২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর চীন সাফল্যের সঙ্গে চাঁদ অনুসন্ধানের প্রথম উপগ্রহ 'চাংও এক নম্বর' উতক্ষেপণ করেছে। 'চাংও এক নম্বর' চাঁদ অনুসন্ধান উপগ্রহ সারা বিশ্বের চীনাদের নির্বাচিত ৩০টি গানের একটি সংগীতমালা বহন করে নিয়ে যায়। উপগ্রহ চাঁদ প্রদক্ষিণের কক্ষপথ প্রবেশের পর পৃথিবী থেকে ৩ লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার দূরের মহাশূন্য থেকে এ গানগুলো প্রচার করেছে। আজ থেকে আমি সুরের ভুবণ অনুষ্ঠানে আপনাদের এ গানগুলো শোনাবো। আজ প্রথমেই শুনুন 'স্বদেশের জন্য গান গাওয়া' এই গানটি। চীনা গণ মুক্তি ফৌজের সাধারণ রাজনৈতিক বিভাগের সাংস্কৃতিক দল এ গান গেয়েছে।
গানের কথা এমন, 'পাঁচ তারা লাল পতাকা বাতাসে উড়ছে। বিজয়ের গানের আওয়াজের জোরালো শব্দ ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় দেশের জন্য আমরা গান গাই। আজ থেকে এ দেশ সমৃদ্ধ হয়ে যাবে।' বন্ধুরা, এখন আপনারা ওয়াং সিনের রচিত 'স্বদেশের জন্য গান গাওয়া' গানটি শুনছেন। ১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এই গান রচিত হয়। এ গানটিতে তত্কালীন চীনা জনগণের গর্ব ও আনন্দময় অনুভুতির কথা প্রকাশিত হয়েছে। তখন থেকেই চীনা জনগণ নিজ দেশের ও নিজ বাসভূমের অধিকারী হয়েছেন। ভবিষ্যতের লক্ষ্যে সবার মনে আস্থা ও প্রত্যাশা পরিপূর্ণ। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে এ গানটি চীনে ব্যাপক জনপ্রিয়।
চীনা জনগণকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মর্ম সম্পর্কে উত্সাহ দেয়া, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের দ্বৈত ধারার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা, উচ্চতর বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত প্রকল্প ও জনসাধারণের মধ্য থেকে এ দুটি ক্ষেত্রের ব্যবধান কমানোর উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে চীনের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক প্রকল্প কমিশন, চীনের সুরকার সমিতি ও কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে চাংও এক নম্বর উপগ্রহ থেকে প্রচারিত গান নির্বাচন কর্মসূচী চালু করে। এই কর্মসূচীর শুরু থেকেই সমাজের বিভিন্ন মহল অতি উষ্ণ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চীনের সুরকার সমিতির উপ-মহাসচিব থিয়েন সিয়াও গেন ব্যাখ্যা করেছেন, 'চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ নির্বাচনের ভোটের সঙ্গে তাদের নানা রকম প্রস্তাব সমর্থন সম্বলিত চিঠিও পাঠিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের লেখা গান পাঠিয়েছেন। এমন কি, আমরা অন্ধ গোষ্ঠীর সদস্যদের ভোটও পেয়েছি। গান নির্বাচন কমিশন জনগণের নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করে অবশেষে ৩০টি গান নিয়ে একটি সংগীতমালা নির্বাচন করেছে যা চাংও এক নম্বর উপগ্রহের মাধ্যমে মহাশূন্যে পাঠানো হয়।'
