আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের প্রভাব বাড়ার সংগে সংগে অধিক থেকে অধিকতর বিদেশী নাগরিক কাজ ও জীবনযাপন করতে চীনে এসেছেন ।
মাইচিয়েলের বয়স ৩৮ বছর । তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওয়ের অনুষ্ঠান প্রচার বিভাগের কর্মী ছিলেন । তিনি ১৬ বছর ধরে গণ মাধ্যমের কাজে নিয়োজিত ছিলেন । ২০০৭ সালের জুলাই মাসে তিনি তার স্ত্রীকে সংগে নিয়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে কাজ করার জন্যে পেইচিংয়ে আসেন । এখন পর্যন্ত তিনি এ বেতারের তামিল বিভাগে ৬ মাস ধরে কাজ করছেন । তার চোখে চীনের রাজধানী পেইচিং একটি রহস্যময় শহর । এখানকার বুনিয়াদি ব্যবস্থা বেশ ভালো । পেইচিংবাসীরা খুব মিশুক । পেইচিংয়ের আবহাওয়াও মন্দ নয় । ভারতের মত অত গরম নয় । তাই তিনি এখানকার আবহাওয়াকে পছন্দ করেন । চীন আন্তর্জাতিক বেতারের তামিল বিভাগে সহকর্মীরা সস্নেহে তাকে ছোট মাইচিয়েল বলে ডাকেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে তার জীবন সম্পর্কে বলেছেন ,
৬ মাস আগে আমি এখানে এসেছি । সময় স্বল্প হলেও আমি এখানে সুখে দিন কাটিয়েছি । পাশাপাশি এ অল্প দিনের মধ্যে আমি চন্দ্রোত্সব , জাতীয় দিবস ও নববর্ষের মত চীনের বেশ কয়েকটি উত্সব উপভোগ করেছি । এসব উত্সবের আনন্দমুখর পরিবেশ গভীরভাবে আমাকে অভিভূত করেছে ।
চীনে বেশি দিন না আসলেও মাইচিয়েলের কাছে চীনের উত্সবগুলো অচেনা কিছু নয় । তিনি মনে করেন , চীনের ঐতিহ্যিক উত্সব – বসন্ত উত্সব চীনের চান্দ্র বর্ষের সূচনার প্রতীক । এ উত্সব সবার জন্যে কল্যাণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও বয়ে আনে । পাশাপাশি চীনারা বসন্ত উত্সবের মাধ্যমে বসন্ত মৌসুমের আগমন উদযাপন করেন । ভারতে প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে লোকজন তাদের বাম্পার ফলন উত্সব পালন করেন । এ উত্সব অনেকটা চীনের বসন্ত উত্সবের মত । বাম্পার ফলন উত্সব পালনের সময় লোকজন প্রচুর ফলন ও কল্যাণ কামনা করেন ।
চীনের নানা ধরণের উত্সব সম্পর্কে আগ্রহশীল হওয়ার পাশাপাশি মাইচিয়েল চীনাদের জন্মের সংগে সম্পর্কিত ১২টি প্রাণীর প্রতিও তার গভীর আগ্রহ রয়েছে । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , এ বছর তার বয়স ৩৮ বছর । তার জন্মের জন্যে মুরগীর সংগে সম্পর্কিত । তিনি রসিকতার সংগে বলেন , এ বছর হলো ইদুর বর্ষ । তাই ইদুর এখন অত্যন্ত তত্সপর । এ বছরে তার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি অনর্গল কথা বলতে থাকেন । পেইচিংয়ের অনেক স্থানে তিনি এখনো যান নি । সময় হলে তিনি পেইচিংয়ের লন্ঠন উত্সবে অংশ নিতে চান । তিনি চীনের ঐতিহ্যিক উত্সবের অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ইচ্ছুক । তিনি বলেন ,
পেইচিংয়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় আমি ভ্রমণ করতে চাই । যেমন মহামাময় থিয়ান আন মেন মহাচত্বর , পাতালিং মহাপ্রাচীর , মনোরম গ্রীষ্মপ্রাসাদ , অসাধারণ স্থাপত্যের পুরনো রাজপ্রাসাদ , রহস্যময় স্বর্গ পূজা বেদী , সুগন্ধী পাহাড় এবং বিখ্যাত তাও ধর্মের পাই ইয়ুন মন্দির ।
