থাংখার বিষয়বস্তু বৈচিত্র্যময় । সেগুলি ধর্ম , রাজনীতি , সংস্কৃতি , চিকিত্সাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত । আগে থাংখা সাধারনতঃ তিব্বতী ধর্মের মন্দির ও ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে টাঙানো হতো । গত কয়েক বছর ধরে থাংখার প্রভাব দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে । নেপাল ও থাইল্যান্ডসহ বৌধ ধর্মের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বেশি আছে এমন দেশগুলোতে থাংখার প্রভাব সর্বত্রই দেখা যায় । নিউইয়র্ক , সুইজারল্যান্ড , প্যারিস ও অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলেও থাংখা প্রদর্শিত হয়েছে । থাংখা বিভিন্ন দেশের ভূয়সী প্রশংসা ও মনোযোগ পেয়েছে । থুংরেন জেলার প্রসিদ্ধ চিত্রকর সিহোতাও প্যারিসে বিদেশী শিল্পী ও দর্শকদের জন্য থাংখা ছবি আঁকার কৌশল প্রদর্শন করেছেন । তিনি বলেন ,
থাংখা অনন্য এক ধরনের শিল্পকলা । তার বিষয়বস্তু ধর্মের বৈশিষ্ট্যে ভরপুর । এটা মানবের সুষমতা , সুস্থতা ও সুসংহতির প্রকাশ ।
থুংরেন জেলার উথুংসিয়াশি থাংখার অন্যতম উত্পত্তি স্থল । সেখানে বহু পরিবার যুগ যুগ ধরে থাংখা তৈরি করে থাকে । সংবাদদাতা সেরিং দাম্জুব নামে একজন অল্পবয়সী থাংখা চিত্রকরের সাক্ষাত্কার নেন ।
সেরিং দাম্জুবের বয়স ২৮ বছর । ৭ বছর বয়সে তিনি উথুংসিয়াশি মন্দিরের একজন সন্ন্যাসীর কাছ থেকে থাংখা তৈরির প্রকৌশল শিখে নিয়েছেন । সেরিং দাম্জুবের থাংখা আঁকার নৈপুণ্য এখন অনেক উন্নত হয়েছে ।
সেরিং দাম্জুবের বাড়ি থেকে থাংখা আঁকার জন্য ব্যবহার্য রঙের হাল্কা গন্ধ মাঝে মাঝেই বেরিয়ে আসছিল । বাড়ির একটি কক্ষে বেশ কিছু মনোরম থাংখা ঝুলানো ছিল । বাড়িতে থাংখা তৈরির জন্য বিশেষ একটি কক্ষ নির্দিষ্ট রয়েছে । থাংখা তৈরির জন্য একটি শান্ত পরিবেশের প্রয়োজন । সেখানে চিত্রকরকে যথাসাধ্য আত্মনিয়োগ করতে হয় । আবেগ ছাড়া তার সৃষ্টির কাজ ব্যাহত হবে । সেরিং দাম্জুবের প্রথম শিক্ষক ছিলেন তার বাবার জ্যেষ্ঠ ভাই । তার বাবা ও আরেকজন আত্মীয়ও থাংখা তৈরিতে নিয়োজিত ছিলেন । সুতরাং তার বংশের থাংখা তৈরির বয়স অনেক পুরনো । তিনি ১৫ বছর বয়সে থাংখা ছবি আঁকতে পারতেন । থাংখা শেখা ও তৈরির অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সেরিং দাম্জুব বলেন ,
বিশ্বে থাংখা তৈরির কৌশল খুব সুবিদিত । এই কৌশল নিয়ন্ত্রণের পর তিনি যেমনি এই কৌশল সম্প্রসারিত করতে পারবেন , তেমনি তিনি আরো বেশি আয়ও করতে পারবেন ।
থুংরেন জেলায় সেরিং দাম্জুবের মতো বেশ কিছু লোক থাংখা তৈরির কৌশল শিখেছেন । থুংরেন জেলা ছিল দারুণ দরিদ্র । থাংখা তৈরির কৌশলের মাধ্যমে এ জেলার বহু শিল্পী বেশি আয় করার পাশাপাশি এ অঞ্চল এখন সচ্ছল হয়ে উঠেছে । তিনি বলেন ,
গত কয়েক বছরে থাংখা তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে তিনি সচ্ছল হয়েছেন । তিনি দু'টো মোটর গাড়ি কিনেছেন এবং একটি থাংখা দোকান দিয়েছে । তিনি ও তার পরিবার পরিজনরা সুখী জীবনযাপন করছেন । ৪জন শিশ্য তার কাছ থেকে থাংখা তৈরির কৌশল শিখছেন ।
আগে থাংখা তৈরির কৌশল বংশপরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা হতো । অথবা কেউ কেউ মন্দিরের সন্ন্যাসীদের কাছ থেকে এই কৌশল আয়ত্ত করতেন । থুংরেন অঞ্চল এখন দিন দিন উন্মুক্ত হয়ে উঠছে । বিশ্বে থাংখা কৌশলের আরো জনপ্রিয়তা পাওয়া উচিত । গত কয়েক বছরে ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার ও থাংখা শিল্পীদের যৌথ উদ্যোগে থুংরেন জেলার একটি প্রাথমিক স্কুলে থাংখা কৌশল প্রশিক্ষণ কোর্সও চালু হয়েছে । এই স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন ,
এই স্কুলের চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর প্রত্যেক ছাত্রের জন্য সপ্তাহে দু'ঘন্টা থাংখা কৌশল শেখানোর ব্যবস্থা করা হয় ।
এখন থুংরেন জেলায় ২ হাজারেরও বেশি শিল্পী থাংখা তৈরির কাজ করছেন । থাংখা তৈরির কৌশল সম্প্রসারণের জন্য ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার একটি থাংখা কোম্পানি স্থাপন করেছে । থাংখা শিল্পীদের উদ্যোগে একটি থাংখা সমিতিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । থাংখা তৈরির কৌশল দেশ-বিদেশের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ।
(থান ইয়াও খাং) 1 2
|