এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জারদারি ও শরীফ
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের দক্ষিণ দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রাওয়ালপিন্ডিতে ২৫ ফেব্রুয়ারী একটি আত্মঘাতি গাড়ি বোমার বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার সামরিক চিকিত্সকসহ আটজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের পালার্মেন্ট নির্বাচনের পর সংঘটিত এটি হলো সবচেয়ে মারাত্মক একটি সন্ত্রাসবাদী ঘটনা। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন পরিস্থিতির ওপর আবারও সবার দৃষ্টি সঞ্চার করেছে।
১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর পাকিস্তান হঠাত্ সন্ত্রাস দমন দেশগুলোর প্রথম সারিতে উঠেছে। সন্ত্রাস দমন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এক খবরে জানা গেছে, পালার্মেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস পার্টি জয়লাভের পর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে প্রথম সংখ্যাগড়িষ্ঠ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। পিপিপি এখন অন্য পার্টির সঙ্গে যৌথভাবে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করছে। পিপিপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির বেশ কিছু পরিবর্তন হবে। এর মধ্যে পাকিস্তান কী রকম সন্ত্রাস দমন নীতি অনুসরণ করবে, তা নিঃসন্দেহে বহিঃবিশ্বের সবচেয়ে মনোযোগী বিষয়ের অন্যতম এখন।
নির্বাচনে পিপিপি জয়লাভের পর পাকিস্তানের চরমপন্থী সদস্যরা পিপিপির কাছে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। পাকিস্তানের 'তালিবান আন্দোলনের' মুখপাত্র ২৪ ফেব্রুয়ারী পিপিপিকে এ সংস্থার সঙ্গে সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'তালিবান আন্দোলন' পিপিপির বিজয়কে স্বাগত জানায়। তারা পিপিপির সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম উপজাতি অঞ্চলের শান্তি পুনরুদ্ধার সমস্যা নিয়ে সংলাপ করতে ইচ্ছুক। তিনি পাকিস্তানের নতুন সরকারকে প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের সন্ত্রাস দমন নীতি বাতিল করার তাগিদ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যদি নতুন সরকার অব্যাহত মুশাররফের সন্ত্রাস দমন নীতি অনুসরণ করে, তাহলে তারা আরো বেশি সন্ত্রাস হামলা চালাবে। 'তালিবান আন্দোলন' হচ্ছে পাকিস্তানের একটি সন্ত্রাসবাদী সংস্থা। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই সংস্থার নেতা বায়তুল্লাহ মাহসুদ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পিপিপির সাবেক চেয়ারম্যান বেনজির ভূট্টোর হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক।
পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারি তালিবান সশস্ত্র সংস্থার ইতিবাচক ইঙ্গিতের দ্রুত জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, পিপিপির নেতৃত্ব নতুন সরকার উপজাতি অঞ্চলের জনসাধারণের কাছে যাবে এবং তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের জোরালো উদ্যোগ নেবে। কিন্তু কোন চরমপন্থী ব্যক্তির সঙ্গে সংলাপ করবে না।
১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর পাকিস্তান বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমনের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিল। পালার্মেন্ট নির্বাচনে পিপিপি'র বিজয়ের পর মার্কিন সরকার ও পালার্মেন্ট পাকিস্তানে অনেক দূত পাঠিয়েছে। তারা পাকিস্তানের নতুন সরকারকে সন্ত্রাস দমনে অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্ররোচিত করেছে। ২৫ ফেব্রুয়ারী পিপিপির কো-চেয়ারম্যান জারদারি দক্ষতাপূর্ণ জবাব দিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতের নতুন সরকার সন্ত্রাস দমন সমস্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। তারপরও পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন হচ্ছে তাদের নিজেদের সন্ত্রাস দমন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন যুদ্ধ নয়। তা ছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারী পিপিপি বেলুচিস্তান প্রদেশে সরকারী বাহিনীর সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বেলুচিস্তান প্রদেশের উত্তরাঞ্চল সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের চোখে আল-কায়েদা সংস্থা ও তালিবান সশস্ত্র ব্যক্তিদের আশ্রয় স্থান হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি পাকিস্তানের সরকারী বাহিনী বেলুচিস্তানে বিরাট আকারের নির্মূলীকরণ অভিযান চালিয়েছে।
এখনো পাকিস্তানের অধিকাংশ জনসাধারণ পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন যুদ্ধে অংশ নেয়ার বিরোধিতা করেন। সর্বশেষ একটি জরীপের ফলাফল অনুযায়ী, ৭৩ শতাংশ পাকিস্তানী মনে করেন, পাকিস্তানের চরমপন্থী শক্তি একটি গুরুতর সমস্যা। কিন্তু ৮৯ শতাংশ জনগণ পাকিস্তানের সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাস দমন সহযোগিতার বিরোধিতা করেন। জনমত মনে করে, এই নতুন প্রবণতা পিপিপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তার সন্ত্রাস দমন নীতির ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।
নানা কারণে ভবিষ্যতের ক্ষমতাসীন পার্টি হিসেবে পিপিপি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ত্যাগ করতে পারে না। সুতরাং সন্ত্রাস দমন সমস্যায় পিপিপি অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করার নীতিতে অবিচল থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|