v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-12 11:41:03    
একজন বেলজিয়ান লোকের কাহিনী

cri

    চীনের কুয়াং সি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণাংশের ছুং চোও শহর ম্যাংগানিজের নগর বলে পরিচিত । এখানকার ম্যাংগানিজের মজুদ প্রায় ১৫ কোটি টন । এ দিক থেকে চীনে তার স্থান প্রথম । কয়েক বছর আগে ফ্রান্সের এরামেট গোষ্ঠী এখানে একটি ইলেক্ট্রোলাইজ ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে । বেলজিয়ামের জন ক্যারেটি এ কারখানার ম্যানেজার হিসেবে কারখানাটি নির্মাণের দায়িত্ব নেন । ক্যারেটির চোখে চীন কি রকম ? তিনি কেমন করে চীনে দিন কাটাচ্ছেন ?

    ফ্রান্সের এরামেট গোষ্ঠি অলৌহ ধাতু উত্পাদন ও ঢালাইয়ের কাজে নিয়োজিত একটি খনিজ ও ঢালাই গোষ্ঠী । এ গোষ্ঠী বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চলের সংগে যোগাযোগ বজায় রেখেছে । ২০০৪ সালে এরামেট গোষ্ঠী চীনের কুয়াং সি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছুং চোও শহরে তার শাখা কারখানা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় । কারখানায় প্রধানত সোডা প্রকৃতির ব্যাটারী উত্পাদন করা হয় । কারখানাটি নির্মাণের জন্যে ৪৩ বছর বয়সের জন ক্যারেটিকে চীনে পাঠানো হয় । তিনি বলেন ,

    আমার গোষ্ঠী আমাকে চীনে পাঠিয়েছে । ২০০৪ সালে আমার গোষ্ঠী এখানে কারখানা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আমাকে এ কারখানার ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করে । তাই সেই বছর আমি চীনে এসেছি । ক্যারেটি বলেন , যখন তিনি সবেমাত্র চীনে আসেন , তখন তিনি চীনের জীবনযাপনে অনভ্যস্ত ছিলেন । তিনি বলেন ,

    আমার সামনে প্রথম বাধা ছিল ভাষাগত সমস্যা । কেন না , আমি চীনা ভাষা জানি না । তবে কোনো অসুবিধা হয় নি । কারণ এখানে চীনা দোভাষী আছে । আসলে ইংরেজী নয় , ফরাসী হচ্ছে আমার মাতৃভাষা । অথচ এখানে আমি প্রধানত ইংরেজীর মাধ্যমে অন্যদের সংগে কথাবার্তা বলি । সুখের কথা , ইংরেজী দিয়ে আমরা পরস্পরকে বুঝতে পারি এবং কাজ চালাতে পারি । খাবারের ক্ষেত্রে বেলজিয়ামের খাবার ও চীনা খাবারের মধ্যে অনেক তারতম্য রয়েছে । বিশেষ করে এখানে চপস্টিক্স ব্যবহার করতে হয় । এটি আমার পক্ষে খুব কঠিন ছিল । দুই বছরের প্রস্তুতি নেয়ার পর ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে এ কারখানা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয় । এ কারখানায় প্রায় দু শ' শ্রমিক রয়েছে । কারখানা চালু হওয়ার পর ক্যারেটি আগের চেয়ে আরো ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন । তিনি রোজ কারখানায় ৮ থেকে ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে থাকেন । সহকর্মীদের চোখে তিনি একজন দক্ষ ও নিষ্ঠানবান ব্যক্তি । অনেকে মনে করেন যে , তিনি একজন কাজ পাগল মানুষ । তিনি বলেন , চীনের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে বলে তাকে দ্বিগুণ প্রচেষ্টায় কাজ করতে হবে । যাতে তিনি চীনের উন্নয়নের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগেতে পারেন । তিনি বলেন ,

    আমি মনে করি , কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যবস্থা না থাকলেও চীনের উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম বিশাল । চীনারা সবাই পরিশ্রম করতে পারেন । এটি চীনের একটি বিরাট প্রাধান্য । ইউরোপে নিজ নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বলতে সাধারণত ২ শতাংশের কাছাকাছি । চীন সবসময় তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি বজায় রেখেছে । চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রাণশক্তিতে ভরপুর । এখন ক্যারেটি অনেক চীনা বন্ধুকে পেয়েছেন । এটি চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্যে সহায়ক । তিনি বলেন ,

