আজকের ভিন দেশির চোখে অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে একজন ভারতীয় যুবকের পরিচয় করিয়ে দেবো । তাঁর নাম প্রিন্স। তিনি এখন চীনের আন হুই প্রদেশের রাজধানী হো ফেই শহরের একটি শরীর চর্চা কেন্দ্রে ইউগা শেখান ।
৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতে বৌদ্ধ পন্ডিতরা দীর্ঘসময় ধরে নির্জন বনে সাধনা করতেন এবং একাকীত্ব জীবনে প্রকৃতির অজানা পরিবেশকে উপভোগ করতেন । তাঁরা প্রকৃতির চলমান পরিবেশের সকল নিয়ম মানুষের প্রতি পরীক্ষা করে ক্রমেই স্বাস্থ্য রক্ষা ও সমন্বয় এবং চিকিত্সার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছেন । হাজার হাজার বছরের গবেষণা ও তাকে কাজে লাগানোর অভিজ্ঞতা থেকে তারা ইউগা উদ্ভাবন করেছেন ।
ইউগা চর্চা করা শরীর এবং আত্মার জন্য খুব সহায়ক হয় বলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানেই ইউগা শেখার উচ্ছ্বাস দেখা যায় । চীন এসব দেশের মধ্যে অন্যতম । ইউগা পরিবারে বড় হয়েছে বলে চীনের আন হুই প্রদেশের রাজধানী হো ফেই শহরের একটি শরীর চর্চা কেন্দ্র প্রিন্সকে ইউগা শিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছে । প্রিন্স বলেন :
ছোটবেলায় যখন আমার দাদা ইন্সটিটিউটে ইউগা শেখাতেন , তখন আমি সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকতাম । আমার দাদা হলেন আমার দেশের ইউগা ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি এখন প্রয়াত । ১৪ বছর বয়সে আমি ইউগা শিখতে শুরু করি । যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বাণিজ্য বিষয়ে লেখাপড়া করেছি । তবুও ইউগা সম্পর্কে আমার গভীর মনের ভালোবাসা কখনই হারিয়ে যায় নি । তাই আমি দাদা ও আমার বাবা'র সঙ্গে ইউগা শেখা চালিয়ে গেছে । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর আমি ইউগা ইন্সটিটিউটে গিয়ে ইউগা শিখেছি ।
যদিও এখন প্রিন্সের বয়স মাত্র ২৩ বছর । তবুও তাঁর ইউগা শেখার ইতিহাস প্রায় দশ বছরের । ভারতের চারটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ইউগা প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন । তিনি বলেন , ইউগা চর্চা করা এবং সুফল পাওয়ার প্রধান কারণ হল ইউগার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ।
চীনে আসার আগে প্রিন্স ভারতে ইউগা শেখাতেন । তাঁর স্বপ্ন হল ইউগার মর্মকে বিশ্বে জনপ্রিয় করা । এক বছর আগে তিনি চীনের পেইচিং ও হো ফেই শহরের দু'টি আমন্ত্রণ পেয়েছেন । তখন প্রিন্সের ভালো বন্ধু সনী হো ফেই শহরের একটি ইউগা কেন্দ্রে কাজ করছেন বলে অবশেষে প্রিন্স হো ফেই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । প্রিন্স বলেন :
আমার বাবা আমাকে বলেন , বিদেশে তুমি শুধু নিজের পক্ষ থেকে কাজ করবে তাই নয় , তুমি ভারতের ভাবমূর্তিও প্রকাশ করবে । তাই ভারতের ভাবমূর্তির ক্ষতিহয় এমন কাজ করবে না । তা ছাড়া , অন্যকে শরীর চর্চার একটি পদ্ধতি হিসেবে ইউগা শেখানোর চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল , অন্যকে ইউগার অবিমিশ্র মর্ম শেখানো ।
হো ফেই'র এই ইউগা কেন্দ্রের ম্যানেজার ইয়ে পিং প্রিন্সের ভূয়সী প্রশংস করে বলেছেন :
প্রিন্স খুব সহজসরল একজন ছেলে । কাজের ক্ষেত্রে খুব পরিশ্রমী , কখনই দেরি করে না এবং সত্যিই অসুস্থ্যতা ছাড়া সে খুব কম ছুটি নেয় ।
তাইতো সবার কাছে প্রিন্স কাজের ক্ষেত্রে খুব দৃঢ় এবং তার মন খুব পরিস্কার । ইউগা কেন্দ্রের পরিচালক ইয়ে পিং একটি উদাহরণসহ সংবাদদাতাকে প্রিন্সের সহজসরল জীবনের কথা জানিয়েছেন , তিনি বলেন :
সে প্রতিদিন সকালে কলা ও দূধ খায় । আমার মনে হয় এক বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রিন্স ৩০০ দিনই ডিম ভাজা ভাত খায় । আমি তাকে জিজ্ঞেস করি , আজ তুমি কি খেয়েছো ? সে বলে , ডিম ভাজা ভাত , পরের দিন আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করি , সে বলে , ভাত ভাজা ডিম ।
প্রিন্সের দোভাষী কাও রুই ফেংও মনে করেন , প্রিন্সের জীবন এত সহজ , তা চিন্তা করতে পারা যায় না ।
তাদের জীবন খুব সহজসরল । কারণ , যারা ইউগা শেখে , তারা খুব নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে সহজ জীবনাচরণ পছন্দ করে । তারা মনে করে তা হল মন ও শরীর চর্চার একটি পদ্ধতি ।
যদিও জীবনে প্রিন্স খুব উষ্ণহৃদয় এবং উত্সাহী একজন ছেলে । তবে ইউগা ক্লাসে তিনি খুব কঠোর । কাও রেই ফেং সংবাদদাতাকে বলেন :
তিনি সবসময় বলেন , আমি শিক্ষক । শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্ক ঠিক পিতা ও সন্তানের সম্পর্কের মত । পিতার সন্তানকে কঠোরভাবে শেখাতে হয় । ছাত্রছাত্রীদেরও এভাবে মনে করতে হয় । তাই ক্লাসে একজন পিতা হিসেবে প্রিন্স সব ছাত্রছাত্রীদের ভালো ইউগা শেখানোর জন্য দায়িত্বশীল ।
নিজের দেশ ছেড়ে চীনে আসা প্রিন্স নিজের বাড়ির আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কথা খুব মনে করেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , ইন্টার্নেটের মাধ্যমে তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকেন । প্রিন্স ও ইউগা কেন্দ্রের মধ্যে কর্মচুক্তি চলতি বছরের শেষ নাগাদ । তিনি বলেন , সম্ভব হলে আরো কিছু দিন তিনি চীনে থাকতে চান । তিনি অন্য ইউগা শিক্ষক বন্ধুদেরকে চীনে আসার আমন্ত্রণও করবেন ।
|