উত্তর-পশ্চিম চীনের কান সু প্রদেশের লোং সি জেলার মা থৌ ছুয়ান গ্রামটি আগে একটি বিখ্যাত দরিদ্র গ্রাম ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামাঞ্চলের সাহায্য তহবিল উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে এই গ্রামের অধিবাসীদের জীবন দিন দিন ভালো হতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সাহায্য তহবিলের অর্থ কী? এবং মা থৌ ছুয়ান গ্রামবাসীরা কীভাবে এ ধরণের পুঁজির ওপর নির্ভর করে ভালো জীবন কাটাচ্ছে? আজকের গ্রামের কথা অনুষ্ঠানে আমি সবাইকে নিয়ে মা থৌ ছুয়ান গ্রামে যাই।
২০০৬ সালে চীন সরকার উন্নয়নের দিক থেকে পশ্চাত্পদ কান সু এবং সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলসহ ১৪টি প্রদেশ ও অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে সাহায্য তহবিলের কাজ চালু করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে এ সব প্রদেশ ও অঞ্চলের কিছু কিছু দরিদ্র গ্রামে "সাহায্য তহবিল"স্থাপন করা হয়। পাশাপাশি এ তহবিলে যোগদানের জন্য গ্রামবাসীরা যার যার অর্থ দিয়ে এ তহবিলের ব্যাপকতা বাড়াতে থাকেন এবং যার যার উত্পাদন উন্নয়নের জন্য ধার নিয়ে এ তহবিল ব্যবহার করতে পারেন। মা থৌ ছুয়ান গ্রাম হচ্ছে একটি পরীক্ষামূলক গ্রাম।
মা থৌ ছুয়ান গ্রামে প্রবেশের পর আমরা দেখেছি রাস্তার পাশে লাগানো রয়েছে "গ্রামাঞ্চলের সাহায্য তহবিল হচ্ছে গরীবদের ব্যাংক" এর প্রতীকবোর্ড। গ্রামবাসীদের বাড়িঘর খুব পরিপাটি এবং সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো রয়েছে। বিশাল পিচ ঢালা রাস্তায় মানুষ হাঁটাহাঁটি করছে। লোং সি জেলার দারিদ্র্য বিমোচন অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাং চিং আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, ২০০৬ সালের প্রথম দিকে লোং সি জেলা মা থৌ ছুয়ানসহ পাঁচটি দরিদ্র গ্রামে সাহায্য তহবিল গড়ে তুলেছে। সরকার দরিদ্র বিমোচনের পুঁজি হিসেবে প্রতিটি গ্রামের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার রেনমিনপি বরাদ্দ করেছে এবং যার যার অর্থ দিয়ে এই তহবিলে যোগদানের লক্ষ্যে গ্রামবাসীদেরকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এই তহবিলে যোগদানকারী কৃষকরা ব্যাংকের সুদের চেয়ে নিম্ন হারে ঋন নেয়ার মাধ্যমে এ তহবিল ব্যবহার করতে পারেন। চাং চিং বলেন, সাহায্য তহবিল স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র কৃষক পরিবারের উন্নয়নে অর্থ ঘাঁটতি সমস্যার সমাধান করা এবং দরিদ্র গ্রাম ও দরিদ্র পরিবারের নিজেদের উন্নয়ন ও স্থায়ী উন্নয়নের সামর্থ্যের উন্নতি করা। তিনি আরো বলেন,
এই তহবিল স্থাপনের প্রক্রিয়ায় আমরা প্রধানত গ্রামবাসীদের সত্যনিষ্ঠা ও আস্থাশীলতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার চেতনাকে সর্বাগ্রে বিবেচনা করি।