এখন আপনারা শুনছেন 'আমাদের চীনকে ভালোবাসা' গানটি। এ গানটি ১৯৯১ সালে সৃষ্টি হয়েছে। এ গান ছিল চীনের চতুর্থ সংখ্যালঘু জাতি গেমসের প্রধান গান। গানটিতে চীনের ৫৬টি জাতির জনগণের ভাই বোনের মতো সুসামঞ্জস্যভাবে বসবাস করা এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য অবদান রাখার কথা প্রতিফলিত হয়েছে। গানের কথা লিখেছেন ছিয়াও ইয়ু, সুর করেছেন সু পেই তুং, গেয়েছেন সোং চু ইয়াং। গানের কথা এমন, '৫৬টি নক্ষত্রমন্ডল, যেন ৫৬টি ফুল। ৫৬টি জাতির ভাই বোন একটি একই পরিবারের। আর ৫৬টি জাতির ভাষায় একই বাক্যের মর্মকথা, তা হচ্ছে আমাদের চীনকে ভালোবাসা।'
থিয়েন সিয়াও গেন জানিয়েছেন, চাংও এক নম্বর উপগ্রহে বহন করা গানগুলোর সবই চীনে দীর্ঘকাল ধরে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। প্রতিটি গানের বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন ধরণের। এ গানগুলোতে চীনা জনগণ ও তার স্বদেশ, জীবন, শান্তি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং চীনের সংস্কৃতির সৌন্দর্যের মহিমার দিক প্রকাশিত হয়েছে।
এখন আপনারা যে গানটি শুনছেন তা হচ্ছে 'চাংচিয়াং নদীর গান'। এ গানের কথা লিখেছেন হু হোং ওয়েই, সুর করেছেন ওয়াং শি কুয়াং আর গেয়েছেন ইন সিয়াও মেই। চাংচিয়াং নদী চীনের প্রথম বৃহত্তম নদী। একে চীনা জাতির 'মাতৃ নদী' বলে অভিহিত করা হয়। 'চাংচিয়াং নদীর গান' গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে রচিত হয়েছে। এ গানে চাংচিয়াং নদী সম্পর্কে সাবলিল বর্ণনার মধ্য দিয়ে চীনা জনগণের স্বদেশের প্রতি গভীর অনুভূতির কথা ফুটে উঠেছে।
চাংও এক নম্বর উপগ্রহ কেবল গানগুলোই নিয়ে গেছে তা নয়। সেখানে পিকিং অপেরা ও কুন অপেরাসহ চীনের নানা রকম প্রাচীন লোকসংগীত এবং নৃত্যনাট্যেও রয়েছে। এখন আপনারা পিকিং অপেরা 'মাতাল রাণী' এর অংশ বিশেষ শুনুন।
পিকিং অপেরা হচ্ছে চীনে সবচেয়ে আদি ধারার প্রভাবশালী অপেরা। এ অপেরা পেইচিংয়ে সৃষ্টির পর এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রচলিত রয়েছে। এর ইতিহাস কমপক্ষে ২০০ বছরের। চীনের থাং রাজবংশের থাং সুয়েন জো ও ইয়াং ইয়ু হুয়ানের প্রেম কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে 'মাতাল রাণী' অপেরাটি রচিত হয়েছে। প্রয়াত বিখ্যাত পিকিং অপেরার মাস্টার মেই লাই ফাং এ অপেরায় অভিনয় করেছেন। বন্ধুরা, স্ববৈশিষ্ট সম্পন্ন এই মূল্যবান সংগীতের পেলবতাকে উপভোগ করুন।
চাংও এক নম্বর উপগ্রহের সাহায্যে চীনের কিছু প্রাচীনকালের সংগীত, মঙ্গোলীয় জাতির লোকসংগীত ও সিয়ান চিয়াংয়ের লোকসংগীতের প্রতিনিধিত্বকারী সংগীতও মহাশূন্যে পাঠানো হয়েছে। বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে এসে আমরা একসাথে চীনের বাদ্যযন্ত্র গুছিন দিয়ে বাজানো সংগীত 'উচু পাহাড় ও ঝর্ণাধারা' উপভোগ করি।
গুছিন হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রের অন্যতম। এর ইতিহাস প্রায় ৩০০০ বছরের। গুছিনের সুর পরিষ্কার ও পবিত্র, সুরের মধ্য দিয়ে মানুষের সমস্ত অনুভুতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা করা যায়। 'উঁচু পাহাড় ও ঝর্ণাধারা' হচ্ছে গুছিনের প্রতিনিধিত্বশীল সংগীতের অন্যতম। এতে দু'হাজার বছর আগের ইয়ু বো ইয়া ও চুং জি ছি'র গল্প বর্ণনা করা হয়েছে নিখুতভাবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|