শ্রোতা বন্ধুরা, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন ইনস্টিটিউট আনুষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের প্রথম উপাচার্য হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুবিখ্যাত আইন বিদ খ্যাতিমান অধ্যাপক জেফ্রি এস লেহম্যান । আগে অধ্যাপক লেহম্যান ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এল ভি ওয়াই লীগের সাবেক উপাচার্য হিসেবে চীনে এসে তার শিক্ষাদানের কী কী কারণ রয়েছে? আজকের শিক্ষার আলো অনুষ্ঠানে লেহম্যানের সেই গল্পই আপনাদের শোনাবো আমি আপনাদের বন্ধু লিলু।
অধ্যাপক লেহম্যান যুক্তরাষ্ট্রের মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিদ্যা ইনস্টিটিউটের উপাচার্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিদ্যা ইনস্টিটিউটের উপাচার্যদের ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করতেন তিনি। ২০০৩ সালে অধ্যাপক লেহম্যান কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। দায়িত্ব গ্রহণের সময় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিকায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি বহু ক্ষেত্রের সংস্কার ইতিবাচকভাবে করতেন।
১৯৯৮ সালে অধ্যাপক লেহম্যান প্রথম চীনে এসেছিলেন। ২০০৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেন। এর পাশাপাশি তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় - কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে যোগ দেন এবং পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গভীর মৈত্রীর সংযোগ গড়ে তুলেন। তিনি বলেন, দশ বছর আগে তার চীন সফরের তুলনামূলক চিত্র হিসেবে প্রতিবারই চীনে এসে তিনি ভিন্ন অনুভূতি উপলব্ধি করেন। তিনি বলেছেন,(১)
প্রতিবারই চীনে এসে আমি চীনের বিরাট পরিবর্তন দেখতে পাই। আজকের পেইচিং একটি খুবই সমৃদ্ধ শহর। এখানে বেশ সুন্দর সুন্দর নতুন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যেমন জাতীয় থিয়াটর,নতুন কেন্দ্রীয় টেলিভিশন এবং জাতীয় অলিম্পিক স্টেডিয়ামসহ সব পরিবর্তন আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে। তবে চীনাদের পরিবর্তন আমি অত্যন্ত বিস্মিত বোধ করি। ১৯৯৮ সালে আমি চীনে আসার সময় চীনাদের বুদ্ধি ও উন্মুক্তকরণের মনোভাবকে দেখে গেছি। এখন চীনারা আরো উন্মুক্ত হয়েছে। হয়েছে আরো অতিথিপরায়ন ও বন্ধুপ্রতীম। তারা আমাকে চীনকে আরো ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে।
উপাচার্য লেহম্যান চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী। তিনি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আইন বিদ্যার গবেষণা ও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা ক্ষেত্রের সহযোগিতা ও বিনিময় ত্বরান্বিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারই উদ্যোগে ২০০৫ সালে পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় ও পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে চীন ও মার্কিন আইন ও নীতি গবেষণা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। একজন স্রষ্টা হিসেবে অধ্যাপক লেহম্যান এই কেন্দ্রের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি কেন্দ্রের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। অধ্যাপক লেহম্যানের সহকর্মী মাদাম রোলিয়া বলেছেন, (২)
তিনি একজন মহান ব্যক্তি। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। যেমন আমাদের চীন -মার্কিন আইন ও নীতি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রথম দিকে টাকা ছিল না। তখন তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেই টাকা দিয়েছেন।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাবার পর আরো অনেক ভালো ভালো সুযোগ ছিল। তবে তিনি পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিদ্যা ইনস্টিটিউটের উপাচার্যের দায়িত্বকেই বেছে নেন। আসলে এই ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার আগে থেকে অধ্যাপক লেহম্যান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বিনিময় করতেন। তিনি বলেছেন, (৩)
এই দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি গর্ব বোধ করি। চীনের আইন বিদ্যা শিক্ষার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। এর আগে আমি মনে করতাম, অবসর নেয়ার আগে আমি যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সে কাজ করবো। কারণ এ দু'টি দেশের আইন বিদ্যা শিক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন হয়েছে। দুটি দেশের আইন ব্যবস্থায় কম পরিবর্তন এসেছে। তবে চীনে আইন বিদ্যা শিক্ষা দ্রুত উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে চীন আন্তর্জাতিকায়নের দিকে এগুচ্ছে। আমি মনে করি, চীন আইন বিদ্যা শিক্ষা সংস্কারে পথিকৃতে পরিণত হবে। আমি এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পেরে খুবই আনন্দিত।
সাক্ষাত্কার শেষ দিকে অধ্যাপক লেহম্যান আমাদের সংবাদদাতাকে তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, (৪)
আমি আশা করি, পরবর্তী কয়েক বছরে আমি চীনের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবো। আমি চেস্টা করে যাবো। আমাদের পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিদ্যা ইনস্টিটিউট স্বীকৃতি পাবে। এর ফলে চীন ও চীনাদের উন্নয়নের দিকটি আরো সম্প্রসারিত হবে। আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমি আশা করি, সুযোগ পেলে আমি চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কারুশিল্প ,সংগীত ও ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয় আরো বেশি শিখতে পারবো, যাতে চীনকে আরো জানতে ও বুঝতে পারি।
|