পশ্চিম চীনের সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উ রু মুচি শহরের চিন ফেং বিজ্ঞান কোম্পানী হল একটি বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন মেশিন উন্নয়নের বড় কোম্পানী । এ কোম্পানীতে অনেক বিদেশি কর্মী আছে । আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানে আমি শুয়েই ফেই ফেই আপনাদেরকে তাদের গল্প বলবো ।
ইউনগারো ফ্লোরেনস একজন ফরাসী মেয়ে । বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিদ্যুত্-এর ওপর পড়াতেন । ২০০৩ সালে অনুশীলনের জন্য তিনি পেইচিংয়ে এসেছেন । তিনি বলেন , ছোটবেলা থেকেই চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহের কারণে পেইচিং আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন । তিনি বলেন :
ছোটবেলা থেকে আমি চীন সম্পর্কে জানতে খুব আগ্রহী । আমার মনে হয় চীন খুব বিশেষ , সংস্কৃতির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । আমার চোখে চীনা অক্ষর অন্য ভাষার চেয়ে একদম আলাদা , খুব সুন্দর লাগে আমার কাছে । তাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর থেকেই আমি চীনে চাকরি করতে এবং থাকতে খুব ইচ্ছুক ছিলাম । ২০০৩ সালে আমি পেইইচিংয়ে ৬ মাস ধরে কাজের জন্য অনুশীলণ করেছি । তখন থেকেই আমি চীনকে ভালোবেসে ফেলেছি । তবে স্নাতক হওয়ার পর আমি চীনে চাকরি করার সুযোগ পাই নি । তাই আমি প্রথমে ফ্রান্সে একটি চাকরি খুঁজেছি ।
যদিও ফ্লোরেন্সের চীনে আসার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি । তবে ফ্রান্সে কাজ করার দু'বছরের মধ্যে তিনি সবসময় চীনের চাকরি সংক্রান্ত তথ্যের ওপর মনোযোগ তা রাখতেন । ফলে একজন বন্ধুর সাহায্যে ফ্লোরেন্স পশ্চিম চীনের সিন চিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উরুমুচি শহরের চিন ফেং বিজ্ঞান কোম্পানীর একজন কর্মী হয়েছেন ।
তিনি বলেন : আমি ফ্রান্সে দু'বছর কাজ করেছিলাম । তবে সে দু'বছরের মধ্যে আমি চীনে আসার স্বপ্ন ভুলে যাই নি । তাই আমি ফ্রান্স ত্যাগ করেছি । আমার একজন বন্ধু আমাকে বলেছি যে একটি চীনা কোম্পানী বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুত্ উত্পাদন করে , আমার মনে হয় তা একটি সুযোগ , তাই আমি এখানে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি । আমার প্রিয় কাজের স্থান হল উরুমুচি । চিন ফেং কোম্পানীতে কাজ করতেও ভালো লাগে ।
চীনে চাকরি করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলেও জীবন ক্ষেত্রে ফ্লোরেন্স অনেক সমস্যার সম্মুখীন । ফ্লোরেন্সের ছেলে বন্ধু খুব লাজুক , চীনা ভাষা বলতে পারে না বলে তিনি ফ্রান্সে থাকতে চান ।
সে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেছে । দু'বছর ধরে শেখছে । হয়তো সে খুব লাজুক , তাই সে আমাকে বলে চীনে আসতে আমার ভয় লাগে । গত বছর সে পেইচিংয়ে লেখাপড়া করার জন্য এসেছে । পরে সে আমাকে বলে , চীনা লোকেরা আমাকে খুব ভালোবাসে । আমার সঙ্গে বন্ধুর মত আলাপ করে ।
নিজের কাজ সম্পর্কে ফ্লোরেন্স বলেন :
চীনের উন্নয়ন এত দ্রুত , চীনের জন্য আরো বেশি জ্বালানী দরকার । তাই আমার মন হয় , কয়লা অব্যাহতভাবে ব্যবহার করতে পারে না , তেল ও গ্যাসও অব্যাহতভাবে ব্যবহার করতে পারে না । তাই আমি বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুত্ পছন্দ করি । তাতে কোনো দূষণ হবে না ।
উরুমুচি শহরে আসার প্রথম দুই মাসে এখানকার বিভিন্ন ভাষা এবং সুগভীর সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতির কারণে তিনি উইগুর ভাষা শিখতে চান । তিনি স্থানীয় ভাষা শেখার মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি উপভোগ করতে চান । তিনি বলেন :
সিং চিয়াং-এ অনেক সংখ্যালঘু জাতি আছে । উইগুর জাতি আছে , কাজাখ জাতি আছে , খুব মজা , আমি উইগুর ভাষা শিখতে চাই । কারণ যদি আমি এখানে দীর্ঘসময় ধরে থাকি তা সহায়ক হবে এবং উইগুর লোকেরা অন্যদের তাদের ভাষা শেখা দেখে খুশি হবে , তা বিনিময়ের জন্যও সহায়ক ।
উরুমুচি শহরে ফ্লোরেন্সের অনেক ভালো বন্ধু আছে । সময় পেলে ফ্লোরেন্স তাদের সঙ্গে নাচেন , বল খেলেন এবং গান করেন । তিনি বলেন :
এখানে এবং কোম্পানীতে আমার অনেক বন্ধু আছে । আমরা একসঙ্গে খেলি । চীনা এবং বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে রেঁস্তোরায় খাবার খাই , গান গাই এবং শরীর চর্চা করি । আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলি , বাস্কেটবল খেলি এবং পিংপং খেলি । খুব মজার ।
ফেং ইয়ুন ফ্লোরেন্সর চীনা বন্ধুদের অন্যতম । তিনি চিন ফেং বিজ্ঞান কোম্পানীর বিদেশি কর্মী বিভাগের পরিচালক । তিনি চীনা কর্মী ও বিদেশী কর্মীদের বিনিময় বাড়ানোর এমন অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন । তিনি বলেন :
কাজ শেষে বিদেশি কর্মীরা আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন । আবহাওয়া ভালো হলে আমরা একসঙ্গে বাইরে বেড়াতে যাই , পাহাড় উঠি । আমরাও সবসময় তাদের সঙ্গে আলাপ করি এবং তাদের যত্ন নেই । এক কথায় , এখানকার জীবন আনন্দময় । খাবার সম্পর্কে তাদের কোনো অসুবিধা নেই । এখানে জাতীয় খাবারও অনেক বেশি । পাশ্চাত্য দেশের খাবারও আছে । তাই বিভিন্ন স্বাদগন্ধ তারা বাছাই করতে পারেন ।
|