প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, চাষাবাদে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে একটি আধুনিক পদ্ধতি। কৃষি পণ্যের উত্পাদন, বিক্রি, পরিবহণ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রতিটি স্তরে এই প্রযুক্তি দারুণ সহায়ক। এতে বাজারের চাহিদা পূরণ এবং আরো বেশী মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার চীনের কৃষকদের ধনী হওয়ার পথ সুগম করে দিয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের হাইনান প্রদেশের হাইখৌ শহরের কৃষকদের জীবনে তথ্য প্রযুক্তি যে কল্যাণ বয়ে এনেছে সে সম্পর্কে আমি কিছু বলবো।
২০০৫ সাল থেকে হাইখৌ শহর সারা দেশে প্রথমবারের মতো কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নয়ন পরকিল্পনা প্রণয়ন করে এবং বহুমুখী তথ্য নেটওয়ার্ক চালু করে কৃষকদের জন্য নেটওয়ার্কের তথ্য সেবার ব্যবস্থা করে। দু'বছর ধরে কৃষকরা এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তি ও জ্ঞান এবং বাজারের সময়োচিত সেবা ও চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারেন। সময় ও ব্যয় বাঁচানোর পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি কৃষকদের জন্য উত্পাদনের কঠিন প্রযুক্তিগত সমস্যার সমাধান এবং কৃষি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে। বর্তমান হাইখৌ শহরের কৃষকরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন যে,কৃষকদের মধ্যে যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন, তাদেরই সচ্ছল হওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। হাইখৌ শহরের কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্রের ইয়ুংসিং শাখা কেন্দ্রের পরিচালক ছেন থোংহুয়া বলেন:
রেকর্ড ১—
ইয়ুংসিংতে চাষাবাদে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি পরিবারে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষক এখন তা জানেন। এটি চালু হওয়ার পর অনেক কৃষক ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য নিজেই কম্পিউটার কিনেছেন। বলা যায়, এখন চাষাবাদে তথ্য প্রযুক্তির উপর অনেক কৃষক নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন।
তথ্য প্রযুক্তি সঠিকভাবে জানা ও তাকে কাজে লাগাতে কৃষকদেরকে কম্পিউটার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও জরুরি । এতে কৃষকরা ইন্টারনেট থেকে তথ্য জানতে এবং ইন্টারনেটে যার যার পণ্যদ্রব্যের তথ্য ও প্রয়োজনীয় সাহায্য চেয়ে তথ্য প্রকাশ করা সহজ হয়ে যায়। এ জন্য কৃষকদের শিক্ষাগত মান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতায় উন্নয়ন ঘটানো খুব প্রয়োজন।
গত দু'বছরে হাইখৌ শহরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগ নানা ধরণের প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করেছে এবং প্রশিক্ষণ পাওয়া কৃষকের সংখ্যা ১১ হাজারেরও বেশি পার্সন-টাইমস।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে চীনের বিখ্যাত ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৯ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত একটি দল হাইখৌ শহরে পৌঁছে এক মাসব্যাপী পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু করে। এরপর ছিং হুয়াং বিশ্ববিদ্যালয় হাইখৌ শহরের জন্য সংশ্লিষ্ট সাজ-সরঞ্জাম যুগিয়ে দূরপাল্লার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে। পর্যবেক্ষণ কাজ শেষ হওয়ার পর ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চাষাবাদে কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সত্যিই কৃষি প্রধান হাইনান প্রদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি হবে কটি আশাব্যঞ্জক কাজ।
বর্তমানে প্রশিক্ষণ পাওয়া কৃষকরা কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। এদর মধ্যে অধিকাংশই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য পাচ্ছেন এবং ওয়াইবসাইটে যার যার কৃষি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করতে ও ব্যবসা করতে পারছেন।
