লেবানন পার্লামেন্টের স্পীকার নাবিল বেরি ১০ মার্চ ঘোষণা করেছেন, পূর্ব নির্ধারিত ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২৫ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ১৬ বার স্থগিত রাখা হলো। বর্তমান অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংকট সমাধানের উপায় এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি।
লেবানন পার্লামেন্টে পাশ্চাত্যপন্থী ও সিরিয়াপন্থীর মধ্যে গুরুতর মতভেদ থাকায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর লেবাননের সাবেক প্রেসিডেন্ট এমিলি লাহুদের কার্যমেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট পদটি এ পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংকট পরপর দুটি পর্যায় অতিক্রম করেছে। সংকট প্রথম কয়েক মাস ফ্রান্স পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয় নিয়ে সিরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু নির্বাচন বারবার স্থগিত হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্য দেশগুলোও সিরিয়ার মধ্যকার অসংগতি দিন দিন প্রকাশ্য রূপলাভ করেছে। গত বছরের শেষ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমস্যায় সিরিয়া বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ বছরের ২ জানুয়ারী সিরিয়া উল্লেখ করেছে, লেবাননের কর্মকান্ডের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ হচ্ছে লেবাননের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য সৃষ্টির প্রধান কারণ।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে আরব লীগ লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংকট উত্তরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন শুরু করে। ৫ জানুয়ারী আরব লীগের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের জরুরী অধিবেশনে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে লেবাননের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমস্যায় মতৈক্যে পৌঁছা, লেবাননের সংবিধান অনুযায়ী লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীর সেনাপ্রধান মাইকেল সুলাইমানকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে জাতীয় যৌথ সরকার গঠন করা এবং নতুন নির্বাচন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আরব লীগের মহাসচিব আমর মুসাকে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরপর মুসা একাধিকবার লেবানন সফর করেছেন। তিনি লেবাননের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আরব লীগের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের কাঠামোতে মতভেদ কমানো এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিষ্পত্তির তাগিদ দেন।
পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মনে করে, তারা সবচে'বেশি ছাড় দিয়েছে। তারা বিরোধী দলের মনোনীত সশস্ত্র বাহিনীর সেনাপ্রধান সুলাইমানকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাপারে সম্মত করেছে। ফলে বিরোধী দলও সংশ্লিষ্ট ছাড় দেয়া উচিত। কিন্তু বিরোধী দল পার্লামেন্টে ভেটো প্রয়োগের লক্ষ্যে এক তৃতীয়াংশ আসন অথবা নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকার হতে চায়। মূল সমস্যার ব্যাপারে দু'পক্ষের মধ্যে মতৈক্য না হওয়ায়, মুসার মধ্যস্থতার প্রয়াস এখনো কোন স্পষ্ট সফলতা পায় নি।
লেবাননের হিজবুল্লাহ সংগঠনের উর্ধতন ইমাদ মুঘনিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে গুপ্তহামলায় নিহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমস্যায় হিজবুল্লাহ সংগঠনসহ লেবানন পালার্মেন্টে বিরোধী দলগুলোর অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে। অন্য দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিকট প্রাচ্য বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড্যাভিড ওয়েলচ-এর সম্প্রতি দেয়া পৃথক পৃথক ভাষণে লেবানন সমস্যায় সিরিয়া যথাযথ সহযোগিতা না করার নিন্দা করেছেন। এর পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরান লেবাননের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগও করেছে। কিন্তু এ দুটি দেশ তা অস্বীকার করেছে। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার লেবাননের নিকটবর্তী সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলে, এই কার্যকলাপ সিরিয়া ও ইরানকে ভয় দেখানোর জন্য না। কেবল সিরিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। কিন্তু মধ্য প্রাচ্য সম্পর্কিত জনমত হচ্ছে, আসলে যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের রাষ্ট্রীয় পরিষদের বিরোধী দলগুলো ও সিরিয়াকে চাপ দিচ্ছে।
১১তম ইসলামি দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন ১৩ ও ১৪ মার্চ সেনেগালের রাজধানী দাকারে অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট দেশ লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংকট সমাধানের জন্য অব্যাহত মধ্যস্থতা করবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|