২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর সুখী প্রকল্পের প্রতিমূর্তি প্রতিনিধি হিসেবে মডেল মা ইয়েনলি বেশ কয়েকজন শিল্পী বন্ধুর সঙ্গে সুখী প্রকল্পের থিম গান গেয়েছেন । মা ইয়েনলি বলেন, এই গান শোনার পর প্রতিটি সন্তানের মনে মা-এর কথা পড়ে এবং মা-এর মনে তার সন্তানের কথা পড়ে ।
২০০৫ সালে মা ইয়েনলি চীনের "সুখী প্রকল্পের" প্রতিমূর্তির দূত নিযুক্ত হন । প্রকল্পটি চীনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট লিউ শাওছির স্ত্রী ওয়াং কুয়াংমেইর উদ্যোগে গঠিত ।১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্পটি থেকে হাজার হাজার গরিব মা উপকৃত হয়েছেন । পশ্চিম চীনে সেই সব গরিব মাকে দেখতে যাওয়া মা ইয়েনলির বহু দিনের আশা । ২০০৭ সালের আগষ্ট মাসে মা ইয়েনলি কানসু প্রদেশের এক তিব্বতী জাতি অধ্যূষিত এলাকার গরিব মা-দের দেখতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ।
মা ইয়েনলি ও তার সফরসঙ্গীরা লুংসি জেলার একটি গ্রামের চিয়াং মানসিউ নামে এক মহিলার বাড়ির গেটে পৌঁছুলে বাড়ির ভেতর থেকে রঙবেরঙের তিব্বতী পোশাক পরা এক মহিলা হাতে হাদা নিয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন । তিনি হলেন চিয়াং মানসিউ, মা ইয়েনলি বিশেষভাবে তাকে দেখতেই এসেছেন । কাছে গিয়ে মা ইয়েনলি আশ্চর্য ও খুশির সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, চিয়াং মানসিউ নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন । এবারের পশ্চিম চীন যাত্রায় তিনি মা ইয়েনলির দেখা একমাত্র সুন্দরী মা যিনি নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন । চিয়াং মানসিউ আনন্দের সঙ্গে মা ইয়েনলিকে জানান , আর্থিক সাহায্য পাওয়ার পর তার পরিবার নিজেদের পরিশ্রমের মাধ্যমে সুখী জীবনযাপন করতে পারছে ।
২০০০ সালে পাওয়া আর্থিক সাহায্য দিয়ে চিয়াং মানসিউ ২০টি ছাগল ছানা কিনেন । তাঁর মনোযোগের সাথেই তাঁর লালনপালনে এই ২০টি ছাগলছানা বড় হয় এবং তাঁর পরিবারের জন্য ভাল আয়ের ব্যবস্থাকরে । সময়মতো ঋণ পরিশোধ করা ছাড়াও তাদের কৃষিযন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে এবং ছাগলের খোঁয়াড় তৈরী করা হয়েছে । এখন ছাগলের সংখ্যা একশ'তে দাঁড়িয়েছে ।
মা ইয়েনলি লক্ষ্য করেছেন যে, চিয়াং মানসিউর সৌন্দর্য শুধু তার সাজানো চেহারা থেকে আসেনি ,বেশির ভাগ আসে তাঁর হাসি ,মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা আনন্দ থেকে ।
চিয়াং মানসিউ অত্যন্ত সাদাসিধা ভাষার মাধ্যমে সুখী প্রকল্পের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন । তিনি গৌরবের সঙ্গে বলেছেন, আমি আমার মতো গরিব মা'দের ছাগল পালন করতে শেখাতে পারি এবং তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করতে সাহায্য করতে পারি ।
মা ইয়েনলি বলেন, অন্য দাতব্য প্রকল্পের তুলনায় সুখী প্রকল্পের পার্থক্য আছে, প্রকল্পটি শুধু গরিব মা-দের আর্থিক সাহায্য করে । আর্থিক সাহায্য পাওয়ার আগে দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে । চুক্তি অনুযায়ী প্রাপক মা'রা পরবর্তী ২-৩ বছরের মধ্যে প্রাপ্ত ২০০০ ইউয়ান ফেরত দেবেন । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধ দিতে যাদের অসুবিধা হয় সংশ্লিষ্ট পক্ষ প্রাপকদের বাস্তব অবস্থা অনুসারে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা স্থগিত রাখবে বা ঋণ মৌকুফকরবে ।
