নিং সিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল চীনের বৃহত্তম মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা । দীর্ঘকাল ধরে হুই জাতির অনন্য পোষাক ও নৃত্যের বৈশিষ্ট্যে ঐতিহ্যের সৃষ্টি হয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে হুই জাতির পোষাক ও নৃত্য সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
হুই জাতির পোষাকের মধ্যে চুলকে পরিপাটি করে হচ্ছে সাজানো সবচেয়ে স্ববৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক । যেমন হুই জাতির পুরুষরা সাধারনতঃ সাদা টুপি পরেন । তাকে উপাসনা টুপি বলা হয় । তারা গেঞ্জিও পরতে পছন্দ করেন । নারীদের মাথায় সাদা কাপড় জড়ানো থাকে । তাকে স্কার্ফ বলা হয় । হুই জাতি সুন্দর ও পরিপাটি পোষাক পরতে পছন্দ করে । তাদের আধুনিক জামা-কাপড় ভাল লাগে না । তারা সাদা , সবুজ ও কালো রঙের কাপড় পছন্দ করে । হুই জাতির ছেলে ও মেয়েরা লোক - নৃত্য পরিবেশনে দারুণভাবে পারদর্শী ।
গত কয়েক বছরে নিং সিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে জাতীয় বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করে হুই জাতি পোষাক ও নৃত্যের ঐতিহ্য ও তৈরির পদ্ধতিকে বজায় রেখেছে এবং তা আরো সম্প্রসারিত হয়েছে ।
কিছু দিন আগে নিং সিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ইংছুয়ানে চীনের হুই জাতির প্রথম নৃত্য ও পোষাক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় । হুই জাতির নৃত্যের ফোরিও গ্রাফি রচনা ও পোষাক তৈরিতে নিয়োজিত চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতরা এ প্রদর্শনীতে অংশ নেন । চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের নৃত্য ও ফ্যাশন্যাবল পোষাক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতরা হুই জাতির পোষাক তেরি ও নৃত্য রচনার ভবিষ্যতের ওপর আশাবাদী । এবারের প্রদর্শনী প্রসঙ্গে চীনের নৃত্য শিল্পী সমিতির কর্মকর্তা ফেং সুয়ান পাই বলেন ,
হুই জাতির নৃত্য ও পোষাক প্রদর্শনীর আয়োজন থেকে বোঝা যায় , হুই জাতির শিল্পকলা ও সংস্কৃতি একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে । তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে , ভবিষ্যতে হুই জাতির সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিশেষ করে হুই জাতির নৃত্যের নৈপুণ্য আরো বেশি বিকাশ লাভ করবে ।
হুই জাতির নৃত্য ও পোষাক প্রদর্শনী আয়োজনের উদ্দেশ্য হুই জাতির পোষাক ও নৃত্য শিল্পীদের জন্য একে অপরের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ ও বিনিময়ের সুযোগ প্রদান করা । চীনের সংখ্যালঘু জাতির পোষাক সমিতির ডিজাইনার ম্যাদাম মা সু মিন বলেন ,
নিং সিয়ার সংখ্যালঘু জাতি কমিটি এবং সংস্কৃতি ও শিল্পকলা কমিটির যৌথ উদ্যোগে হুই জাতির এই নৃত্য ও পোষাক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এটা হুই জাতির পোষাক ডিজাইন ও তৈরিতে নিয়োজিত শিল্পীদের জন্য দক্ষতা প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্ম এনে দিয়েছে ।
