরম লাল রংয়ের কাগজ , মাপদন্ড ও এক ছোট মদের কাপ লি নানির কাগজকাটা তৈরীর যন্ত্রপাতি । কাজ শুরু করার পর লি নানি সময়কে খুব মূল্যবান করেন । কাজের মাঝখানে তিনি অল্প বিশ্রাম নিতে পারেন যাতে শরিরটা ভাল করে রাখা যায় । দুপুরবেলায় তিনি এক ঘন্টার মধ্যে রান্না করেন, লাঞ্চ খান এবং টেলিভিশন দেখেন । দিন পর দিন , বছর পর বছর লি নানি কাজ করে গেছেন । এক দিনও থামেননি । তিনি বলেন ,আমি কাগজকাটা থেকে আনন্দ পাই এবং কখনো ক্লান্ত অনুভব করিনি ।

    লি নানি কাগজকাটার আনন্দের মাধ্যমে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিনের জন্যঅপেক্ষা করছেন । ২০০৬ সাল নাগাদ তাঁর কাটা কাগজকাটার সংখ্যা ২৪০টিতে দাঁড়িয়েছে । এই পরিমাণ তাঁর পরিকল্পিত ২০০টি অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে । তাঁর কাগজকাটার পরিমাণ সুষ্ঠুভাবে চলছে । কিন্তু তিনি আবার একটা নতুন সমস্যার সম্মুখীন । সমস্যা হল , কী ভাবে অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পেইচিংয়ে আসা বিদেশী প্রতিনিধিদের হাতে কাগজকাটাগুলো পৌঁছানো যায় । ঠিক এ সময়ে আবাসিক এলাকার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানতে পেরেছেন । তাঁরা ব্যক্ত করেন, তারা বুড়ি লির ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য পদ্ধতি খুঁজে বের করবেন । লি নানির সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হয়েছে । গত বছরের ডিসেম্বর মাসের এক দিন বুড়ি লি খবর পেলেন যে , চীনা কমিউনিষ্ট পার্টির পেইচিং পৌর কমিটির সম্পাদক লিউ ছি তাঁকে দেখতে তাঁর বাড়ি আসবেন । ৯৫ বছর বয়সী লি নানিকে দেখে লিউ ছি খুব মুগ্ধ হলেন । তিনি বলেন ,অবশ্যই লি নানির কাগজকাটাগুলোকে রাষ্ট্রের এক শ্রেণীর উপহার হিসেবে অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে পেইচিং আসা বিভিন্ন বিদেশের বিশিষ্ট অতিথিদের প্রদান করা হবে ।