মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস ৫ মার্চ তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছেন। এদিন তিনি তথ্য মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের নেতারা উভয়েই শান্তি আলোচনা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে রাজী হয়েছেন। বর্তমান তাঁরা সংলাপ চালানোর উপায় নিয়ে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবতা রাইসের মুখে বলার মতো অতো সহজ নয়।
প্রথমতঃ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এদিন শান্তি আলোচনা পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, শান্তি প্রক্রিয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনের কৌশলগত বাছাই। ফিলিস্তিন ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। তা সত্ত্বেও, শান্তি আলোচনা পুনরুদ্ধারের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারে আব্বাস কিছু বলেন নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শান্তি আলোচনা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে আব্বাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের মধ্যপন্থীদের একমাত্র লক্ষ্য। কারণ, যদি তিনি শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে যান, তার মানে, গত বছর আন্নাপোলিসের অনুষ্ঠিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি সম্মেলনে দেয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্খন হবে। ফলে ফিলিস্তিনের মধ্যপন্থীদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকল সমর্থন ও সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।
ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা আবার শুরু হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিশাল মতভেদ দেখা দেয়ার কারণে দু'পক্ষ বলতে গেলে প্রায় কোন ইতিবাচক ফলাফল অর্জনে সক্ষম হয়নি। মার্চ মাসের প্রথম দিকে ইসরাইলী বাহিনী এবং ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে গাজা অঞ্চলে সংঘটিত তুমুল সংঘর্ঘে কয়েক'শ ফিলিস্তিনী নিহত হয়। তার ফলে আব্বাসের প্রশাসনের উপর আরো বেশি চাপ পড়েছে। হামাসের একজন মুখপাত্র প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে, আব্বাস একজন ভীরু এবং ফিলিস্তিনীদেরকে রক্ষা করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল তার উপর গুরত্ব দেয়নি। বরং তাকে ফিলিস্তিনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি জারি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
দ্বিতীয়তঃযুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের শান্তি আলোচনার ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে। মার্কিন সরকার প্রেসিডেন্ট বুশের কার্যমেয়াদে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্য প্রণয়ন করেছে। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইস আব্বাসকে দু'টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটা হলো যুক্তরাষ্ট্র গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য নিকট প্রাচ্য বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ওয়েলচকে মিসরে পাঠাবে। আরেকটা হলো যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার জন্য শান্তি রোড ম্যাপ কার্যকরকরণের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তা উইলিয়াম ফ্রাসেরকে আগামী সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাবে। এদুটি বিষয়ে এর আগে আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল। উল্লেখিত দুটি বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে মনে চললে আব্বাস গাজা সম্পর্কিত চাপ কমাতে পারবেন। আব্বাস প্রশাসন ইহুদী বসতী এলাকা এবং জেরুজালেমে অবস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ইসরাইলের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারবে। কিন্তু সমস্যা হলো উল্লেখিত দুটি বিষয় কার্যকরের প্রক্রিয়া খুবই জটিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসরের সাহায্যে গাজা অঞ্চলের পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। কিন্তু হামাস ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে চায় না এবং ইসরাইলের ওপর রেকট হামলা বন্ধ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইল হামাসকে সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে মনে করে এবং তার সঙ্গে সংলাপ করতে রাজী নয়। এই অবস্থা ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ায় একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন বুশ তাঁর প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ করার আগে চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য বাস্তবায়নে আর মাত্র দশ মাস বাকী। ফিলিস্তিন এবং ইসরাইল এ সময়সীমার মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে মতৈক্য পৌঁছাবে কিনা তাতে বেশ সন্দেহ রয়েছে। তাই বিশ্লেষকদের মতামত অনুযায়ী ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের শান্তি আলোচনার ভবিষ্যত ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। (লিলি)
|