এ প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হুই জাতির ৫৭টি নৃত্য- নাট্য ও ৫০২ ধরনের পোষাক সংগ্রহ করা হয় । নির্বাচন ও যাচাই করার মাধ্যমে ২১টি নৃত্য-নাট্য ও ২৩৮ ধরনের পোষাক এ প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে । হুই জাতির এই ২১টি নৃত্য নাট্য-নাট্য পরিবেশনা দর্শকদের জন্য ভীষণ আকর্ষণ ও আবেগ বয়ে এনেছে । এ সব নৃত্য-নাট্যে তাদের ধর্ম বিশ্বাস , জন জীবন ও হুই জাতির জনসাধারণের আবেগ ও ভালবাসা তুলে ধরা হয়েছে । চীনের নৃত্য শিল্পী সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান লি ইয়্যু সান মনে করেন , এবারকার হুই জাতির নৃত্য -নাট্য পরিবেশনায় নৃত্যের রচনা ও নৈপুণ্যে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে ।
এই ২১টি নৃত্য-নাট্যে লেখকদের রচনার ধারনা ও পদ্ধতিকে তুলে ধরা হয়েছে । এতে যেমনি নৃত্য-নাট্যের সারমর্ম , তেমনি লেখক ও দর্শকদের আবেগ ও ভালবাসাও প্রকাশ পেয়েছে ।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইয়ুননান প্রদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ইংস্টিটিউটের রচিত শুভকামনা নামে একটি নৃত্য- নাট্য এবারকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে । নৃত্যনাট্যের রচনার কৌশল ও আবেগময় সারকথা দর্শকদের মন জয় করেছে । নৃত্য- নাট্যে হুই জাতির জনগণের শিশু জন্মের আনন্দ , শান্তিকামী স্বভাব ও কাজের প্রতি উদ্দীপনাই প্রতিফলিত হয়েছে । নৃত্য- নাট্য রচনার সময় ই জাতিসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির নৃত্যের বৈশিষ্ট্য ও ভাল দিকগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে । ফলে হুই জাতির নতুনভাবে রচিত নৃত্য- নাট্যে নিজের ঐতিহ্য একটুও কমে নি , বরং তা আরো বেড়েছে । হুই জাতির নৃত্য- নাট্যের রচনার ধারা প্রসঙ্গে লেখক মাদাম মা ওয়েন চিং বলেন ,
শিশুর জন্মগ্রহণ হুই জাতির জন্য উজ্জ্বল সূর্যরশ্মি বয়ে আনে । এটাও মুসলমানদের একটি সবচেয়ে উত্সাহব্যঞ্জক উত্সব । এতে জীবনের প্রতি প্রশংসার গানও সৃষ্টি হয় । এই ধরনের গানের মাধ্যমে হুই জাতির প্রশংসা করা হয়েছে এবং এ জাতির ভবিষ্যত্ প্রচেষ্টাকেও উদ্দীপ্ত করে তোলা হয়েছে । এর মাধ্যমে হুই জাতি আরো সুষম হয়ে উঠেছে ।
হুই জাতির পোষাক বিষযক প্রদর্শনীতে পোষাকের ডিজাইনের রীতি-নীতি ও বৈশিষ্ট্য দর্শক ও বিশেষজ্ঞদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে । চীনের পোষাক সমিতির একজন সদস্য মাদাম ইয়্যু তেন বলেন ,
এবারকার পোষাক প্রদর্শনীতে হুই জাতির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখা দিয়েছে । হুই জাতির এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে শিল্পীরা বৈচিত্র্যময় পোষাক ডিজাইন করেছেন । এই মনোরম প্রদর্শনী দেখে দর্শকরা ব্যাপক প্রফুল্ল হয়ে উঠেছেন । বিশেষ করে মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহার্য উপাসনার পোষাক দর্শক ও বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণসহ মন জয় করেছে ।
জানা গেছে , বর্তমানে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী হুই জাতির জনসংখ্যা ১ কোটিরও বেশি । সুতরাং হুই জাতির পোষাক বাজারের উন্নয়নের ভবিষ্যত্ খুব উজ্জ্বল । এবারকার হুই জাতির পোষাক প্রদর্শনী এমন একটি প্ল্যাটফর্ম , যার মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য বিপুল সংখ্যক বিবিধ পোষাক প্রদর্শিত হয়েছে । এতে হুই জাতির মূল বৈশিষ্ট্যই প্রকাশ পেয়েছে । (থান ইয়াও খাং)
|