অবশ্য নতুন বছরে মাইচিয়েলের পরিকল্পনা এতে সীমাবদ্ধ নয় । তিনি চীনা ভাষাও শিখতে চান । তামিল ও ইংরেজী ভাষায় তার বেশ দখল থাকলেও চীনা ভাষা শেখা তার পক্ষে সহজ কথা নয় । তাসত্বেও তিনি কঠোন চীনা ভাষা আয়ত্ত করতে বদ্ধপরিকর । তিনি বলেন , আগ্রহ থাকলে চীনা ভাষা যত কঠিন হোক না কেন , তিনি তা শিখে নিতে পারবেন ।
নতুন বছরে পেইচিংয়ের ঐতিহ্যিক উত্সব ও দর্শনীয় স্থান উপভোগ করে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন । তবে এতে তিনি সন্তুষ্ট হন নি । তার জন্যে আরো আনন্দদায়ক ব্যাপার হচ্ছে এই যে , এ বছর পেইচিং অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠানের সময় তিনি এখানে নানা ধরণের চিত্তাকর্ষক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে পারবেন । বিশেষ করে তিনি লক্ষ্য করেছেন , পেইচিং পৌর সরকার এবারের অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠানের জন্যে কত নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে । তিনি বলেন ,
এ বছর হচ্ছে চীনের অলিম্পিক বর্ষ । আমার বিশ্বাস , চীন অবশ্যই একটি সাফল্যজনক অলিম্পিক গেমস আয়োজন করতে পারবে । পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলাকালে তার সেবার জন্যে আমি সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো । চীনকে আরো ভালোভাবে জানা এবং অলিম্পিক গেমসের সেবার জন্যে আমি পেইচিংয়ের কিছু সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গিয়ে চীনা জাতির সংস্কৃতিক ও ইতিহাস অনুভব করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি ।
বর্তমানে পেইচিংয়ের পাই থা মন্দির , অলিগলি , বড় ঘন্টা মন্দির , থান থোও মন্দির ও নিউ চিয়ে রাজপথ মাইচিয়েলের ভ্রমণের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে । চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে মাইচিয়েলের উপলব্ধি তার চীনা সহকর্মী ও বন্ধুদের ভালোবাসা লাভ করেছেন । মিস তিং তিং মাইচিয়েল সম্পর্কে বলেন ,
মাইচিয়েলের চেহারা বেশ ভালো । তিনি আমাদের সংগে বেশ বন্ধুভাবাপন্ন । আমরা সবাই তাকে পছন্দ করি ।
অবসর সময় মাইচিয়েল ভ্রমণের পাশাপাশি গান গাইতেও পছন্দ করেন । তিনি মাঝেমধ্যে অফিসে বসে ভারতের কিছু কিছু গান গেয়ে থাকেন । আমাদের সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় তিনি সবেমাত্র শেখা " পিচের ফুল ফুটেছে" নামে একটি চীনা গান গেয়েছেন ।
সাবলীল চীনা ভাষা ও আনন্দময় গানের সুর চীনে মাইচিয়েলের সুখী জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমরা তার গানের সুরের মধ্য দিয়ে নতুন বছরে তার শুভকামনা ও কল্পনা শুনতে পেয়েছি । যদিও এ বছর বহ চীনা সহকর্মীদের মত তিনিও ছুটির দিনে দেশের বাড়িতে যেতে পারেন নি , তবুও তিনি পেইচিংয়ে থেকে চীনের ঐতিহ্যবাহী ও আনন্দদায়ক বসন্ত উত্সব পালন করেছেন । তার জন্যে বাড়িতে ফিরার চেয়ে এর তাত্পর্য কম নয় ।
আমাদের সংবাদদাতার সাক্ষাত্কারের শেষ পর্যায়ে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের তামিল বিভাগের বিদেশী কর্মী মাইচিয়েল দেশের বাইরে অধ্যয়ণরত ও কর্মরত চীনা নাগরিকদের উদ্দেশ্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছেন । তিনি বলেন ,
ইদুর বর্ষের শুভেচ্ছা জানাই ।
|