চীন ও রাশিয়া ১২ ফেব্রুয়ারী জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভার পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে 'মহাশূন্যে অস্ত্র স্থাপন এবং মহাশূন্যে স্থাপতি বস্তুর ওপর সামরিক শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি প্রতিরোধ সংক্রান্ত চুক্তি'র খসড়া দাখিল করেছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন করে মহাশূন্যের অস্ত্রায়ন ও সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ করা এবং মহাশূন্যের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করার প্রস্তাব খসড়ায় উত্থাপিত হয়েছে। এ খসড়া উত্থাপন বর্তমান বিশ্বে নিরস্ত্রীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্য সম্পন্ন।
এই খসড়ার বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, বিভিন্ন দেশ শান্তির লক্ষে মহাশূন্য ব্যবহারের অধিকারকে স্বীকার করে নেয়া, মহাশূন্যে স্থাপিত সকল স্থাপনা কেবল শান্তিপূর্ণ কাজের জন্য ব্যবহার করা, সামরিক উদ্দেশ্যে নয় এটি নিশ্চিত করা, মহাশূন্যে কোন রকম অস্ত্র স্থাপন রোধ করা ছাড়াও বিদ্যমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন কার্যকর করা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তি হবে।
'যৌথভাবে উন্নয়ন করা' এবং 'বেসামরিকীকরণ' হচ্ছে এ খসড়ার দুটি প্রধান দিক। এ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক কণ্ঠস্বর প্রকাশিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মহাশূন্য ও মানবজাতির দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহাশূন্যের সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন বিভিন্ন দেশের কল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন দেশ আশা করে, সমানভাবে মহাশূন্য ব্যবহারের অধিকার তাদের রয়েছে। এ ছাড়াও মহাশূন্যের শান্তিপুর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মহাশূন্যে বড় বড় দেশগুলোর সামরিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মঞ্চে পরিণত হতে না দেয়া। কিছু দিন আগে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী, ৭২ শতাংশ রুশ নাগরিক ও ৮০ শতাংশ মার্কিনী মনে করেন, তাদের সরকারের উচিত যৌথভাবে মহাশূন্যের সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ করা।
খসড়াটি মহাশূন্য ব্যবহার সংক্রান্ত আইনের শূন্যস্থান পূরণ এবং মহাশূন্যে সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সংক্রান্ত আলোচনার দশ বছরের স্থায়ী অচলাবস্থা নিরসনের চেষ্টা করা হয়েছে।
১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও সোভিয়েট ইউনিয়ন 'মহাশূন্য চুক্তি' স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে মহাশূন্যের কক্ষপথে ও কেন্দ্রে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক মারনাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু অন্য কোন চুক্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশকে মহাশূন্যে অন্য কোন রকমের অস্ত্র মোতায়েনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় নি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়াং চিয়ে ছি নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভায় দেয়া এক লিখিত ভাষণে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে পর পর ধারাবাহিক আন্তর্জাতিক আইন দলিল স্বাক্ষর করেছে। এটা মানবজাতির মহাশূন্যে শান্তিপূর্ণ অনুসন্ধান ও ব্যবহারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মহাশূন্যের অস্ত্রায়ন ও সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ এবং মহাশূন্যের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা বিভিন্ন দেশের অভিন্ন স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ জন্য নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। একই দিন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সার্গেই লাভরোভ বলেন, বর্তমানে মহাশূন্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। বিভিন্ন পক্ষের উচিত হবে মহাশূন্য যাতে বৈরি স্থানে পরিণত না হয়, তার ব্যবস্থা করা। মহাশূন্যে কোন অস্ত্র রাখা যাবে না।
মহাশূন্যে সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ সমস্যা সবসময়ই নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সম্মেলনের কেন্দ্রীভুত আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম। নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মহাশূন্য সমরসজ্জার প্রতিদ্বন্দ্বিতা রোধ বিষয়ক বিশেষ কমিটি গঠন করেছে, কিন্তু আলোচনায় কোন অগ্রগতি অর্জিত হয় নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আলোচনা অচলাবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক দেশের অন্যতম, যে দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে মহাশূন্যে অস্ত্র স্থাপন বন্ধ করতে চায় না। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র মহাশূন্যে তার প্রাধান্যের মর্যাদা রক্ষার কথা বিবেচনা করে সবসময় সংশ্লিষ্ট আলোচনার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
খসড়া দাখিল করার সময় চীন ও রাশিয়া উভয়েই নিজের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছে। ইয়াং চিয়ে ছি বলেন, নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভা পৃথিবীতে একমাত্র বহুপক্ষীয় নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সংস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমরাস্ত্র উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণ ত্বরান্বিত করার দায়িত্ব পালন করে। চীন আশা করে, নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভা যত দ্রুত সম্ভব এ খসড়া নিয়ে বাস্তব ভিত্তিক আলোচনা করবে এবং মতৈক্যে পৌঁছাবে। লাভরোভ বলেন, নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভা হচ্ছে খসড়া নিয়ে আলোচনা করার সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত স্থান। তিনি আশা করেন, বিভিন্ন পক্ষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরস্ত্রীকরণ আলোচনা সভায় এই বিষয়টির ওপর ব্যাপক আলোচনা করবে, যাতে মহাশূন্যের নিরাপত্তা রক্ষা করা যায়। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|