v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-21 17:01:43    
তুষার শহরের স্থাপত্য--১

cri

তিব্বতী ভাষায় 'তুষার' মানে নিচ, বিশেষ করে পাহাড়ী ভবনের ঠিক নিচের গ্রাম। তুষার শহর পুতালা ভবনের ঠিক নিচের স্থাপত্যগুলোর সাধারণ নাম এবং পুতালা স্থাপত্যগুলোর একটি অংশ। তুষার শহরের ইতিহাস পুতালা ভবনের ইতিহাসের মতোই দীর্ঘ। তুষার শহর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ৩শ' ১৭ মিটার বিস্তৃত এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে ১শ' ৭০ মিটার। তুষার শহরের আয়তন প্রায় ৫০ হাজার বর্গমিটার। সেখানে এখন ২২টি প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে এবং এগুলোর আয়তন হচ্ছে ৩৩ হাজার ৪৭০ বর্গমিটার। এখানে তিব্বতের প্রাক্তন স্থানীয় সরকারের অফিস, পুরোহিত্ ও অভিজাত কিছু মানুষের বাড়ি, নিম্নতন কর্মকর্তা, শ্রমিক ও ছুটা কাজ করা মানুষের ঘর এবং কিছু সেবা স্থাপনা, আনুষঙ্গিক স্থাপত্য রয়েছে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুরাকীর্তি ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক তান জেং লাং চিয়ে বলেছেন—

তুষার শহর হচ্ছে বিশ্ব সাংস্কৃতিক হেরিটেজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমৃদ্ধ স্থাপত্য ও শ্রমজীবিদের ইতিহাস সৃষ্টি পুরনো তিব্বতী সমাজ, অর্থনীতি ও গভীর সংস্কৃতি জানার বস্তুগত নিদর্শন এবং প্রাচীন তিব্বতের সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথার প্রতীকী প্রতিফলন হচ্ছে এই তুষার শহর।

৮২ বছরের বৃদ্ধ তুও চি তুষার শহরে জীবন-যাপন করেন। ১৯৩৮ সালে, ১৩ বছরের তুও চি তুষার শহরের একজন বার্তাবাহক ছিলেন। প্রতি দিন তিনি হেঁটে হেঁটে তুষার শহরের বিভিন্ন সংস্থার চিঠি লাসার নিকটবর্তী জেলায় পাঠিয়ে দিতেন। সে সময় থেকেই তিনি তুষার শহরে বাস করছেন। ১৯৯৭ সালে পুতালা ভবনের সংরক্ষণ কাজ চালানোর কারণে, সরকার তার জন্য নতুন একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। বুড়ো তুও চি ও কয়েকশ' পরিবারের অধিবাসীরা এক সঙ্গে তুষার শহরে সুয়ে সিন গ্রামে প্রবেশ করেন। তুষার শহরের প্রত্যেকটি স্থাপত্যই তিনি ভালোভাবে চেনেন এবং জানেন। যখন তিনি আবার তুষার শহরে ঢোকেন তখন বৃদ্ধ তুও চি সংবাদদাতাকে পুরনো তিব্বতের অন্ধকার ইতিহাস সম্পর্কে জানান। পাশাপাশি তিনি বর্তমানের সুখী জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তুষার শহর তিব্বতের ইতিহাসের পরিবর্তন যেমন নিজের চোখে দেখেছে তেমনি তিব্বতী মানুষের কঠিন জীবন থেকে এখনকার সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবনে প্রবেশের বাস্তবচিত্রও তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন—

এখানকার পুরনো ও নতুন পরিবর্তন থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, নতুন তিব্বত পুরনো তিব্বতের চেয়ে অনেক ভালো। সমাজতান্ত্রিক সমাজ তিব্বতকে রক্ষা ও উন্নয়ন করেছে।

তুষার শহর হচ্ছে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক। ছিং রাজবংশের কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত কিছু কিছু সংস্থা তিব্বতে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কার্যকরভাবে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক তিব্বতের প্রশাসন চালানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিব্বত যে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ঐতিহাসিক বাস্তবতাও এতে প্রতিফলিত হয়।

তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তির পর থেকে, পুতালা ভবন ও তুষার শহরের সংরক্ষণ কাজ চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের কাছে বড় ধরনের গুরুত্ব পায়। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রধান নেতারা বার বার সেখানকার জরীপ কাজের পাশাপাশি রিপোর্ট শুনেছেন এবং সুনির্দিষ্ট অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন।

তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুরাকীর্তি ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক তান জেং লাং চিয়ে বলেছেন, তুষার শহরের সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রকল্প চীনের সংশ্লিষ্ট পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন, বিধি এবং বিশ্ব হেরিটেজ কনভেনশন, ঐতিহাসিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক মূল্যের ওপর সম্পূর্ণ গবেষণা, প্রমাণ ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ৭ কোটি ইউয়ান রেনমিনপি ব্যয়ে তুষার শহরের ২২টি প্রাচীন স্থাপত্যের সংস্কার ও সংরক্ষণ করেছে এবং 'পুতালা ভবনের তুষার শহরের সংরক্ষণ ও ব্যবহার সংক্রান্ত পরিকল্পনা' তৈরী করেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এক হাজার পুরাকীর্তি সংগ্রহ কিংবা ক্রয় এবং বিভিন্ন ধরনের ৩শ' ৩০টিরও বেশি ছবি সংগ্রহ করেছে।

জানা গেছে, তুষার শহরের প্রথম পর্যায়ের সংরক্ষণ কাজ শেষ হওয়ার পর, প্রাচীন তিব্বতের স্থানীয় সরকারের কার্যালয়, কারাগার, কয়েদখানা ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার স্থান, কিছু পুরোহিত কর্মকর্তা ও অভিজাত শ্রেণীর মানুষের বাড়িঘরসহ ১১টি প্রাচীন স্থাপত্য উন্মুক্ত করা হয়। এটি অনেক পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পুতালা ভবনের তুষার শহরের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ইয়াং চিন জুও গা বলেছেন—

ধাপে ধাপে পুতালা ভবন মহামূল্য সম্পদ মিলনায়তন, বৌদ্ধশাস্ত্র ছাপার পশ্চিম ছাপাখানা ও খাদ্যগুদামের ধ্বংসাবশেষসহ তিনটি প্রাচীন স্থাপত্য উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সবকিছু পূর্ণাঙ্গ করে তোলা হয়েছে। নতুন নির্মিত তুষার শহর প্রদর্শনী অঞ্চলের আসল চেহারা পুরোপুরি বজায় রয়েছে এবং কয়েকটি প্রাণবন্ত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রদর্শনী হল খুলে সেখানে নতুন তিব্বতের দুনিয়া কাঁপানো পরিবর্তন দেখানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ১ লাখ পর্যটককে এখানে স্বাগত জানিয়েছি।