মা ইয়েনলি ও তার সফরসঙ্গীরা চার সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ বাড়িতে গিয়েছেন । বাড়িতে দাদা দাদি ও দুই বোন আছে । দুই বোনের বাবা মা রোগে মারা গেছেন । বয়সের কারণে দাদা দাদির পরিশ্রমের ক্ষমতা নেই । বড় বোন দ্বিধাহীনভাবে সংসারের ভার বহন করছে । তার সঙ্গে কথাবার্তা বলার পর মা ইয়েনলি জানলেন, সংসারের জন্য বড় বোন স্কুল চ্যুত হতে চেয়েছিল । বাবা ও মার রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করার জন্য বাড়ির এক মাত্র খচ্চর বিক্রি করা হয়েছে । তবে আরও পাঁচ হাজার ইউয়ানের ঋণ রয়ে গেছে । এ কথা শুনে মা ইয়েনলির চোখ দুটো জলে ভরে যায় । তিনি পকেট থেকে ১০০০ ইউয়ান বের করে মেয়েটিকে দেন এবং তাকে বলেন, স্কুল চ্যুত হওয়া উচিত নয় । তোমাকে ভালভাবে লেখাপড়া করতে হবে । নইলে আমরা তোমাদের আর্থিক সাহায্য দেব না । এই সময় বাইর থেকে কাঁদার আওয়াজ শোনা গেলো । সুখী প্রকল্পের একটি ছেলে কর্মী কাঁদছে ।
ছেলেটি বলে, আসা মাত্র বুড়ো দাদি রান্না ঘরে প্রবেশ করে তাঁর বানান রুটি বের করে তাদের খেতে দেন । এই সব রুটি তাঁর দীর্ঘ দিন ধরে সঞ্চয় করা ময়দা দিয়ে তৈরী হয় এবং বিশেষভাবে সুখী প্রকল্প কর্মীদের জন্য তৈরী হয় । শুধু তা নয় , বুড়ি দাদি এক দিকে উনুন জ্বালিয়ে দেন এবং অন্য দিকে এক ব্যাগ বের করলেন । ব্যাগের মধ্যে আটটি ডিম আছে । আরামে জীবনযাপনকারী লোকের পক্ষে হয়ত এই আটটি ডিম কোনো বড় ব্যাপার নয় । কিন্তু এক গরিব পরিবারের কাছে এই আটটি ডিমের কী অর্থ দাঁড়াবে,শুধু তারা নিজেরাই জানেন । বিশেষ কারণ না থাকলে কেউই তা খাবেন না । বাড়িতে বিশিষ্ট অতিথি আসলে তাদের খাওয়াবেন । আজ বাড়িতে দূর থেকে বিশিষ্ট অতিথি এসেছেন । দাদি নিজের বানান রুটি এবং আটটি ডিম দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানান । মা ইয়েনলি ও তার সফরসঙ্গীরা অত্যন্ত মুগ্ধ হলেন ।
মা ইয়েনলি গ্রামে তার বাল্যকাল কাটালেন । ছোটোবেলায় তার বাড়ি গরিব ছিল । মা তাদের চার বোনকে নিয়ে গ্রামে থাকতেন । মা তাদের দেখাশোনা করতেন এবং একা একা ক্ষেতে গম কাটতেন । বাবা একজন শিক্ষক । তাদের চার বোনের স্কুলফির জন্য বাবা খুব খাটতেন । বাবা মার অতি পরিশ্রম ও কষ্ট মা ইয়েনলি গভীরভাবে অনুভব করেছেন । তাই বড় হলে অন্য লোককে সাহায্য করবই এমন একটি ইচ্ছা ও আশা তার মনে শিকড় গাড়ে ।
মা ইয়েনলি জানেন, দাতব্য কাজের জন্যএক লোকের শক্তি সীমিত । কিন্তু ভালবাসার দূত হিসেবে তিনি অন্য লোকদের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারেন । তাই তিনি দাতব্য কাজে যোগ দিতে অন্য লোকদের আহবান জানিয়েছেন । ২০০৫ সালে তিনি সুখী প্রকল্পের একজন কর্মী হলেন এবং এর প্রতিমূর্তির প্রতিনিধি হলেন । তিনি আনন্দের সঙ্গে বলেন, আমি একটি উপযোগী পদ্ধতি পেয়েছি । অবশেষে আমার বহু দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । আমি পশ্চিম চীনের নারীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই , তারা আমাকে তাদেরকে সাহায্য করার সুযোগ দিয়েছেন । যাতে আমার বহু দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে ।
|