v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-12 20:28:45    
রঙ্গিন রেশমী বল নিক্ষেপ ভালবাসার প্রতীক

cri
    চীনের কুয়াংশি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের চিংশি জেলার চুওচৌ গ্রামকে 'রঙিন রেশমী বলের জন্মভূমি' বলে অভিহিত করা হয় । এখানকার অধিবাসীরা চুয়াং জাতির ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প পণ্য- রঙিন রেশমী বল তৈরী করে থাকেন । এতে তারা সচ্ছল হয়েছেন । আজ এ অনুষ্ঠানে রঙিন রেশমী বলের জন্মভূমি-চুওচৌ সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি…

    চীন-ভিয়েতনাম সীমান্তে অবস্থিত কুয়াংশি'র চিংশি জেলা চুয়াং জাতি অধ্যুষিত একটি অঞ্চল । চুওচৌ-এর রঙিন রেশমী বল তৈরীর কৌশল এ জাতির হাজার বছর পুরনো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রকাশ পেয়েছে । রঙিন রেশমী বল চুয়াং জাতির তরুণ ও তরুণীদের ভালবাসার প্রতীক । ভিন্ন বলের ডাইমিটার ২ থেকে চল্লিশ-পঞ্চাশ সেন্টিমিটার পর্যন্ত । প্রতিটি বলের ওপরে সূচীকর্মে বানানো বৈচিত্র্যময় নক্সা রয়েছে । চুওচৌ গ্রামের প্রস্তুত রঙিন রেশমী বল অনন্য সৌন্দর্যময় বলে দেশ-বিদেশে সুবিখ্যাত ।

    চুওচৌ গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে রঙিন রেশমী বল বানানো হয় । অল্পবয়সী থেকে প্রবীণ পর্যন্ত সকল গ্রামবাসী সূচী কর্ম করতে পারেন । গ্রামের রাস্তায় নানাবিধ রঙিন রেশমী বল দেখা যায় ।

    ২০ বছর আগে চুওচৌ গ্রামে তরুণ ও তরুণীদের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে রঙিন রেশমী বল তরুণীদের রুমে রাখা হতো । এটা বাইরের লোকদের সামনে দেখাতো না । গ্রামবাসী চু চু সিয়ান বলেন ,

    ১৯৮৪ সালে চীনের চন্দ্রবর্ষের তৃতীয় মাসের তিন তারিখ কুয়াংশি'তে লোক সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । গান গাওয়ার সময় তার কোমরে একটি ছোট রঙিন রেশমী বল বাঁধা ছিল । সংগীত প্রতিযোগিতা চলার পাশাপাশি স্থানীয় আচার ব্যবহার দেখানোর জন্য বেশ কিছু রঙিন রেশমী বল ছোড়া হয় । এই বিস্ময়কর অনুষ্ঠান বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল । তাদের মধ্যে একজন তার রেশমী বল কিনতে চান । চু চু সিয়ান তিন ইউয়ান চেয়েছেন । কিন্তু তিনি তাকে ৩০ মার্কিন ডলার দিয়ে দিয়েছেন ।

    তখন থেকে চু চু সিয়ান রঙিন রেশমী বল তৈরি ও বিক্রির ব্যবসা করতে শুরু করেছেন । তিনি ঐতিহ্যবাহী রঙিন রেশমী বল বানানের কৌশলের সংস্কার করেছেন । রেশমী বলের জন্য লাল , সবুজ ও গোলাপী বর্ণের রঙ করা হয়েছে । সূচীকর্ম চালানোর পাশাপাশি সেলাই করা হয় । ধীরে ধীরে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে । তার উদ্দীপনায় আরো বেশি গ্রামবাসী রঙিন রেশমী বল তৈরিতে আত্মনিয়োগ করছেন । বর্তমানে ইউরোপ , আমেরিকা ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী তাদের কাছে থেকে রঙিন রেশমী বল কিনতে চেয়েছেন ।

    ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী হোয়াং সিয়াও ছিং একজন দক্ষ সূচীকর্ম শিল্পী । তিনিও চুওচৌ-এর রঙিন রেশমী বল শিল্পের একজন কর্মকর্তা । ২০০১ সালে তিনি ১ লাখ রঙিন রেশমী বল কেনার অর্ডার পেয়েছেন ।

