সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিনেত্রী ছেন সিও ই চীনের অনেক টিভি সিরিয়াল অভিনয় করেছেন। তিনি পেইচিংয়ের রেন ই নাট্য দলের একজন অভিনেত্রী। ছেন সিও ই কয়েক বছরে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করার পর আবার মঞ্চ নাটকে ফিরে এসেছেন। পেইচিংয়ের রেন ই নাট্য দল খুব বিখ্যাত এবং জনপ্রিয়। সম্প্রতি রেন ই'র "লিয়েন হুয়া" নাটকে অভিনয় করেছেন ছেন সিও ই । এই নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
"লিয়েন হুয়া" নাটকের গল্পের পটভূমি হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে পেইচিংকে । নাটকে থিয়েন হো আর লিয়ান হুয়া হলেন স্বামী-স্ত্রী। তারা খুব গরিবমানুষ। ধনী হওয়া তাদের স্বপ্ন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের জন্য তারা নিজের জীবন পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেলে এবং অবশেষে প্রাণ হারায়। তারা একটি অভূতপূর্ব এবং মহামূল্যাবান শিল্পকর্ম পায় যা তাদের ধনী হওয়ার একমাত্র আশা। কিন্তু এ সব করতে গিয়ে তাদের সম্পর্ক এমনকি জীবন পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়। নাটকে শুরুতেই লিয়েন হুয়া গুলি করে তার স্বামীকে মেরে ফেলে তারপর নিজেও আত্মহত্যা করে। এরপর শুরু হয়ে ফ্ল্যাশব্যাকে কাহিনীর বর্ণনা। কাহিনীতে অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মধ্যে একটি জটিল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়। এ নিয়ে ছেন সিও ই বলেন:
"এই নাটকের শুরুতেই আমাদেরকে কাহিনীর চূড়ান্ত দ্বান্দ্বিক পর্যায়ের নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আস্তে আস্তে নামিয়ে আনা হয় প্রাথমিক পর্যায়ে। সাধারণত নাটকে ধীরে ধীরে কাহিনীর বিস্তার ঘটিয়ে পরিণতি দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এই নাটক চলতে থাকে উল্টো দিক থেকে। নাটকটি চূড়ান্ত দ্বন্দ্ব থেকে অবরোহণ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক কাহিনীর সরল বিস্তারে ফেরার পর দর্শকরা একাত্ম হতে শুরু করেন। এই নাটক দেখার অভিজ্ঞতাও বেশ জটিল।"
নাটকে লিয়েন হুয়া হলেন একজন খুব আবেগপ্রবণ নারী। লিয়েন হুয়ার চরিত্র ভালভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য ছেন সিও ই খুব দরদ দিয়ে অভিনয় করেছেন। ছেন সিও ই লিয়েন হুয়া চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করেন। কারণ রেন ই'র নাটকে পুরুষ চরিত্রই বেশি। চলচ্চিত্র ও নাটক এই দুই মাধ্যমের তুলনা করতে গিয়ে ছেন সিও ই মনে করেন, নাটকে অভিনয় বেশি কঠিন। কারণ একই চরিত্রে বার বার অভিনয় করতে হয়। লিয়েন হুয়া'র মত আবেগপ্রবণ নারী চরিত্রে অভিনয় করা একটি চ্যালেঞ্জ হলেও আমার খুব ভাল লাগে।"
ছেন সিও ই চীনের সি ছুয়েন প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। এখন তার বয়স প্রায় ৪০ বছর। চীনের কেন্দ্রীয় নাটক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার সময় তিনি "ওয়াই লাই মেই" টিভি সিরিয়াল প্রধান নারী চরিত্র জাও সিও ইউন-এর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান। সিরিয়ালটি খুব জনপ্রিয় ছিল এবং ছেন সিও ই এর মাধ্যমে বিখ্যাত হয়েছেন। এরপর বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এসব চরিত্রে অধিকাংশই ভাল এবং দয়ালু । তিনি চান না সব সময় এ রকম নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতে, এর পরিবর্তে তিনি আরো জটিল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেতে চান। ছেন সিও ই বলেন: "আমি আগে কয়েক জন দয়ালু নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। এসব চরিত্রে বেশি অভিনয় করতে আর আমার ভাল লাগে না। কারণ এক রকমের চরিত্রে অভিনয় করতে থাকলে আমার অভিজ্ঞতাও খুব সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলে আমার নিজের জন্য তা ভাল।"
নাট্যাঙ্গনের সবাই ছেন সিও ই'র অকৃত্রিম অভিনয়ের প্রশংসা করেন। তার চমত্কার অভিনয় দর্শকদের স্বীকৃতিও পেয়েছে । ব্যাক্তিগতজীবনে ছেন সিও ই খুব সরল মানুষ, সব সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন। তিনি নিজেই বলেন, তার অভিনয় নিজের চরিত্রের মতো।
"আমি কৃত্রিম অভিনয় করতে পারি না। যদি আমার মনে চরিত্রের জন্য আবেগ বোধ করতে না পারি তাহলে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে অভিনয় করতে পারি না। সব সময় মন দিয়ে চরিত্রের সুখদুঃখ উপলব্ধি করা আমার অভিনয়ের একটি বৈশিষ্ট্য।"
চীনের অভিনেত্রীদের মধ্যে ছেন সিও ই হয়তো সবচেয়ে জনপ্রিয় বা আকর্ষণীয় নন। কিন্তু নিজ বৈশিষ্ট্যের গুণে তিনি এখনো অভিনয়ে নিজের স্থান ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, তার বাচ্চা হওয়ার পর জীবনের অভিজ্ঞতা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। অভিনয়ের স্টাইল আরো বিকশিত হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের জীবন হলো সরল থেকে জটিল হয়ে অবশেষে আবার সরল পথে আসার প্রক্রিয়া। অভিনয়ও ঠিক তাই। মন দিয়ে অভিনয় করলে দর্শকরাও উপলব্ধি করতে পারেন। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|