চীনাদের ঐতিহ্যিক ধারণায় বাড়িঘর হচ্ছে আজীবনের একটি প্রত্যাশা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তি । ২০০৭ সালে নতুন বাড়ি কেনার ব্যাপারে পেইচিংবাসী চাং রুই বেশ অসুবিধায় পড়েছিলেন । সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে , স্থানীয় সরকারের সহায়তায় শেষ পর্যন্ত তার বাড়ি সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান হয়েছে ।
২০০৬ সালের জুলাই মাসে পেইচিংয়ের ফোং থাই এলাকার অধিবাসী চাং রুই ও অন্য ৮জন অধিবাসী একটি রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন কোম্পানির সংগে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন । চুক্তি অনুসারে তাদের একতলার পুরনো বাড়ি উচ্ছেদ করা হবে এবং সুবিধাজনক দামে কোম্পানির নির্মীয়মান বাড়িগুলো বিক্রি করা হবে । আগে বেশ কিছু অধিবাসী রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সংগে এ রকম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে । চাং রুই নিজের চোখেও দেখেছেন , অনেকে নির্বিঘ্নে নতুন বাড়ির চাবি পেয়েছেন । এটা দেখে তিনি খুবই আনন্দিত । তবে তার নতুন বাড়ির ব্যাপারে কিছু অসুবিধা দেখা দিয়েছে । তিনি বলেন ,
প্রাথমিক পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পর আরেকটি চুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয় । যখন এ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত , তখন সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এ ব্যাপারে গরীমসী করতে থাকে । জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি । অনেক চেষ্টা করার পরও কোনো ফল হয় নি ।
চাং রুইয়ের আগের পুরনো বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে । নতুন বাড়ি কেনার আনুষ্ঠানিক প্রটোকল তখনো স্বাক্ষরিত হয় নি । তিনি ও তার পরিবার অস্থায়ীভাবে ভাড়া করা বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন । তার পরিবারের সবাই এ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত । চাং রুই তো চাকরী করেন । তার মা ওয়াং চিন রুং আর বসে থাকতে পারেন না । তিনি প্রতিদিন সকাল ৭টায় হেটে হেটে সেই কোম্পানির অধীনস্থ আবাসভবন বিক্রি বিভাগে যেতেন এবং তাদের উত্তরের অপেক্ষায় থাকতেন । দুপুর বেলায় আবার বাড়িতে ফিরে কিছু খেয়েদেয়ে আবার সেখানে যেতেন । এভাবে তিন মাস সময় কেটে গেলো । এতেও কোনো ফল পাওয়া যায় নি । চাং রুই বলেন ,
আমাদের সুপরিচিত একজন বন্ধুর মাধ্যমে আমরা এ নতুন বাড়ি কিনেছি । নতুন বাড়ির নম্বর পর্যন্ত আমরা আগেভাগে জেনে নিয়েছি । তবে মাঝখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে । এখন নতুন বাড়ি আর পাওয়া যাচ্ছে না ।
এর কারণ হচ্ছে , সেই কোম্পানি প্রাথমিক চুক্তি ভংগ করে বাড়িগুলো অন্যদের বিক্রি করে দিয়েছে । এমন অবস্থায় অধিবাসী ও কোম্পানিটির দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে । যে কোনো সময় গুরুতর সংঘাত ঘটতে পারে । ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে ফোং থাই এলাকা সরকারের উদ্যোগে সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় । তাদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগে তৃণমূলের জনসাধারণের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা । এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার খবর পেয়ে চাং রুই সংগে সংগে তার কেনা বাড়ি সম্পর্কে এ কেন্দ্রকে জানান । তখন থেকে তার বাড়ির সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয় । তিনি বলেন ,
