v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-12 19:15:44    
প্রতিবন্ধী গায়ক লিয়াং ফু ফিংয়ের গল্প

cri
    দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছুং ছিং শহরে লিয়াং ফু ফিংয়ের নাম প্রায় সবাই জানে। তাঁর গলা খুব ভাল। তিনি শুধু গান গাইতে পারেন তা নয়, নিজেও গান লেখেন। তার পায়ে সমস্যা আছে বলে তিনি সব সময় গিটার এবং লাঠি একসাথে বহন করেন। লিয়াং ফু ফিং অনেক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং নিজের একক অ্যালবামও বের করেছেন। যত কষ্টই তিনি পান না কেন হাসি মুখে বলেন, "কোনো সমস্যা নেই"। আমাদের আজকের আলোকিত্ব ব্যক্তিত্ব লিয়াং ফু ফিং।

    লিয়াং ফু ফিংয়ের বাড়ি ছুং ছিং শহরের একটি পুরনো ভবনে। তার পা প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমাদের সংবাদাতাকে স্বাগত জানানোর জন্য তার স্ত্রী দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন।

    দরজা দিয়ে ঢুকে দেখা গেলো লিয়াং ফু ফিং সোফায় বসে আছে। পাশে অনেক আত্মীয়স্বজন বসা আছে। লিয়াং ফু ফিং হাসি মুখে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন। ঘরের মাঝখানে টেবিলে বিভিন্ন রকমের খাবার সাজানো।

তার পরিবারের সদস্যরা লিয়াং ফু ফিং সম্পর্কে কথা শুরু করলে আর যেন থামতেই চান না। তার মেয়ে লিয়াং সি সি বলেন,

    "আমি ছোটবেলা থেকে বাবাকে গভীরভাবে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি। তিনি খুব সাহসী, সমস্যায় পড়লেও তিনি কখনো ভয় পান না বা ভেঙে পড়েন না।"

    লিয়াং ফু ফিংয়ের ছোট ভাই বলেন:

    "হারমোনিকা, অ্যাকোর্ডিয়ান, বেহালা বা চীনের ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্র আরহু, ইয়াং ছিন সবই তিনি বাজাতে পারেন। ভাইযান আমার মানস বীর।"

তার বন্ধু বলেন,

    "লিয়াং ফু ফিংয়ের সংগীতের প্রতিভা আছে। সে আত্মবিশ্বাসী লোক। সংগীত তার স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নে সে সব সময় অটল । বন্ধুদের প্রতি সে খুব উদার।"

    তার স্ত্রী আ চিয়াও বলেন:

    "সে গান গাওয়ার সময় আমি তো নাচতে চাই। আমি শুধু তার গান পছন্দ করি।"

    নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিয়াং ফু ফিং বলেন:

    "আমার স্বপ্ন হলো আমার গান আরো অনেককে যেন শোনাতে পারি।"

    ১৯৬৩ সালে লিয়াং ফু ফিং জন্মগ্রহণ করেন। তার মা একজন শ্রমিক ছিলেন, রোগে পড়ে আর কাজ করতে পারেননি। তার বাবা রেলওয়ে বিভাগের একজন শ্রমিক। কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে পরিবারের কাজ করার সময় পান না। দুই বছর বয়সে পোলিওমাইলাইটিস হয়ে লিয়াং ফু ফিংয়ের ডান পা প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে লিয়াং ফু ফিং বলেন, তিনি সাধারণ ছেলেমেয়ের মতো খেলতে পারতেন না, তাই সংগীত তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হয়।

    "আমার কোনো দুঃখ নেই, শুধু গানেই আমার আগ্রহ। একটি গান শোনার সময় আমি ভাবতে শুরু করি, এই গানটি কেন এভাবে করা হয়েছে, কেমন করে তাকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারি। ছোটবেলায় আমি এগুলো নিয়ে ভাবতাম। অনেকেই এ ভাবে চিন্তা করে না, আমি জানি। কিন্তু আমার মাথায় সারাক্ষণ এগুলো ঘুরতো।"