    ১ লাখ রঙিন রেশমী বল কেনার অডার পাওয়ায় তার ওপর ভীষণ চাপ সৃষ্টি হয় । অর্ডার অনুযায়ী উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা যথাসময় সম্পন্ন করার জন্য তাকে প্রতি দিন সাইকেল করে বাড়িতে বাড়িতে যেতে হতো । অবশেষে চার মাসের আগেই এক বছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে ।

    যখন সংবাদদাতা দোকানে সাক্ষাত্কার নিলেন , তখন দশ বারো জন পর্যটক রঙিন রেশমী বল কেনায় ব্যস্ত ছিলেন । চিয়াংসু প্রদেশের তরুণী মিসঃ চৌ-এর এ সব স্ফুর্তিপূর্ণ রঙিন রেশমী বল খুব ভাল লেগেছে । তিনি একসাথে ১২টি বল কিনেছেন । তিনি বলেন ,

    চু  ওচৌ গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে রঙিন রেশমী বল তৈরি করা হয় । এতে পুরোপুরিভাবে চুয়াং জাতির রীতি-নীতির আবির্ভাব ঘটে । এটা সংবাদদাতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । এই প্রাচীন গ্রামে বহু সূচীকর্ম শিল্পী আছে । তারা স্থানীয় চাল-চলন ও ঐতিহ্যের পরিচায় বহন করে ।

    বর্তমানে হোয়াং সিয়াও ছিং একজন ব্যবসায়ীর অর্ডার অনুসারে এক শো'টি রঙিন রেশমী বল প্রস্তুত করছেন । চুওচৌ মার্কা রঙিন রেশমী বল তার পণ্যের ট্রেডমার্ক । গ্রামবাসীদের রেশমী বল তৈরির কৌশল শেখানোর জন্য তিনি সময় সময় তাদের বাড়িতে যান । চুওচৌ-এর রেশমী বলের পরিচিতি আরো বাড়ানোর জন্য তিনি বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়ান এবং বল তৈরির নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন ।

    আসলে এটাও এক ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময় । এই বিনিময়ের মাধ্যমে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হস্তশিল্প পণ্য ও ঐতিহ্যও সম্প্রসারিত হয়েছে ।

    চুওচৌতে এখন সূচীকর্ম সমিতিও গঠিত হয়েছে । গ্রামের রঙিন রেশমী বল ক্ষেত্রে কাঁচামাল সরবরাহ , বল তৈরি এবং পণ্য বিক্রিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । ২ হাজারেরও বেশি গ্রামবাসীর মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি লোক রেশমী বল তৈরির কাজে নিয়োজিত । গ্রামে মাথাপিছু বার্ষিক আয় এখন ২ হাজার ইউয়ান ।

    চুওচৌ গ্রামে লোক বেশি , জমি কম । সুতরাং আয় করার জন্য পার্শ্বব্যবসা হিসেবে পণ্য তৈরি ও বিক্রির প্রয়োজন । চাকরির জন্য যারা বাইরে গিয়েছিলেন , তাদের মধ্যে অনেকেই জন্মভূমিতে ফিরে এসেছেন । তারাও রেশমী বল তৈরি করতে শুরু করেছেন । গ্রামের একজন তরুণী চাং চিং লিউ বলেন ,

    আগে আয় করার জন্য গ্রামের বহু তরুণ ও তরুণী এলাকার বাইরে গিয়েছিলেন । তাদের মধ্যে বেশ কিছু লোক এখন গ্রামে ফিরে এসেছেন । কারণ তারা গ্রামে যেমনি আয় করতে পারেন তেমনি পরিবার পরিজনকে দেখাশুনা করতে পারেন ।

    অন্য একটি এলাকার র একজন ব্যবসায়ীর পুঁজি বিনিয়োগে চুওচৌতে একটি সূচীকর্ম কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই কারখানা চালু হওয়ায় চিংশি জেলার ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি দেয়া হয়েছে ।

    রঙিন রেশমী বল তৈরি শিল্পের পাশাপাশি চুওচৌ গ্রামে পর্যটন শিল্পও বিকাশ লাভ করেছে । এই গ্রামে চুয়াং জাতির প্রথমবারের মতো পরিবেশ রক্ষা যাদুঘরও গড়ে তোলা হয়েছে ।

(থান ইয়াও খাং)