v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-27 16:51:04    
মংগোলিয় ব্যবসায়ীর কাহিনী

cri

    উত্তর চীনের অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আরলয়ানহট শহরে মংগোলিয়ার নারী ব্যবসায়ী ডেডবিলিগ হচ্ছেন চীনের একজন সুখী পুত্রবধু । পাশাপাশি চীন ও মংগোলিয়ার বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তিনি একজন সুপরিচিত লোক । দু দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান বাড়ানোর জন্যে তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । আরলিয়ানহটের সীমান্ত বাণিজ্যের বাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি লিখে প্রস্তাবও দিয়েছেন ।

    ডেডবিলিগের বয়স ৩৬ বছর । যখন তার বয়স ১৭ বছর ছিল , তখন তিনি মংগোলিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে পূর্ব চীনের শাংহাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্প বিদ্যুতের ওপর লেখাপড়া করতে আসেন । তবে দু বছর পর তিনি অসুবিধার মুখে পড়েন । কারণ শিক্ষার খরচ আর পাওয়া গেল না । চীনে লেখাপড়া অব্যাহত রাখার জন্যে তিনি অবসর সময় কিছু কাজ করতে শুরু করেন । তিনি বলেন ,

    আমি শাংহাইয়ের একটি ছোট বিদ্যুত কারখানায় কাজ করতে শুরু করি । আমার কাজ ছিল বাষ্প সুইচ বসানো । সাধারণত আমি সন্ধ্যার পর সেখানে যেতাম । একদিন ৫০ ইউয়ান উপার্জন করতে পারতাম ।

    এভাবে কাজ করতে করতে ডেডবিলিগ অবাধে তার লেখাপড়া শেষ করেন । ১৯৯২ সালে যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন , তখন চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ উন্নয়নের একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয় । তিনি চীনা সমাজের উন্নয়নের সম্ভাবনা অনুভব করেন । সে সময় তার সংগে আসা মংগোলিয়ার অন্য ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সবাই স্বদেশে ফিরে গেছেন । তবে তিনি চীনে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ।

    তিনি প্রথমে পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের ওন চৌ শহরে এসে একটি সুইচ প্রস্তুতকারী কারখানায় কাজ করেন । তখন থেকে তিনি টাকা উপার্জন করতে পেরে আনন্দ বোধ করেন । পাশাপাশি তিনি জীবনযাপনের দুরূহতাও অনুভব করেন । তিনি বলেন ,

    সে সময় আমি একটি ছোট ঘরে থাকতাম । সেখানকার আবহাওয়া খুব আদ্র ও ঠান্ডা । সুইচ তৈরি করার সময় আমার বেশ ঘাম হতো । এমন কঠোর পরিবেশে আমি দু বছর ধরে কাজ করেছি ।

    নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে ডেডবিলিগ আস্তে আস্তে স্থিতিশীলভাবে চীনে দিন কাটাতে শুরু করেন । তিনি সুগভীর সংস্কৃতির অধিকারী চীনকে ভালোবেসেছেন । তিনি আর এখানকার নিসর্গ , চালচলন ও উন্নয়নের অফুরন্ত চালিকা শক্তি ছেড়ে যেতে চান না । অথচ তিনি ক্রমেই নিজের দেশের বাড়ির কথা ভাবতে শুরু করেন । বহু ভেবেচিন্তে তিনি উত্তর চীনের আরলিয়ানহটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ।

    আরলিয়ানহট অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যাংশে অবস্থিত । এটি মংগোলিয়ার সংগে সংলগ্ন চীনের একমাত্র রেল বন্দর এবং উত্তর দিকে উন্মুক্ত চীনের সবচেয়ে সম্মুখফ্রন্ট । আরলিয়ানহটের কাছাকিছি রয়েছে মংগোলিয়া , রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর বিশাল আন্তর্জাতিক বাজার । এ শহর অন্তর্মংগোলিয়া তথা চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রফতানি ও আমদানি পণ্য বিনিময়ের একটি উপযোগী স্থান । ডেববিলিগ মনে করেন , এখানে বসবাস করা তার জন্যে একটি ভালো বাছাই । তিনি বলেন ,

    গোড়ার দিকে চীনে আসলে আমি হয়তো মংগোলিয়ায় একজন পশুপালক হতাম । আরলিয়ানহটে আসার কারণ হচ্ছে , এ শহর মংগোলিয়ার খুবই কাছাকিছি বলে আমি প্রায় নিজের দেশের সংগে মেলামেশা এবং দেশের জন্যে কিছু অবদান রাখতে পারি ।

