পূর্ব চীনের সান তুং প্রদেশের রাজধানী চি নান শহরে একটি মুসলিম আবাসিক এলাকা আছে । সেখানে গোটা চি নান শহরের একমাত্র ভারতীয় খাবার রেস্তোরাঁ আছে । প্রতিদিন এ রেস্তোরাঁয় গিয়ে ভারতীয় খাবার উপভোগ করা দেশী বিদেশী বন্ধুর সংখ্যা অনেক বেশি । আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে "জেসমিন"নামে এই রেস্তোরাঁয় যাবো এবং সেখানকার বৈদেশিক খাবারের পাশাপাশি সে সব দেশের বৈশিষ্ট উপভোগ করবো । তা ছাড়া , আমরা এ রেস্তোরাঁর দু'মেয়াদের মালিকের সম্পর্কে জানবো । তারা হলেন ফিলিস্তিন থেকে আসা শাদি আবু জারকা এবং পাকিস্তান থেকে আসা নাভিদ আসগার । অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করছি আমি শুয়েই ফেই ফেই ।
জেসমিন রেস্তোরাঁয়ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ধূপ-ধূনা এবং খাবারের গন্ধ নাঁকে আসে । রেস্তোরাঁর চার পাশে দেখা যায় ভারত ও পাকিস্তানের বৈশিষ্টময় ছবি এবং পোস্টকার্ড । বড় একটি টেলিভিশনে ভারতীয় নাচ-গান অতিথিদের দেখাচ্ছে । জাতীয় পোশাক পরা ভারতীয় পরিবেশক , দক্ষিণ এশিয়ার নাচ-গান এবং বিভিন্ন দেশের অতিথি , এসব দেখতে দেখতে যেন প্রাচীন ভারতে এসেছে ।
রেস্তোরাঁয় সংবাদদাতা ফিলিস্তিনী যুবক শাদিকে দেখেছেন । লম্বা এবং সুন্দর শাদি হলেন জেসমিন রেস্তোরাঁর বর্তমান মালিকের ভালো বন্ধু , তিনিও এ রেস্তরাঁর প্রথম মালিক । এ রেস্তোরাঁ খোলার কারণ সম্পর্কে শাদি বলেন :
আমার অনেক বন্ধুই পাকিস্তানী এবং ভারতী । চি নান শহরে খাবার খেতে তাদের অনেক অসুবিধা হয় । তাই আমি এ রেস্তোরাঁ খুলে ভারতীয় খাবার রান্না ও পরিবেশন করি ।
শাদি এখন সান তুং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন । চার বছর আগে প্রথম চি নান শহরে আসার সময় তিনি চীনা খাবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন নি । তাই এ রেস্তোরাঁ খুলে বসেছেন । এখন ভারত , পাকিস্তানের অতিথি ছাড়া অন্যান্য দেশের লোকেরাও এ রেস্তোরাঁয় গিয়ে ভারতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন ।
তেব চি নান শহরে থাকতে থাকতে শাদি চীনা খাবারকেও ভালোবেসেছেন । তা ছাড়া , ঐতিহ্যিক এবং প্রাচীন চীনা সংস্কৃতিও তাকে আকর্ষণ করেছে । তিনি বলেন :
আমি চীনা সংস্কৃতি খুব পছন্দ করি । আমার চীনে আসার কারণ হল চীনের সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি শেখা । যখন প্রথম এখানে আসি , তখন আমি কিছুই জানতাম না । আমার বন্ধু আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন । এখন চীনের প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বাড়ছে । কারণ চীন সবচেয়ে ভালো ।
শাদি বলেন , বিদেশিদের চীনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সরকারের অনেক সুবিধা নীতি আছে । তাই তার রেস্তোরাঁর ব্যবসা দিন দিন আরো ভালো হচ্ছে । তিনি আরো বলেন , চি নানের আবহাওয়া খুব ভালো , শহর খুব পরিস্কার, লোকজনও খুব বন্ধুপ্রতীম । তাই তিনি এ স্থান ত্যাগ করতে চান না । তিনি বলেন :
এখানে জীবনযাপন খুব সুবিধাজনক । অনেক জায়গায় ভালো জিনিস কিনতে পাওয়া যায় । চীনে এখন সব কিছুই আছে । বিদেশের ৯০ শতাংশের পণ্যদ্রব্য চীন থেকে রপ্তানি করা হয় , যেমন , সোফা , টি ভি ও কম্পিউটার , সব চীনের তৈরি । ফ্রান্সে আমি দু'বছর ছিলাম , ব্রিটেনে ছ'বছর এবং রাশিয়ায় ছ'মাস ছিলাম । তবে আমার মনে চীন সবচেয়ে ভালো । সত্যি , আমি মন থেকে বলছি , চীনাদের চরিত্র ভালো , অন্যকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক ।
শাদির চি নান শহরের জীবন আনন্দময় । এখন তার অনেক বন্ধুও আছে । ছ'মাস আগে তাঁর পাকিস্তান বন্ধু নাভিদ জেসমিন রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় মালিক হয়েছেন । পাকিস্তান ও ভারত প্রতিবেশী দেশ , দু'দেশের খাবার এবং রীতিনীতির অনেক মিল আছে । তাই ভারতীয় রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা নাভিদের জন্য খুবই সহজ ব্যাপার । তিনি বলেন :
আমাদের রেস্তোরাঁ ছাড়া চি নান শহরে ভারত ও পাকিস্তানের খাবার খাওয়া যায় না । তবে পেইচিং , শাংহাই , কুয়াং চৌ ও চে চিয়াং প্রদেশের ই উ শহরে ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ অনেক বেশি । আমি দেখিছি চি নানে অনেক বিদেশি আছে , যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের লোকেরা ভারতীয় খাবার খেতেও পছন্দ করেন । আমার রেস্তোরাঁয় অনেক বিদেশিরা আসেন ।
নাভিদ জানিয়েছেন , রেস্তোরাঁর সস ও কিছু কিছু খাদ্য সরাসরি ভারত ও পাকিস্তান থেকে আনা হয় । বাবুর্চিরাও ভারতীয় বা পাকিস্তানী । নাভিদ আরো বলেন , খাবারের গুণগতমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি রেস্তরাঁর পরিসেবাও খুব ভালো । এখন বিদেশি ছাড়া অনেক চীনা অতিথিও এ রেস্তোরাঁয় আসেন ।
নাভিদ বলেন , তিনি এ শহর ত্যাগ করতে চান না । এখন তার রেস্তোরাঁর ব্যবসা আরো সমুদ্ধ হয়েছে । জেসমিন রেস্তোরাঁ আরো বেশি অতিথিদের সেবা করতে সক্ষম হবে না । তাই চি নান শহরের কেন্দ্রে আরো বড় একটি রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা তাঁর আছে । যাতে আরো বেশি অতিথিরা ভারতীয় খাবার উপভোগ করতে পারে । নাভিদের ভালো বন্ধু এবং এ রেস্তোরাঁর নিয়মিত অতিথি , পাকিস্তানী ছাত্র মোহামদ ইউসুফ নাভিদের পরিকল্পনা সমর্থন করেন । তিনি বলেন :
আমি আশা করি তাঁর আরো ভালো উন্নয়ন হবে , আরো বেশি পাকিস্তানী ও ভারতের বন্ধুদের পরিসেবা করতে পারবেন এবং আরো বেশি চীনা জনগণকে পাকিস্তান ও ভারতীয় খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন ।
|