মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড বাউচারের ৪ মার্চ ভারত সফরে যাওয়ার কথা। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শিল্প ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপমন্ত্রী মারিও মানকুসোর সফরের পর এটা হবে আরেকজন মার্কিন উধর্তন কর্মকর্তার ভারত সফর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করাই হলো মার্কিন উধর্তন কর্মকর্তাদের বার বার ভারত সফরের প্রধান লক্ষ্য।
রিচার্ড বাউচার প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত। জানা গেছে, এবারের ভারত সফরে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জীসহ কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠককালে তারা দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক ব্যাপারে মত বিনিময় করবেন। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের পর এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত ও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মধ্যে পরমাণু চুক্তির নিশ্চয়তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা খুব জরুরী।
গত বছরের আগস্ট মাসে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তা ভারতে বিপুল বিতর্কের ঝড় ওঠে। এই চুক্তি ভারতের পররাষ্ট্র নীতি'র ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ভারতের সরকার-বিরোধী দলগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে। বাম দল এই হুমকিও দেয় যে, যদি সরকার পরমাণু চুক্তি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখে তাহলে তারা সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেবে। এসব কারণে পরমাণু চুক্তি'র বাস্তবায়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে।
পরমাণু চুক্তি'র সময়সূচী অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে ভারত ও আই.এ.ই.এ'র আলোচনা করার কথা ছিল । ২০০৮ সালের মার্চ ও এপ্রিল মাসের আগে পরমাণু জ্বালানি সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে নিশ্চয়তা চুক্তি স্বাক্ষর এবং জুন মাসের আগে মার্কিন কংগ্রেসে দাখিল করার কথা। যাতে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই চুক্তি সংক্রান্ত সকল আলোচনা সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু দেশে বিপুল প্রতিরোধের মুখে পড়ায় ভারত সরকার গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে আই.এ.ই.এ'র সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এ পর্যন্ত ৫ দফা আলোচনা করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।
অন্য দিকে পরমাণু চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করতে চাইলে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন দরকার । কিন্তু চলতি বছর হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী বছর। সেপ্টেম্বর মাসের পর মার্কিন কংগ্রেসের দীর্ঘ দিনের জন্য মূলতবি থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালের আগেই চুক্তিটি কংগ্রেসে গৃহীত না হলে দু'বছরের প্রস্তুতি আপাতত নিষ্ফল হয়ে যাবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের জটিল অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে বাউচারও সম্ভবত গেটসের মতোই বেশি চাপচাপি করবেন না। বরং তিনি ভারত সরকারের কাছে এই চুক্তি যে দু'দেশের সম্পর্কের ওপরে কোনো প্রভাব ফেলবে না তার পক্ষে ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরবেন। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যাওয়ায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ভারত সরকারও উদ্বিগ্ন। আই.এ.ই.এ'র সঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার দেশের সমর্থন পাওয়ার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ৩ মার্চ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জী লোকসভায় বলেছেন, সরকার ব্যাপক সমর্থন অর্জনের জন্য আরো চেষ্টা চালাবে। যদিও সরকারকে আই.এ.ই.এ'র সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুমোদন দিয়েছে বামপন্থী দল, কিন্তু তারা ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ৩ মার্চ জানায়, এই চুক্তি মার্কিন স্বার্থে ভারতকে কিছু বিষয়ে আপোষ করতে হতে পারে বলে তারা চুক্তিটির বিরোধিতা করছে। যদি সরকার এই চুক্তি আরো সামনে এগিয়ে নিতে চায় তাহলে দেশের নির্বাচনের সময়ও এগিয়ে আনতে হবে তাদের।
এ সব কারণে আগামী কয়েকটি সপ্তাহ ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির জন্য চূড়ান্ত সময় পর্ব। ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ মোকাবিলা করতে পারলেও পরের প্রক্রিয়ায় সফল হবে কিনা তাও বলা কঠিন। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|