সরকারের এক লাখ ৫০ হাজার বরাদ্দের ভিত্তিতে মা থৌ ছুয়ান গ্রামের গ্রামবাসীরা যথাক্রমে যার যার অর্থ দিয়ে এ তহবিলে যোগ দিয়েছেন। তাদের দেয়া অর্থের পরিমান ৪০০ থেকে দু'হাজার রেনমিনপি পর্যন্ত। নিয়ম অনুযায়ী তহবিলে যোগদানকারী কৃষকরা চাষ ও পশু পালন উন্নয়নের জন্য এ তহবিল থেকে তিন হাজার রেনমিনপি পর্যন্ত ধার নিতে পারেন। তাদের ধার নেয়ার সময়সীমা হলো এক বছর। ২০০৭ সালের প্রথম দিকে মা থৌ ছুয়ান গ্রামের সাহায্য তহবিলের মোট পরিমাণ প্রায় তিন লাখে দাঁড়িয়েছে। সদস্য সংখ্যা ১২০।
মা থৌ ছুয়ান গ্রামে আমরা সাহায্য তহবিলের অর্থ ধার নেওয়া একজন গ্রামবাসীকে দেখেছি। ওয়াং ইয়েট ইউ নামে গ্রামবাসীর বাড়িঘরের সামনে একটি বিজ্ঞাপন বোর্ড দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে "ইয় ইউ ময়দার ও জাব প্রক্রিয়াকরণ" লেখা আছে। আমরা ময়দার কারখানায় ওয়াং ইয় ইউ এবং তাঁর স্ত্রীকে দেখেছি। ২০০৬ সালে মা থৌ ছুয়ান গ্রামে সাহায্য তহবিল সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই তিনি এতে যোগ দেন। গ্রামাঞ্চলে এ ধরণের সাহায্য তহবিল সম্পর্কে ওয়াং ইয় ইউ'র স্ত্রী চাং থাও হুয়া বলেন,
আমার মনে হয়, সাধারণ ব্যাংকের ঋণের সুদের হারের চেয়ে সাহায্য তহবিলের সুদের হার নিম্ন এবং ঋণ নেয়ার ক্রিয়াবিধিও সহজ।
কৃষকদের পক্ষে তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে দায়বদ্ধ করতে নানা ধরণের ক্রিয়াবিধি মানতে এবং কিছুটা উচ্চ সুদ দিতে হয়। সাহায্য তহবিলে এসব জটিল সমস্যা থাকে না। ওয়াং ইয় ইউ বলেন, সাহায্য তহবিল আমাদের গ্রামেই রয়েছে। এ তহবিলে যোগদানের পর ঋণ নিতে পারা যায় সহজেই। অনেক সুবিধা। ২০০৭ সালে তিনি গ্রামাঞ্চলের সাহায্য তহবিল থেকে তিন হাজার রেনমিনপি ধার নিয়ে এবং নিজের সাত হাজার রেনমিনপি দিয়ে একটি উন্নততর ময়দার প্রক্রিয়াকরণ মেশিন কিনেছেন। নতুন মেশিনের কার্যকারিতার মাধ্যমে তাঁর আয়ও বেড়েছে। তিনি বলেন,
এখন আমাদের ভাল খাবার এবং ছেলেমেয়ের জন্য নতুন কাপড় কেনা খুব সাধারণ ব্যাপার।
ওয়াং ইয় ইউ'র তিনটি ছেলেমেয়ে জেলার স্কুলে লেখাপড়া করছেন। তাদের ব্যয় অনেক বেশি। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ময়দার কারখানা এবং ওষুধী গাছ চাষের মাধ্যমে তাঁর পরিবারে মোট ২০ হাজার রেনমিনপি আয় হয়েছে। আগের চেয়ে এখন পরিবারের জীবনযাত্রা অনেক ভালো হয়েছে।
মা থৌ ছুয়ান গ্রামের গ্রামবাসী ছাড়াও, লোং সি জেলার অন্য চারটি গ্রামের গ্রামবাসীরাও সক্রিয়ভাবে যার যার অর্থ দিয়ে এ ধরণের তহবিলে যোগ দেন। তহবিলের ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে। জানা গেছে, ২০০৭ সালে লোং সি জেলায় এ ধরণের সাহায্য তহবিল চালু হওয়া পাঁচটি গ্রামের পাঁচ'শরও বেশি দরিদ্র কৃষক এ তহবিলের মাধ্যমে ১৩ লাখ রেনমিনপি ধার নিয়ে চাষ, প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিবহণ ক্ষেত্রের উন্নয়ন করে আসছেন। তাদের জীবনযাত্রা ধাপে ধাপে উন্নত হচ্ছে। (লিলি)
|