    প্রথমদিকে ডেডবিলিগ চীন ও মংগোলিয়ার ব্যবসায়ীদের জন্যে দোভাষীর কাজ করতেন । পরে তিনি দু দেশের মধ্যে ব্যবসা করতে শুরু করেন । এক পর্যায়ে তিনি নিজের কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন । তার কোম্পানির প্রধান কাজ হচ্ছে খনিজ পদার্থের আমদানি ও রফতানি । এ সময় চীনের একজন ছেলের সংগে তার পরিচয় হয় । কিছুদিন পর স্বাভাবিকভাবে তিনি ছেলেটির বধুতে পরিণত হন । এভাবে চীন সত্যিকারভাবে তার দ্বিতীয় মাতৃভূমি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

    আরলিয়ানহটের আঞ্চলিক প্রাধান্যকে কাজে লাগিয়ে ডেডবিলিগ উত্সাহের সংগে চীন ও মংগোলিয়ার অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে চেষ্টা করতে থাকেন । তার সহায়তায় চীনের বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা মংগোলিয়ায় গিয়ে সড়ক নির্মাণ , রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও নির্মাণ সামগ্রী উত্পাদনের কাজ শুরু করে । তবে নিজের কাজের মধ্যে আরলিয়ানহটের বাজার উন্নয়নের পথে কিছু সমস্যাও তিনি আবিষ্কার করেন । তিনি বলেন ,

   অতীতে মংগোলিয়ার অনেক ব্যবসায়ী আরলিয়ানহটে নানা ধরণের পণ্য ক্রয় করতে আসতেন । তবে গত বছর থেকে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী চীনের অন্যান্য স্থানে গিয়ে পণ্য ক্রয় করতে শুরু করেন ।

    তখন থেকে ডেডবিলিগ স্বতস্ফুর্তভাবে মংগোলিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আরলিয়ানহটের অর্থনৈতিক পরিবেশের ওপর তাদের মূল্যায়ন এবং এ শহরের বাজার সম্পর্কে তাদের মতামত সংগ্রহ করেন । ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে এ শহরের সরকারী কর্মকর্তা চাং কোও হুয়ার কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি এখান থেকে মংগোলিয়ার ব্যবসায়ীদের চলে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন এবং এ সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন । চাং কোও হুয়া তার এ চিঠির ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেখেন । তিনি স্থানীয় সরকারের একটি সভা ডেকে তার চিঠি নিয়ে আলোচনা করেন । তার চিঠি সম্পর্কে তিনি বলেন ,

    বহু বছর আগে ডেডবিলিগ আরলিয়ানহটে এসেছেন । তিনি এ শহরের অবস্থা সম্পর্কে বেশ ভালো জানেন । চিঠিতে তিনি যেসব সমস্যা তুলে ধরেছেন , সেসব সমস্যার মধ্যে কোনো কোনোটা আমাদের জানা আছে , কোনো কোনোটা আমাদের জানা নেই । তিনি তার চিঠেতে মংগোলিয় ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যার কথা বলেছেন । এটি আমাদের কাজের জন্যে প্রয়োজন ।

    ডেববিলিগের চিঠির প্রেক্ষাপটে চাং কোও হুয়া সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সমাধানের পদ্ধতি বের করার নির্দেশ দেন । যাতে পুনরায় বিদেশী ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করা যায় । চাং কোও হুয়া বিশেষভাবে ডেডবিলিগের কাছে একটি ইমেলও পাঠিয়েছেন এবং আন্তরিকভাবে তাকে আরলিয়ানহটের পণ্য মানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন । তিনি বলেন , ডেডবিলিগ একজন নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি । চীন ও মংগোলিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যে তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তিনি সবসময় দু দেশের মৈত্রী বাড়ানোর জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন ।

    আরলিয়ানহট সরকারের সাড়া সম্পর্কে ডেডবিলিগ বলেন ,

    স্থানীয় সরকার আমার চিঠির ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং আমার চিঠি নিয়ে বিশেষ সভা ডেকেছে । চাং কোও হুয়া আমার কাছে একটি ইমেলও পাঠিয়েছেন । এতে আমি আনন্দিত ।কারণ আমার চেষ্টা বিফল হয় নি ।