৮ জানুয়ারি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ মধ্য-প্রাচ্যে আটদিনব্যাপী সফর করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বুশ এই প্রথম বারের মতো ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর গেলেন।
২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে ক্ষমতাসীন হবার পর বুশ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যায় তার পূর্বসূরী বিল ক্লিনটনের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনেন। তিনি চেয়েছিলেন সমস্যার সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলো নিজে থেকেই সমস্যার সমাধান করুক।
৯/১১ ঘটনার পর, ইসরাইল বহু বার 'সন্ত্রাসবাদ দমনের অজুহাতে' ফিলিস্তিনীদের ওপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার একতরফাভাবে বলে এসেছে যে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, পাশাপাশি ফিলিস্তিনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে সন্ত্রাসী তত্পরতার ওপর হামলার তীব্রতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এসেছে এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সন্ত্রাসদমন তত্পরতা যথেষ্ট নয় বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বুশ খেলোখুলিভাবে বলেছেন, ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের শর্তেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করবে।
ইরাক যুদ্ধ হবার পর, আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সে অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষের ব্যাপারে উদ্যোগ কিছুটা বাড়িয়েছে। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষে, মধ্য-প্রাচ্য সমস্যার চার পক্ষের প্রতিনিধিরা ধাপে ধাপে তিনটি পর্যায়ে মধ্য-প্রাচ্যের শান্তি রোড-ম্যাপ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু এর পরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে অব্যাহত সংঘর্ষের কারণে শান্তির রোড-ম্যাপ পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়।
২০০৬ সালের জানুয়ারী মাসে, হামাস ফিলিস্তিনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়। হামাস কট্টর অবস্থানে অবিচল থাকার কারণে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ'র কয়েকটি সদস্য দেশসহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাস সরকারের ওপর প্রতিরোধ ও অবরোধ আরোপ নীতি গ্রহণ করে। ফলে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সংঘর্ষ চলতেই থাকে।
ইরাকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-প্রাচ্য নীতি দেশে-বিদেশে চাপের মধ্যে পড়ে। ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করতে পারে যে, আরব দেশগুলোর সমর্থন পেতে চাইলে, যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যার ব্যাপারে অবস্থান সমন্বয় করতে হবে। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বুশ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করবে এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন্ডোলিত্সা রাইসকে এই দায়িত্বে নিয়োগ করা হয়েছে। এর পর, রাইস বেশ কয়েক বার মধ্য-প্রাচ্য অঞ্চল সফর করেন।
২০০৭ সালের ২৭ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক মধ্য-প্রাচ্য শান্তি সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের রাজধানী অ্যানাপোলিসে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল 'অভিন্ন সমঝোতা স্মারক' স্বাক্ষর করে এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে দিয়েছে।
|