১২ ফেব্রুয়ারী হচ্ছে চীনের সাতদিনব্যাপী বসন্ত উত্সবের শেষ দিন । চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যিক উত্সব – বসন্ত উত্সব উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানের চীনাদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মীয়জনদের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন , আবার কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে গেছেন । তারা নানা স্থানে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন । এ উত্সবের আগে দক্ষিণ চীনের কোনো কোনো অঞ্চল স্মরণকালের ভয়াবহ তুষারপাত ও অত্যধিক বৃষ্টির বিপর্যয়ে কবলিত হয়েছে । তবে চীন সরকার ও সমাজের বিভিন্ন মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গত অঞ্চলগুলোর জনসাধারণও এক আনন্দময় ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ছুটি কাটিয়েছেন ।
বসন্ত উত্সবের সময় চীনারা রংবেরংয়ের মন্দির মেলায় অংশ নিতে পছন্দ করেন । পেইচিংয়ের পৃথিবীর পূজা বেদী পার্ক , চিলিন প্রদেশের পেইশান পার্ক , শেং ইয়াংয়ের পুরনো প্রাসাদ , থিয়ান চিংয়ের প্রাচীন সাংস্কৃতিক রাজপথ , চিন নানের তামিং হ্রদ , ছাং শার অগ্নি প্রাসাদ এবং নান চাংয়ের কন্ফুসিয়াস মন্দিরে নানা ধরণের ,মন্দির মেলার আয়োজন করা হয় । বিভিন্ন স্থানের লোকেরর এসব মেলায় চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন । চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের পৃথিবীর পূজা বেদী পার্কে আয়োজিত মন্দির মেলায় নানা স্থাপনার মাধ্যমে পুরনো পেইচিংয়ের বাড়িগুলোর ধুসর দেয়াল ও টালি দেখানো হয় । পর্যটকরা এখানে আসলে মনে হবে পেইচিংয়ের পুরনো অলিগলিতে বেড়াচ্ছেন । এ মেলা চলাকালে এ পার্কে প্রতিদিন সকালে পৃথিবী পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এক শ'রও বেশি বছর আগে চীনের ছিং রাজবংশের সম্রাটরা দেশ ও জনগণের কল্যাণ , ভালো আবহাওয়া এবং বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে পৃথিবী দেবতার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর যেভাবে পূজা করতেন , সেই দৃশ্য দেখানো হয় । তাছাড়া পর্যটকরা এ মেলায় পুরনো পেইচিংয়ের নানা ধরণের চালচলনও স্বচোখে দেখতে পান । এখানকার একটি প্রদর্শনীতে পুরনো পেইচিংয়ের এক হাজারেরও বেশি জিনিষপত্র দেখানো হয়েছে । এ মেলায় অবৈষয়িক পুরাকীর্তি প্রদর্শন চত্বরও বসানো হয় । অবৈষয়িক পুরাকীর্তির তালিকাভূক্ত ১৮টি লোক শিল্পকলা এখানে প্রদর্শিত হয়েছে । পেইচিংবাসী হোক আর অন্যান্য স্থানের পর্যটক হোক , সবাই এ মেলার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।
একজন মহিলা বলেন , অত্যন্ত অদ্ভূত , চমত্কার । একজন পর্যটক বলেন , খুবই ভালো , সত্যিই কল্পনাতীত ।
হংকংয়ে বসন্ত উত্সবের সময় ফুলের মোটর যাত্রা ও আতশ বাজির আয়োজন করা হয় । হো পেই প্রদেশের গ্রামে গ্রামে ছোট বড় নানা ধরণের দড়াবাজি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।
হু পেই প্রদেশের রাজধানী উ হানে ৪ মিটার উঁচু প্রকান্ড ড্রাগণ নাচ দেখানো হয় । চিয়াং সি প্রদেশের রাজধানী নান ছাংয়ে লোকেরা ২ হাজার ৮ মিটার লম্বা ড্রাগণ নিয়ে নাচ করেছেন । তাইওয়ান প্রণালীর দুই পারে সিয়ান মেন ও চিন মেনের অধিবাসীরা একই মুহুর্তে আতশ বাজি পুরিয়ে বসন্ত উত্সব পালন করেন ।
শান তুং প্রদেশের ওই ফাংয়ে অনেক লোক রংবেরংয়ের আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে উত্সবকে সরগরম করে তুলেছেন । ওই ফাংবাসী চাং সিয়াও তুং বলেন ,
বসন্ত উত্সব এসেছে । আমরা সবাই মিলে এখানে ঘুড়ি আকাশে উড়াতে এসেছি এবং অপার আনন্দ পেয়েছি । আমরা আশা করি , আমাদের ঘুড়ি যত উঁচুতে উড়বে , আমাদের জীবনও ততই সুখী হবে ।
চীনের বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে স্মরণকালের তুষারপাত ও অত্যধিক বৃষ্টিতে দক্ষিণ চীনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । কোনো কোনো এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যহত হয় এবং পানি , বিদ্যুত , খাদ্যশস্য ও শাকসব্জির অভাবও দেখা দেয় । চীনের বিভিন্ন স্তরের সরকার ও সমাজের বিভিন্ন মহলের লোকেরা দুর্গত এলাকাগুলোর জনসাধারণকে সাহায্য করার জন্যে আন্তরিকতার সংগে এগিয়ে এসেছেন । ফলে দুর্গত এলাকাগুলোর লোকেরাও বিনোদনের সংগে একটি সুখময় ছুটি কাটিয়েছেন । চেন চিয়াং ও কুয়াং তুং প্রদেশে বেশ কিছু কৃষক শ্রমিক কাজ করেন । খারাপ আবহাওয়ার কারণে তারা নিজদের বাড়িতে যেতে পারেন নি । স্থানীয় সরকার তাদের জন্যে খাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থা করেছে । চে চিয়াং প্রদেশে কর্মরত কুই চৌ প্রদেশের কৃষক ফোং থিং বলেন ,
দেশের বাড়িতে ফিরতে না পারলেও চেং চিয়াং প্রদেশে থেকে আমি আনন্দঘন পরিবেশে উত্সব কাটিয়েছি । আমি আশা করি , আমার দেশের বাড়ির অবস্থার উন্নতি হবে ।
|