পাকিস্তানের ১৮ ফেব্রুয়ারির পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে জানা গেছে, পাকিস্তান পিপলস পার্টি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেলেও নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় পিপিপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না।
পাকিস্তানের তথ্য মাধ্যমগুলোর ১৯ ফেব্রুয়ারীর খবরে জানা গেছে, প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, পিপিপি জাতীয় পরিষদের ৮৭টি আসন পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন পেয়েছে ৬৬টি আসন। পাশাপাশি সাবেক ক্ষমতাসীন পার্টি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কিউ পেয়েছে মাত্র ৩৮টি আসন। পাকিস্তানের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে যৌথ সরকার গঠনের সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে পিপলস পার্টি অন্য পার্টির সঙ্গে একটি কোয়ালিশন বা যৌথ সরকার গঠন করতে পারবে।
১৯ ফেব্রুয়ারী পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগ-এন নির্বচানের ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। মুসলিম লীগ-কিউ-এর চেয়ারম্যান চৌধুরী সুজ্জাত এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন। একই দিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ বলেছেন, যে রাজনৈতিক দলই সরকার গঠন করুক না কেন তিনি তার সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করতে চান।
জানা গেছে, পাকিস্তানের এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত হতে পারে। এর পর, পাকিস্তান ১ মার্চের আগেই নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করতে হবে। পাশাপাশি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে, পাঞ্জাব প্রদেশের বৃহত্তম পার্টি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন, সিন্ধু প্রদেশের বৃহত্তম পার্টি হচ্ছে পিপলস পার্টি, বেলুচিস্তান প্রদেশের বৃহত্তম পার্টি হচ্ছে মুসলিম লীগ-কিউ এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বৃহত্তম পার্টি আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টি। চারটি প্রদেশের মধ্যে সিন্ধু প্রদেশে পিপলস পার্টি নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়েছে বলে সরকার গঠন করতে পারবে এককভাবে। অন্য তিনটি প্রদেশে কেউ নিরংকুশভাবে বিজয়ী না হওয়ায় যৌথভাবে সরকার গঠিত হবে।
ফলাফল অনুযায়ী পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ-এন এবং মুসলিম লীগ-কিউ-প্রাপ্ত আসন অনুযায়ী প্রথম তিনটি দল। পাকিস্তানের জনগণ এখন প্রতীক্ষায় রয়েছে পিপিপি কোন পার্টির সঙ্গে যৌথভাবে সরকার গঠন করে তা দেখার জন্য। এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, সাবেক ক্ষমতাসীন পার্টি মুসলিম লীগ-কিউ-এর সঙ্গে পিপলস পার্টি যৌথ সরকার গঠন করতে পারে। তবে ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায়, পিপলস পার্টির যুগ্ম-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি ইসলামাবাদে এক সংবাদ ব্রিফিং-এ বলেছেন, পিপলস পার্টি সাবেক ক্ষমতাসীন পার্টির সঙ্গে সহযোগিতা করবে না। এ কারণে তথ্য মাধ্যমগুলোও মনে করছে, পিপলস পার্টির মুসলিম লীগ-এন-এর সঙ্গে যৌথ সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আসলে ১৯ ফেব্রুয়ারীর সংবাদ ব্রিফিং-এ জারদারি জানিয়েছেন, পিপলস পার্টি মুসলিম লীগ-এন-এর নেতা নওয়াজ শরিফের সঙ্গে নতুন সরকার গঠনের ব্যাপর টেলিফোনে আলোচনা করেছে। ২০ ফেব্রুয়ারী তারা সাক্ষাত্ও করেছেন। জারদারি বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ দেশের গণতন্ত্র সংহতকরণের জন্য অনুকূল হবে। মুসলিম লীগ-এন প্রেসিডেন্ট মুশাররফকে অভিশংসিত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ দিন নেওয়াজ শরিফ লাহোরে একটি সংবাদ সম্মেলনে মুশাররকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদ ত্যাগ করার দাবিও জানিয়েছেন। মুশাররফের প্রতি সুতরাং মুসলিম লীগ-এন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন না করলে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বেড়ে যাওয়ার বড় ধরনের আশংকার মুখে পড়বে পাকিস্তান।
|