যতদূর জানা গেছে, তাতে ১৭ ফেব্রুয়ারী কসোভো খুব সম্ভবত স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যাচ্ছে । এ প্রক্ষাপটে সার্বিয়ার অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদ ১৪ ফেব্রুয়ারী একটি জরুরী সম্মেলনে কসোভোর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে । এর পাশাপাশি বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কসোভোর স্বাধীনতা প্রশ্নে মতভেদ তীব্রতর হয়েছে । সাবেক ফেডারেল যুগোশ্লাভিয়ার সার্বিয়া প্রজাতন্ত্রের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসেবে কসোভোর স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্খার তীব্র বিরোধীতা করেছে সার্বিয়া ও রাশিয়া । তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন পাওয়ার কারণে কসোভোর স্বাধীন হওয়ার পদক্ষেপ দৃঢ় ও দ্রুততর হয়েছে । চীন আন্তর্জাতিক গবেষণা একাডেমীর ইউরোপীয় ইউনিয়ন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক সিং ইয়ে মনে করেন , চলমান পরিস্থিতিতে কসোভোর স্বাধীনতা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন পাওয়ার কারণে কসোভোর স্বাধীনতা শুধু সময়ের ব্যাপার । কসোভো বহু জাতি অধ্যুষিত বলকান অঞ্চলে অবস্থিত । গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে কসোভোর ৯০শতাংশ আলবেনীয় বংশোদ্ভুত লোক স্বাধীনতার দাবি তোলে, তখন সার্বিয়া সরকার এর তীব্র বিরোধিতা করে । ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র কসোভোতে আক্রমণ চালানোর পর সেখানে জাতিসংঘের অধীনে অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । ২০০৫ সালের শেষ দিকে সার্বিয়া সরকার এবং কসোভোর আলবেনিয়ান কর্তৃপক্ষ কসোভোর চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে আলোচনাশুরু করে, তবে তাতে কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয় নি । গত বছরের শেষ দিকে সর্বশেষ দফা আলোচনা হওয়ার পর কসোভো কর্তৃপক্ষ বারবার আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করবে বলে জানিয়ে দেয় । এদিকে কসোভোর স্বাধীনতার ঘোষণা যতই এগিয়ে আসছে ,যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিযোগিতততোই তীব্র হচ্ছে ।
চীনের সমাজ ও বিজ্ঞান একাডেমীর রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য-এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক চিয়াং ই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র কসোভোর স্বাধীনতাকে সমর্থন করার মূল কারণ হলো বলকান অঞ্চলকে পশ্চিমা দেশগুলোর পেছন দিকের উঠোনে পরিণত করা । স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বলকান অঞ্চলকে তাদের একটি ঘাঁটিতে পরিণত করার জন্য চেষ্টা করে আসছে । সংকট নিরসণের নামে তারা যা করছে, আমি মনে করি , সেটা পশ্চিমা দেশগুলোর লোক দেখানো স্লোগান মাত্র ।
কসোভোর স্বাধীনতার পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন দিলেও তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্নও । কারণ কসোভো একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে, গুরুতর জাতীয় সমস্যায় জর্জরিত ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো একই পথে হাঁটতে পারে । এ সম্পর্কে চীনের ই.ইউ. গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক সিং ইয়ে আরও বলেন, কসোভোর স্বাধীনতা প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মতামত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও চলছে । ই.ইউ.'র মধ্যেই কসোভোর স্বাধীনতা বিরোধী মতামতও রয়েছে । আমরা দেখতে পাচ্ছি, ই.ইউ'র কয়েকটি সদস্য দেশ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা কসোভোর একতরফা স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে না । রাশিয়া কসোভোর স্বাধীনতার তীব্র বিরোধিতা করে আসছে । রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরোভ ১৩ ফেব্রুয়ারী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, কসোভোর স্বাধীনতা একটি ভুল সিদ্ধান্ত । কসোভোর স্বাধীনতাকে সমর্থন করার অর্থ হচ্ছে জাতিসংঘের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা ।
অনেকেই জানেন না বহু বছরের যুদ্ধ ও সংকটের কারণে ইউরোপে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি ধ্বংস হয়েছে । কসোভোর স্বাধীনতা ইউরোপের নিরাপত্তার ভিত্তি ও জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিকে ধ্বংস করবে । রাশিয়ার তীব্র বিরোধিতার কারণ সম্পর্কে চীনের সমাজ ও বিজ্ঞান একাডেমীর গবেষক চিয়াং ই মনে করেন, রাশিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং রাশিয়া বলকান অঞ্চলে ও ইউরোপে তার প্রভাব অটুট রাখতে চায় ।
রাশিয়া ও সার্বিয়ার মধ্যে জাতীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ।ই.ইউ. ও ন্যাটোর ভুমিকার কারণে ইউরোপে রাশিয়া তার ঐতিহাসিক প্রভাব বজায় রাখতে চায় । সে জন্যেই বলকান অঞ্চলকে রাশিয়া তার একটি প্রভাবশালী ঘাঁটি হিসেবে দেখতে চায় । কসোভোর চূড়ান্ত অবস্থান সম্পর্কে চীন মনে করে, সার্বিয়া ও কসোভো উভয়ের অস্থায়ী সরকার একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি খুঁজে বের করবে যা হবে এ সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ।
(ছাও ইয়ান হুয়া)
|