চীনের দারফুর সমস্যা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লিউ কুই চিন ২১ ফেব্রুয়ারী লন্ডনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দারফুর সমস্যার বর্তমান অবস্থা ও এ সমস্যায় চীন সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। পাশাপাশি তিনি সংবাদদাতাদের সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন।
লিউ কুই চিন প্রথমেই দারফুর সমস্যা সমাধানের জন্য চীন সরকারের প্রচেষ্টা ব্যাখ্যা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, চীন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টায় সুদান সরকার যৌথ শান্তি রক্ষী মোতায়েনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৭৬৯ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। দারফুর সমস্যা এখন সমাধানের ইতিবাচক দিকে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, 'দারফুর সমস্যার সমাধান একটি সার্বিক প্রকল্প। এতে কমপক্ষে পাঁচ পক্ষের যৌথ প্রয়াস দরকার। প্রথমতঃ সুদান সরকার। দ্বিতীয়তঃ প্রতিরোধ আন্দোলন। আমি আশা করি, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে। কারণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং সরকার ও প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্যে মতৈক্য পৌঁছানো ছাড়া সেখানকার দাঙ্গাহাঙ্গামার অবসান হবে না, সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতিরও উন্নয়ন হবে না, সুষ্ঠুভাবে যৌথ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করাও যাবে না। তৃতীয়তঃ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রয়াস। কারণ বর্তমানে যৌথ শান্তিরক্ষী মোতায়েনের কর্মসূচী বাস্তবায়নে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। চতুর্থতঃ এই অঞ্চলের অন্য দেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রয়াস। পঞ্চমতঃ আফ্রিকান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের প্রয়াস। জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন ও সুদান এই তিন পক্ষের আলোচনা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে প্রক্রিয়াকে যথা সম্ভব দ্রুত করা এবং সামান্য ভুল বুঝাবুঝি ও প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান করা উচিত।'
দারফুর সমস্যা সমাধান সম্পর্কে চীন সরকারের মৌলিক নীতি প্রসঙ্গে লিউ কুই চিন বলেন, চীন দারফুর সমস্যাকে ইতিবাচক দিকে বিবেচনা করে। চীন চাপ সৃষ্টি করা বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংঘর্ষ সমাধানের পথ সমর্থন করে না। তিনি বলেন, 'আমি একটি মৌলিক নীতি অনুসরন করি। তা হচ্ছে সুদানের সার্বভৌম ও ভূভাগীয় অখন্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এটা হচ্ছে দারফুর সমস্যা, সুদান সমস্যা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক সংঘর্ষ সমাধানের একটি মৌলিক নীতি। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ এ অবস্থানকে সমর্থন করে। নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান রাষ্ট্র পদে চীন ৩১ জুলাই ১৭৬৯ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। তবে চীন মনে করে, এই সিদ্ধান্তটিকে সুদান সরকারের স্বীকৃতি পেতে হবে। না হলে সুদান সরকারের সমর্থন ও সমন্বয় ছাড়া তা কার্যকর হবে না। দারফুর সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে উন্নয়নমুখী দেশগুলো এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে আরো একটি সক্রিয় ও ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে পারবে। আমরা আরো ভালোভাবে দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করতে পারবো। আমরা উপলব্ধি করেছি যে, সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুও বিবেচনা করা জরুরী। কেবল ভাবেই ধাপে ধাপে সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে।'
লিউ কুই চিন আরো বলেন, পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতিনিধি এবং সে দেশগুলোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সময়, পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রেসিডেন্ট ও নেতৃবৃন্দ চীনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার সময় এবং পাশ্চাত্য দেশগুলোর নেতাদের প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে দারফুর সমস্যায় তাঁরা চীনকে সমালোচনা করেন নি। সাক্ষাত্কালে তাঁরা বলেছেন, চীন অনেক সক্রিয় ও গঠনমূলক কাজ করেছে এবং অবদান রেখেছে। তারা আশা করেন, চীন আরো বেশি কাজ করবে এবং সুদান সরকারের ওপর চীন আরো বিরাট প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।
কেউ কেউ দারফুর সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে পেইচিং অলিম্পিক গেমস নস্যাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ সম্পর্কে লিউ কুই চিন বলেন, 'আমি প্রায়শই একটি কথা বলি। দারফুর চীনের নয়। দারফুর সমস্যাও চীনের সমস্যা নয়। সুতরাং দারফুর সমস্যা ও অলিম্পিক গেমস এই দুটি বিষয়কে এক পাল্লায় সংযুক্ত করার যুক্তি নেই। আমি আরো বলতে চাই, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অলিম্পিক গেমসের মতো ক্রীড়া জগতের মহাসম্মিলনীকে রাজনৈতিকায়ন করার উত্সাহ যোগায়, তাহলে তা হবে খুব বিপদজনক।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|