    চীনা সহকর্মীদের সংগে মেলামেশার মাধ্যমে আস্তে আস্তে আমি অনেক বন্ধু পেয়েছি । আমরা একসাথে কাজ করার পাশাপাশি নানা ধরণের তথ্যও বিনিময় করি । তবে এখনো আমাদের মধ্যে কিছু না কিছু সাংস্কৃতিক ব্যবধান রয়েছে । তরুণদের মধ্যে এ রকম ব্যবধান অনেক কম । চীনা বয়স্কদের সংগে আমার ব্যবধান একটু বেশি থাকে । গত তিন বছরে ক্যারেটি চীনের অনেক শহরে গিয়েছেন । যেমন চীনের রাজধানী এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পেইচিং , অর্থনৈতিক ও আর্থিক কেন্দ্র শাংহাই , পশ্চিম চীনের প্রাচীন শহর সি আন , উত্তর চীনের শিল্প নগর থাই ইউয়ান ও তা থুং এবং উপকূলীয় শহর তা লিয়ান ও ছিং তাও । তিনি প্রায় অর্ধেক চীন ভ্রমণ করেছেন । তার চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন ,

    আমার মনে হয় , নান নিং হচ্ছে একটি চমত্কার সবুজ শহর । তা লিয়ান ও ছিং তাও বেশ সুন্দর । পেইচিংয়ের সাস্কৃতিক আমেজ বেশ ভালো । তবে যদি আপনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখতে চান , তাহলে আপনি শাংহাইয়ের ফু তুং এলাকায় যাবেন । একটি বহুজাতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একজন ম্যানেজার হিসেবে পেশাগত কারণে তিনি সবসময় চীনের বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করেন । তিনি বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদক্ষেপ ও সাফল্যের ওপর নজর রাখেন । চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নে তিনি অত্যন্ত অভিভূত । তিনি বলেন , ছোটবেলা থেকেই তিনি চীনের কথা শুনে আসছেন । আগে তিনি ছবি ও নানা ধরণের বই থেকে চীনের খবর রাখেন । তিনি চীনের প্রতি খুবই আগ্রহী । সেসময় তিনি শুধু জানতেন , চীন প্রাচীন সংস্কৃতির একটি উত্পত্তিস্থল । এখানকার মানুষ বহু চিন্তেভেবে কাজ করেন । অথচ চীনে আসার পর তিনি দেখতে পান , চীনের উন্মুক্তকরণ ও আধুনিকায়নের মাত্রা তার কল্পনাকে অনেক ছাড়িয়ে গেছে । তিনি বলেন ,

    চীনকে জানতে হলে আপনাকে চীনে বসবাস করতে হবে । চীনে থেকেই আপনি চীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন । আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে , চীনের উন্নয়নের গতি অতি দ্রুত । চীনের অনেক জায়গায় অবস্থা তাই । যেমন দু বছর আগে যখন আমি ছুং চোওতে আসি , এখানকার অবস্থা এখনকার মত ছিল না । এ শহরের অনেক উন্নতি হয়েছে । বাইরের দিকে চীনের উন্মুক্তকরণ নীতির ভূয়সী প্রশংসা করে ক্যারেটি বলেন , উন্মুক্তকরণ নীতি একটি চতত্কার নীতি । এটি যেমন চীনের জন্যে , তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোর জন্যেও ভালো ব্যাপার । কেন না , এটি চীনের উন্নয়নের পক্ষে কল্যাণকর । পুঁজি বিনিয়োগ করে কারখানা প্রতিষ্ঠা করা চীনে যত সহজ , বেলজিয়ামে তত সহজ নয় । আমার ধারণায় চীনের যে কোনো শহরে আপনি পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারেন । খুব সহজ । ক্যারেটি এখনো চীনা ভাষা সাবলীলভাবে বলতে না পারলেও চীন সম্পর্কে তিনি অনেককিছু জানতে পেরেছেন । তার সহকারী মাদাম ছাই লান চুয়ান বলেন ,

    তিনি একজন বিদেশী । তবে তিনি তিন বছর ধরে চীনে বসবাস করেছেন । তাই তিনি চীনের চালচলন সম্পর্কে অনেক জেনেছেন । আমি মনে করি , তিনি চীনের সংস্কৃতির সংগে অনেকটা মিশে গেছেন ।

    কিছুদিন আগে তিনি তার আপনজনদেরও চীনে নিয়ে এসেছেন । তারা এখন শাংহাইতে থাকেন । তিনি সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কুয়াং সি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছুং চোওতে কাজ করেন । সপ্তাহান্তে তিনি বিমানে করে শাংহাইতে গিয়ে আপনজনদের সংগে মিলিত হন ।