    গান শেখার জন্য তিনি কঠোর অনুশীলন করেন। প্রতি দিন তিনি চিয়াং লিং নদীর তীরে দুই ঘন্টা ধরে গানের রেওয়াজ করেন। বৃষ্টি, বাদল, ঝড়, বাতাস যাই হোক তাকে থামাতে পারেনি। তার ছোট ভাই লিয়াং ইয়ুং বলেন:

    "রেওয়াজ করার সময় আমি সব সময় তার সাথে থাকি। গ্রীষ্মকালে আমি নদীতে সাঁতার কাটতাম। আর ভাই নদীর তীরে গান গাইতো। বৃষ্টি হলে আমি তার জন্য ছাতা ধরি। তার পায়ের জন্য হাঁটতে সমস্যা হলে আমি তাকে কাঁধে করে নিয়ে যাই।"

    ১৯৮২ সালে লিয়াং ফু ফিং একটি কারখানায় চাকরি পান। নিয়মিত বেতন পাওয়ার পর তিনি নিজের জন্য একটি গিটার কিনে ফেলেন।

    "এক বছর ধরে বেতনের টাকা বাঁচিয়ে একটি গিটার কিনেছি ৮৮ ইউয়ান দিয়ে। গিটার কেনার প্রথম দিনে আমি সারা দিন কিছু না খেয়ে শুধুই বাজিয়েছি। তখন আমি সব সময় কারখানার প্রতিনিধি হিসেবে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। আস্তে আস্তে আমার আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে।"

    লিয়াং ফু ফিং তার গানের জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। বাসায় বিভিন্ন রকমের পুরষ্কার সাজানো রয়েছে। বিয়ে করে মেয়ে জন্ম নেয়ার পর তার অল্প বেতন তিন জনের জন্য আর যথেষ্ট ছিল না।  

    "১৯৮৯ সালে আমার মেয়ের জন্ম হয়। আমার স্ত্রী কাজ করে না। আমার বেতন তখন শুধু ৩০ ইউয়ান। তাই আমি সাহস করে সিদ্ধান্ত নেই যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে একজন যাযাবর গায়ক হবো।"

    তখন থেকে সাথে গিটার, লাঠি আর গানের বই নিয়ে তিনি যাযাবর গায়কের জীবন শুরু করেন। রাস্তায় রাস্তায় তাকে গান গাইতে দেখা যেত। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত তার স্ত্রী সমর্থন করেন নি। । ২০০২ সালে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এই সময় সংগীত আবার লিয়াং ফু ফিংকে উদ্ধার করে। ২০০৫ সালে জাতীয় প্রতিবন্ধীদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় লিয়াং ফু ফিং পুরষ্কার পান। পরে তিনি বর্তমান স্ত্রী আ চিয়াও'র সঙ্গে পরিচিত হন। দু'জনের মধ্যে মিষ্টি প্রেম হয় এবং দু'জনে বিয়ে করেন।

    ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লিয়াং ফু ফিংয়ের প্রথম অ্যালবাম "পুরুষের কাঁধ" বের হয়। তিনি বলেছেন, এই অ্যালবামে তিনি মনের কথা গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।

    "আস্তে আস্তে আমার আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। আমি এখন অনেক সাহসী হয়েছি। স্বর্গ আমার জীবনে দরজা বন্ধ করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার জানালা খুলে দিয়েছে। আমি এই মূলবান জানালা থেকে সুর্যের আলো উপভোগ করছি। এই জীবনে আমার যাবতীয় ভালবাসা বা জীবন বোধ আমি প্রকাশ করবো। যদিও আমি প্রতিবন্ধী তারপরও কোনো সমস্যা নেই।"(ইয়াং ওয়েই মিং)