আমাদের সমস্যা জানার পর এ কেন্দ্র শহর কর্তপক্ষ ও এলাকা সরকারের সংগে ইতিবাচক কাজ করে । এ কেন্দ্রের পরিচালক থিয়ান বেশ কয়েকবার আমাদের মাঝে এসে আমাদেরকে আশ্বাস দেন যে , আপনাদের নতুন বাড়ি পাওয়া যাবে । তার এ কথা শুনে আমরা নিশ্চিন্ত হয়েছি । ৩ থেকে ৪ মাসের প্রচেষ্টার পর ২০০৭ সালের এপ্রিলের মাসের শেষ দিকে আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে ।
২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে ফোং থাই এলাকার সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন কেন্দ্রের সহায়তায় চাং রুই ও অন্য কয়েকজন অধিবাসী আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়েল এস্টেট কোপানির সংগে উচ্ছেদ বাবদ ক্ষতিপুরণ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন । চাং রুই আনন্দের সংগে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,
আমি তাদের সংগে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি । এখন বাড়িও পাওয়া গেছে । ক্ষতিপুরণ হিসেবে কিছু টাকাও পাওয়া গেছে । আমার মাও এখন নিশ্চিন্ত হয়েছেন । স্থানীয় সরকারের প্রচেষ্টা না থাকলে আমাদের কোনো উপায় থাকতো না ।
২০০৭ সাল ছিল পেইচিং পৌর সরকারের দ্বন্দ্ব নিরসনের বছর । ফোং থাই এলাকার সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর একেবারে তৃণমূলে তাদের মধ্যস্থতার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে । গত বছর এ কেন্দ্র জনসাধারণের কাছ থেকে ৪ হাজারেরও বেশি চিঠি পেয়েছে । প্রায় দু' শ' কেসের মধ্যে ১৭২টির সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হয়েছে । ফোং থাই এলাকার চিঠি সংক্রান্ত কার্যালয়ের পরিচালক সুং তে লিং বলেন ,
জনসাধারণের চিঠি সংক্রান্ত কাজের মধ্য দিয়ে তাদের বেশ কিছু অসুবিধা দূর করা সম্ভব হয়েছে । এটি জনসাধারণের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করেছে এবং সমাজের সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ করেছে ।
পেইচিং পৌর সরকার জনসাধারণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মেয়রের ডাকবাক্স ও টেলিফোনের হটলাইন চালু করেছে । যাতে সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন সরকারী বিভাগের যোগাযোগ সুগম হয় । পেইচিং সরকার জনগণের নানা ধরণের প্রস্তাবকে নিজের নীতি নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে গ্রহণ করেছে । এভাবে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো আরো গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত হওয়া সম্ভব হয়েছে । পেইচিং চিঠি সংক্রান্ত কার্যালয়ের উপপরিচালক লিউ সু নিয়ান বলেন ,
২০০৭ সালে পেইচিং পৌর সরকারের স্থির করা ৫৮টি করণীয়ের মধ্যে ৫০টি জনসাধারণের মতামত ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে । ২০০৮ সালে পেইচিং সরকারের স্থিরকৃত ৫৯টি করণীয়ের মধ্যে ১০০ শতাংশই জনসাধারণের মতামত ও প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে । কাজের মধ্য থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি , জনসাধারণের প্রস্তাব সংগ্রহ করা সরকারী কাজে তাদের শরীক থাকার উত্সাহ উদ্দীপনাকে কাজে লাগানোর পক্ষে সহায়ক । এটি জনসাধারণের স্বার্থের সংগে সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান তরান্বিত করার জন্যে কল্যানকর ।
লিউ সু নিয়ান বলেন , গত কয়েক বছরে পেইচিং পৌর সরকার কার্যকরভাবে সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন এবং নানা স্তরের দ্বন্দ্ব নিরসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজকে নিজের প্রচেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে । এখন তাদের চেষ্টা বেশ সফল হয়েছে । পেইচিংয়ের বিভিন্ন স্তরের সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন কেন্দ্র জনসাধারণের অসুবিধা দূরীকরণের পাশাপাশি চীনের সম্প্রীতিময় সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্যে সুষ্ঠু ভিত্তি স্থাপন করেছে ।
|