চেঙ্গিস খানের সমাধি পরিদর্শন করার পর এখন আমরা বন্ধুদের অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থান তাচাও মন্দিরে নিয়ে যাবো । এ তাচাও মন্দির তিব্বতের লাসার তাচাও মন্দির নয়, তা অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার হোহট শহরে অবস্থিত । মঙ্গোলিয় ভাষায় তার নাম ইকেচাও, অর্থ হলো বড় মন্দির । ১৫৮০ সালে চীনের মিং রাজবংশের সময় এ মন্দির নির্মিত হয় । মন্দিরের স্থাপত্য খুব মজবুত এবং একটি রূপা দিয়ে তৈরী দুই মিটারেরও বেশি উচুঁ সাক্যমুনীর মুর্তি রয়েছে বলে মন্দিরের আরেকটি নাম রূপা মূর্তি মন্দির । মন্দিরে প্রচুর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষিত রয়েছে এবং মঙ্গোলিয় জাতির ইতিহাস ও ধর্মীয় সংস্কৃতি গবেষণার জন্য শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রও রয়েছে ।
তাচাও মন্দিরের স্থাপত্য ধারণা চীনের হান জাতির মন্দিরের মতো । এর সর্ব মোট আয়তন ৩০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি এবং শুধুমাত্র মন্দিরের আয়তন ৮ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি । মন্দিরের প্রধান হল সামনের হল, শাস্ত্র পড়ার ঘর এবং বৌদ্ধ মুর্তির হল নিয়ে গঠিত । এর স্থাপত্য বিশিষ্ট্য হান এবং তিব্বত জাতির বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে তৈরী । মন্দিরের রূপার মূর্তি, ড্রাগনের ভাষ্কর্য এবং দেয়ালের ছবি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত । তাচাও মন্দির অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার পর্যটন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান সম্পর্কে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গোলিয় বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক বু রেন বা থু বলেন, হাজার হাজার নাগরিকদের বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং চমত্কারমন্দির মেলা পরিদর্শন করা হচ্ছে রীতি । যেমন মঙ্গোলিয় নাচ গান দেখার মাধ্যমে আমি একটি শান্তি ও সম্প্রীতিময় পরিস্থিতি উপভোগ করি । মঙ্গোলিয় জাতির মধ্যে ধর্মীয় সংস্কৃতির উত্তরাধিকারে তাচাও মন্দির গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং অন্তঃর্মঙ্গোলিয়ার পর্যটন উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে ।
তাচাও মন্দিরে একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান-- চামা নাচ । লোকজন ভূতের বিরুদ্ধে এবং জীবনের সাফল্য কামনাসহ সুদিনের অপেক্ষায় এ নাচ করে । প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী ও জুন মাসে মন্দিরে চামা নাচ অনুষ্ঠিত হয় । তখন সন্ন্যাসীরা বিশেষ কাপড় পরে মাস্ক নিয়ে নানা ধরনের দেবতার আকারে পরিণত হন এবং লামা ধর্মের বিশেষ সংগীত যন্ত্রের শব্দের সাথে সাথে নাচতে থাকেন । তাচাও মন্দিরের প্রধান লামা চিন চেং বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তাচাও মন্দির সংস্কার করার পর অনেক দেশী বিদেশী পর্যটককে আকর্ষণ করেছে । পর্যটকরা চামা নাচ এবং বৌদ্ধ ধর্মের শাস্ত্র পড়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান খুব পছন্দ করেন ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তঃর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকার বিরাট পুঁজি বিনিয়োগ করে তাচাও মন্দির মেরামত করেছে এবং মন্দিরের কাছাকাছি নাগরিকদের পুরনোবাড়ি ও জীর্ণ স্থাপত্য সরিয়ে ফেলেছে । তাচাও মন্দিরের পশ্চিম দিকে মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্য বজায় রয়েছে । তাচাও মন্দিরে আসা পর্যটক ছুই চিন মনে করেন, ধর্মীয় বৈশিষ্ট হলো পর্যটকদের আসার প্রধান কারণ ।
|