v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-03 20:50:59    
পাহাড়ের শিশুর শহরে লেখাপড়ার গল্প

cri
    ১৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে ফু ছিন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছেং তু শহরের লুং ছুয়ান ই জেলার লুং ছুয়ান পাহাড়ের বাসায় থাকে। প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ার সময় তার বাবা ও মা বাইরে কাজ করতে যান। সে ও ছোট বোন ৭০ বছর বয়সী দাদা ও দাদীর সঙ্গে পাহাড়ের বাসায় থাকেন। সে বলেছে, (১)

    আমার প্রাথমিক স্কুল প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র দশজন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা শতাধিক। আমার বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত হেঁটে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। আমাদের স্কুল সব টালি দেয়া বাড়ি। বৃষ্টির দিনে ক্লাস রুমে পানি ঢুকে যায়।

    ফু ছিন নিজের প্রচেষ্টায় প্রাথমিক স্কুল থেকে সুষ্ঠুভাবে স্নাতক হয়। তবে ফু ছিনের বাড়ির কাছাকাছি কোন মাধ্যমিক স্কুল নেই। মাধ্যমিক স্কুলে হেঁটে যেতে দেড় ঘন্টা প্রয়োজন। তার বাবা ও মা তার লেখাপড়া নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন দেড় ঘন্টা হেঁটে চললে শিশু ক্লান্ত হয়ে যাবে। তবে স্কুলে থাকলেও টাকা দেয়ার সমস্যা আছে। ফু ছিন খুব দয়ালু। সে বাবা ও মা'র ওপর চাপ দিতে চায় না। তবে সে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এখন তার শিক্ষক তাকে একটি সুন্দর খবর বলেছেন। ফু ছিন বলেছে, (২)

    আমার শিক্ষক আমাকে বলেছেন, বর্তমানে সরকারের সুবিধা নীতি রয়েছে। যেমন "সোনালী ফনিক্স" নামক প্রকল্প । শ্রেষ্ঠ ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবৈতনিক শিক্ষা পেতে পারে।

    ফনিক্স চীনের কাল্পনিক পৌরাণিক পাখি। চীনারা সোনালী ফনিক্সকে কঠোর পরিবেশে শ্রেষ্ঠ সাফল্য অর্জনের মানুষ বলে মনে করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের পুঁজি বিনিয়োগে পাহাড়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শহরে ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এসব পাহাড়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সোনালী ফনিক্স পরিণত হতে পারে লেখাপড়া করে।

    লুং ছুয়ান ই এলাকার পাহাড় খুব বেশি। যদিও এখানে স্কুলের সংখ্যা অনেক। তবে সাধারণত এসব স্কুলের অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষকের গুণগত মানও ভালো নয়। লুং ছুয়ান ই এলাকার এক জরীপে দেখা গেছে, বহু ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের বাবা মায়ের মতামতের ভিত্তিতে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে সোনালী ফনিক্স প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। ফলে পাহাড়ের ছাত্র-ছাত্রীরা নগরে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

    ফু ছিনও এই সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে লুং ছুয়ান ই এলাকার পাহাড়ের সব মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ হয়েছে। ফু ছিনসহ তিন হাজার এক শোরও বেশি পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী এখন শহরে লেখাপড়া করে। তাদের কেবল ফি বা বেতন মওকুফ করা হয়েছে তাই নয়, বরং প্রত্যেক মাসে এক শো ত্রিশ ইউয়ান ভাতাও তারা পাচ্ছে। তাছাড়া মাধ্যমিক স্কুল তাদেরকে দুটি করে স্কুল ড্রেস্য দিয়েছে। (৩)

    বর্তমানে ফু ছিন ছেং তু শহরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চলের পরীক্ষামূলক মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করে। সে স্কুলেরই হোস্টেলে থাকে। এই স্কুল ২০০৭ সালের জানুয়ারী মাস থেকে নির্মাণ শুরু করে সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয়। এখন সব পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করে। স্কুলে বিভিন্ন স্থাপনা আছে। লেখাপড়ার পরিবেশ খুব ভালো।

    স্কুলের বিভিন্ন স্থাপনা ও সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াও স্কুলের শিক্ষকদের মানও ভালো। এ স্কুলের হেডমাস্টার চাং ইউ লিন আমাদেরকে বলেছেন, (৪)

    আমাদের শিক্ষক হচ্ছেন লুং ছুয়ান ই এলাকার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাছাড়া শিক্ষক হিসেব আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ স্নাতক ছাত্র-ছাত্রীদেরও ভর্তি করেছি।

    এসব ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা ও মা বাইরে কাজ করার কারণে সব সময় যত্ন পায় নি। তাদের বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা রয়েছে। স্কুলে থাকার মাধ্যমে তারা বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময় করা এবং শিক্ষকের যত্ন পেতে পারে। যার ফলে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ফু ছিন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছে, (৫)

    আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো। আমি আশা করি, স্নাতক হবার পর আমার প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাবা ও মা সুন্দর জীবন পাবেন। আমি বড় শহরে যেতে চাই। যেমন শাংহাই ,পেইচিং।

    তার সহপাঠী চৌ তান একজন শিক্ষকে পরিণত হতে চায়। সে বলেছে, (৬)

    আমি চীনা ভাষা খুব পছন্দ করি। আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি মনে করি, আমি আমাদের শিক্ষকের মত সমাজ উন্নয়নের জন্য নিজের অবদান রাখবো।

    পরবর্তীতে লুং ছুয়ান ই এলাকার আরো বেশি পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীরা শহরে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায়। যাতে তারা শহরের শিশুদের সঙ্গে একই শিক্ষাদানের সুযোগ পেতে পারে।

    শ্রোতা বন্ধুরা, লং ছুয়ান ই এলাকার দরিদ্র পাহাড়ের মত চীনের আরো অনেক দারিদ্র পাহাড়ী এলাকা রয়েছে। বর্তমানে বাবা ও মা বাইরে কাজ করে তাদের শিশুরা বাড়িতে থাকে, এমন কৃষকদের সংখ্যা দুই কোটি। শহর ও গ্রামের পার্থক্য কমিয়ে আনা এবং সমান শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য চীন সরকারের এবং সমাজের আরো প্রচেষ্টা চালানো দরকার।