আধুনিক চিকিত্সা উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মানুষের শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার কাজ আরও সুবিধাজনকভাবে চালাতে পারছে । ফলে আমরা আগের চেয়ে আরও সঠিকভাবে নিজেদের শরীরের অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে পারি এবং নানা ধরনের রোগ আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকেও নিজেদের প্রতিরোধ করতে পারি । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে স্বাস্থ্যের সম্মুখীন কয়েকটি বিপদজনক সময়পর্বের কথা জানাবো । আশা করি, আপনারা এসব তথ্য জানার পর ভালভাবে নিজেদের স্বাস্থ্যের পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারবেন ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশ বিদেশের বিশেষজ্ঞরা ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে জেনেছেন যে, মানুষ তার জীবনকালে প্রতিদিন, প্রতি মাসে এবং প্রতি বছর বেশ কয়েকটি বিপদজনক সময়পূর্বের সম্মুখীন হয় । যদি এসব সময়পর্বকে গুরুত্ব দিয়ে না দেখেন অথবা উপেক্ষা করেন, তাহলে তা হবে নিজেদের শরীরের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ।
প্রতিদিন খুব ভোরে স্বাস্থ্যের অবস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপদজনক থাকে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৪৭৬৯জন হৃদ রোগের কারণে মৃত্যুবরণকারী লোকের ময়না তদন্তের পর জানতে পেরেছে যে, তাদের মধ্যে ২৮ শতাংশই সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে মারা গেছে । গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে, এ সময় মানুষের রক্ত চাপ ও শরীরের তাপমাত্রা সবচেয়ে নিম্নপর্যায়ে চলে আসে । এর ফলে রক্তের চলাচল ধীর হয়ে যায় এবং সহজেই রক্তাভাবের জন্য মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ায় রোগে আক্রান্ত হয় । ময়না তদন্ত থেকে জানা যায় যে, মধ্যরাতে মৃত্যুবরণকারী লোকের সংখ্যা ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে ।
প্রতি সপ্তাহের সোমবার হচ্ছে সবচেয়ে বিপদজনক । জার্মানীরা সোমবারকে তাই 'কালো সোমবার' বলে ডাকে । কারণ শনিবার ও রবিবার ছুটি শেষ হওয়ার পর সোমবার হলো লোকজনের কর্মস্থলে যোগাদানের প্রথমদিন । বিশ্রাম নেয়ার পর শরীরের অবস্থা বিশেষ করে রক্তনালী ও হৃদপিন্ড অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে । ফলে সোমবারে এসব মানুষের মৃত্যুবরণের হার অন্য দিনের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সোমবার বয়সী লোকজন বাড়িতে থাকেন তো ভালো , যদি বাইরে যেতে চান তাহলে অবশ্যই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যাওয়া ভালো ।
প্রতি মাসের পূর্ণিমার সময় মানুষের স্বাস্থ্য সবচেয়ে দুর্বল হয়ে থাকে এবং এ সময় সহজেই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্য দিনের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞদের ৫০টিরও বেশি ধরনের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, ডাক্তার ও পুলিশরা পূর্ণিমার সময় যদি বেশি কাজ করে বা সারা রাত ঘুমতে না পারে, তাহলে তাদের হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অন্য দিনের চেয়ে ৩.৬ শতাংশ বেশি । এ ছাড়া, পূর্ণিমার সময় গেঁটেবাত ও কাঁশিতে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা সহজেই গুরুতর হয়ে ওঠে । বৃটেনের ইনডিপেন্টেন্ট পত্রিকার এক প্রবন্ধে বলা হয়, চাঁদের পরিবর্তন মানুষের শরীরের হরমনের ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে ।
প্রতি বছরের মধ্যে জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাস মানুষের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক । সংশ্লিষ্ট তদন্ত থেকে জানা যায় যে, জানুয়ারী মাসে নিহতের সংখ্যা সারা বছরের শীর্ষ স্থানে অর্থাত্ ১০.৪ শতাংশ । আমাদের সংবাদদাতা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় জেনেছেন যে, এ সময় মানুষের শরীরে বেশি শক্তি দরকার এবং রাসায়নিক রূপান্তর কমে যায় বলে সহজেই সংক্ষিপ্ত সংহিতা ,রক্তনালী ও হৃদপিন্ডের রোগে আক্রান্ত হবে । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তখন লোকজন বেশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ,যথেষ্ট কাপড় পড়া এবং হাঁটা ও দৌঁড়ানোসহ বিভিন্ন ব্যয়াম করা ভালো ।
এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা গবেষণার মাধ্যমে জেনেছেন যে, মানুষের শরীরের অবস্থা প্রতি ৭ বা ৮ বছর পরপর একটি পালা অতিক্রম করে । প্রতিটি পালা অতিক্রমের মধ্য পর্বে স্বাস্থ্যের অবস্থা সবচেয়ে ভালো থাকে এবং পর্বে শরীরের রোগ প্রতিরোধক সামর্থ্য সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে ।
|