প্রতি বছর বসন্ত উত্সবের সময় চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্র নানা বিষয় বৈচিত্র্যের বিশেষ বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচার করে। চীনের কোটি কোটি দর্শক তা দেখে মুগ্ধ হন। চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান বিশেষ প্রশংসা পায়। এ বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত সান্ধ্য অনুষ্ঠানের নাম দেয়া হয়েছিল 'বসন্ত বিহার'।
'বসন্ত, তুমি ভালো আছো?' এই গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সান্ধ্য অনুষ্ঠানটি। আনন্দময় সংগীতের মধ্যে ৫০টি সবুজ রঙের হাওয়া কল আস্তে আস্তে ঘুরে বাতাস ছড়িয়েছে। উষ্ণ ও তরতাজা বসন্তের অনুভূতি জাগানোর জন্যই এ আয়োজন। সুন্দর কাপড় পড়া মেয়েরা গান গেয়ে আমাদের কাছে হেঁটে এসেছেন। তাদের গান ও নৃত্য বসন্ত বাতাসের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।
গানের কথা এমন, 'তুমি ভালো আছো? সাদা মেঘ, সবুজ ঘাস ও নীল আকাশ কি উজ্জ্বল? মৃদুমন্দ বাতাস, ঝিরঝিরে বৃষ্টি ও নীল আকাশ, তুমি ভালো আছো? আমার তরুণ প্রেমের স্বপ্ন কতো যে রোমান্টিক। তুমি ভালো আছো? আমার পাহাড় ও নদনদী ঘেরা জন্মভূমি। বসন্ত আমাকে আনন্দ দিয়েছে, বাড়িয়ে দিয়েছে আমার আশা। বসন্তকাল, আমাকে শক্তি ও প্রেরণা দিয়েছে।'
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বসন্ত উত্সবের সান্ধ্য অনুষ্ঠান সবসময় প্রশংসা পায়। এ বারও তাই। সান্ধ্য অনুষ্ঠানটির মধ্য দিয়ে একটি লাল মোমবাতির মতো শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষা নানা আন্তরিক মনোভাব প্রকাশিত হয়। এবারের অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল। দেশি-বিদেশি প্রাচীন ও সমসাময়িক জনপ্রিয় সব কবিতা যোগ করে পর্বগুলো সাজানো হয়েছে। যেন জীবন ও কবিতার মধ্যে মেলবন্ধ তৈরি করে এর বিশেষ সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে।
এখন আপনারা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব 'বসন্তকালের উদ্দেশ্য' এর গান 'শত ফুল ফুটতে দাও' শুনছেন। শিল্পী চাং ইয়ে গানটি গেয়েছেন। গানের কথা এমন, 'এক ফুল এক স্বপ্নকে আকাশে উড়তে দাও। হাজার কল্পনাকে পাখা দিয়ে সাহসের সঙ্গে ফুলের মতো ফুটতে দাও। উজ্জ্বল পৃথিবীতে বসন্তের আলো আবার আসছে। সুখ ফুলের মতো। আমি শত ফুলের মধ্যে একটি আনন্দমুখর ফুল হতে চাই, আমি শত ফুলের সঙ্গে গান গাইতে চাই। আমি বসন্ত পৃথিবীতে ফুটতে চাই।' চাং ইয়ের মিষ্টি কন্ঠের গানের সঙ্গে নৃত্যরতা নারী শিল্পীরাও যেন একেকটি মুখরিত ফুলের ফুটে ওঠেন। তাদের নৃত্য ও প্রস্ফূটিত ফুলের মতো বসন্তের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্যের পরিণত হয়েছে।
বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীনাদের পারিবারিক পুনর্মিলনী উত্সব এবং স্বজনদের আবেগ-অনুভূতি বিনিময়ের উত্সব। ফলে এবারের সান্ধ্য অনুষ্ঠানে 'জন্মভূমি' ও 'স্বজন'-এর উদ্দেশ্যে। বিখ্যাত গায়িকা থান চিং এর গাওয়া 'সুখ ছড়ানো' গানটি শুনুন। গানে প্রেমে পড়া মানুষের সুখানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।
গানের কথা এমন, 'আমি নিজের চোখ খুলতে চাই না। তুমি আমাকের বল দাও, আকাশ আর কতো দূরে। তারারা আমার জন্য এ মুহুর্তকে থামিয়ে রাখো। যাতে আমি তোমার আলিঙ্গনের আবেশে ডুবে থাকি। ভালোবাসায় আমরা আত্মহারা হয়েছি। আমি চাঁদের কাছে প্রার্থনা করি। তারাগুলো তা দেখেছে। আমার মন জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সুখ।'
সান্ধ্য অনুষ্ঠানে কয়েকজন বিদেশী শিল্পীও মঞ্চে উঠে নাচ গানের মাধ্যমে চীনা বন্ধুদেরকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাপানের সুরকার তানিমুরা সিনজি আমাদের জন্য একটি অতি পরিচিত গান গেয়েছেন। গানের নাম "তারকা"। গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের প্রথম দিকে তিনি চীনে এই গান গেয়েছিলেন এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে এই গানের সুরে সুরে আমরা আবার অতীতে ফিরে যেতে পেরেছি।
গানের কথা এমন, 'কাঁটাঝোপ পেরিয়ে যেতে পেরে শান্তি পেয়েছি। আগাছায় ভরা জংলি জায়গা পেরিয়ে আমার দুই পা কাদা ভরা। আমি ঝোড়ো বাতাস ভয় করি না। আমি বিশ্বাস করি, আঁধারের পর ভোর আসবে। উজ্জ্বল তারারা আমার সঙ্গী। তারার আলোয় আমি মনের আবেগে আদর্শ খুঁজে বেড়াই। স্বপ্ন পূরণের পথ যতোই বন্ধুর হোক, আমার ভয় নেই। আগামীকাল কে আমাকে পথ দেখাবে, তারকা।'
অনুষ্ঠানে আত্মীয় নিয়ে একটি বিশেষ পর্ব ছিল। এখন শুনুন এ অংশের একটি গান 'সেই হলো আমি'। গানের কথা লিখেছেন সিয়াও কুয়াং, সুর করেছেন গু চিয়ান ফেন, গেয়েছেন ছুই চিং হাও।
গানের কথা এমন, আমার জন্মভুমির ছোট্ট নদী। নদীর পাশে জলচক্র কিচরিমিচির করে গান গাইছে। ও, মা, যদি একটি ফেনিল ঢেউ তোমার কাছে মৃদু হাসে, সেটা আমি। আমি বাসার রান্নার ধোঁয়াকে মনে করি, আরো গলির বাজারে যাওয়া গরুর গাড়ি। ও, মা, যদি একটি বাঁশি তোমার জন্য সুর তোলে, সেটা আমি।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|