হাইখৌ শহরের কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক অবস্থা একটু বৈরী এবং কম্পিউটারসহ অন্যান্য সাজ-সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। এসব জায়গায় ইরন্টারনেট থেকে পাওয়ার জন্য মোবাইলফোন থেকে ম্যাসেজ পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টরা ঐ ম্যাসেজ থেকে চাহিদা জেনে নিয়ে ইন্টারনেটের তথ্য জানিয়ে পাল্টা ম্যাসেজ পাঠান। এভাবেই প্রতিনি গ্রাম ও মহকুমার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি তথ্য ও বিক্রির তথ্য বিনিময় করা হয়। ফলে সকল কৃষক সময়মতো বাজারে কৃষি পণ্যের অবস্থা এবং উত্পাদন ও বিক্রি সম্পর্কিত খোঁজ খবর জানতে পারেন।
হাইখৌ শহরের ছিওং শান এলাকার হোংছি মহকুমার ওয়াং ইয়াংরেন নামের একজন লিচু চাষী আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন, আগে লিচু বাগানে আগাছা ও কীট পতংগ দেখা দিলে চিকিত্সার জন্য তাকে অনেক জায়গায় ছুটে বেড়াতে হতো। এতে বেশি খরচ এব বেশি সময় অপচয় হতো। এখন নিজের দরজার সামনের তথ্য প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব কঠিন সমস্যার সমাধান তিনি নিজেই বের করতে পারেন। হাঁস পালক ওয়াং ফুদে বাজারের দাম জানতে পারতেন না বলে হাঁসের দাম নিয়ে দুশিচন্তায় থাকতেন। এখন তিনি টেলিফোনে মহকুমার কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্রে থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। সেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাজারের অবস্থা জানার পর মোবাইলফোনের মেসেজ পাঠিয়ে তাঁকে জানিয়ে দেন, হাঁসের বাজার এখন খুব ভালো। ওয়াং ফুদের দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়। তিনি খুশি মনে বলেন,
রেকর্ড ২
হাতে টাকা পয়সা এলে শিগগির একটা কম্পিউটার কিনবো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমি কৃষি পণ্যের তথ্য প্রকাশ করলে ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি অর্ডার করবেন। ফলে আমার আয় বাড়বে।
বর্তমানে সারা হাইখৌ শহরে তথ্য প্রযুক্তি কৃষি সেবা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন কর্মকর্তা থাকেন। তাদের দয়িত্ব হলো স্থানীয় সংশ্লিষ্ট কৃষি তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করা, সময়মত ওয়াইবসাইটের তথ্য নবায়ন করা এবং কৃষকদেরকে প্রযুক্তি তথ্য ও বাজারে কৃষি পণ্যের অবস্থা জানানো। হাইখৌ শহরের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্য শিল্প ব্যুরোর মহা-পরিচালক চু তোংহাই ব্যাখ্যা করে বলেন,
রেকর্ড ৩—
চাষাবাদে তথ্য প্রযুক্তি পদ্ধতি হচ্ছে তথ্যায়নের ফলাফল। পাশাপাশি জ্ঞান, নতুন ধারাও তৈরি করেছে এই প্রযুক্তি। তাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতি একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম। আমাদের সত্যিকার উদ্দেশ্য হলো কৃষি, কৃষক ও গ্রামের আধুনিকায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমি মনে করি, তথ্য প্রযুক্তি পদ্ধতিতে চাষাবাদের ভবিষ্যত খুব উজ্জল। তাই আমরা তথ্য প্রযুক্তি পদ্ধতির বিভিন্ন কাজ ভালোভাবে চালিয়ে কৃষি উন্নয়নের এই সুযোগ কাজে লাগাবো।
তার দ্রুত, সুবিধাজনক এবং কার্যকারিতার কারণে উত্পাদনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি কৃষকদের নানা ধরণের প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসনে দারুন কাজে লাগাছে। তাছাড়া, তা বাজার অর্থনীতির ওঠা নামার ধারায় সময় মতো বিক্রির অসুবিধাও দূর করে। বর্তমান চীনের শ্যানসি, ফুচিয়ান এবং থিয়ানচিনসহ বিভিন্ন স্থানের গ্রামে। চাষাবাদে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। চীনের অন্যান্য জায়গায়ও তা জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। (লিলি)
|