মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কনডোলিত্জা রাইস ও বৃটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ড ৭ ফেব্রুয়ারী আকস্মিকভাবে আফগানিস্তান সফর করেছেন। তাঁরা কাবুলে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি ও আফগানিস্তানে ন্যাটোর কর্তব্যসহ নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছেন। এর পাশাপাশি ন্যাটোর ২৬টি সদস্য দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর একই দিন লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিউসে দু'দিনব্যাপী অনানুষ্ঠানিক এক অধিবেশনে মিলিত হয়েছেন। ন্যাটোর নেতৃত্বে আফগানিস্তানের শান্তি রক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসন জনিত সমস্যা হচ্ছে এবার অধিবেশনের মূল আলোচ্য বিষয়।
রাইস বৃটেন সফর শেষ করে মিলিব্যান্ডের সঙ্গে বিমান যোগে আফগানিস্তানে গিয়েছেন। তারা প্রথমে কান্দাহার প্রদেশে মোতায়েন ন্যাটোর সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তারপর রাজধানী কাবুলে গিয়ে কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন।
কারজাইয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে রাইস বলেন, তালিবান সরকারকে উত্খাত করার ছয় বছর পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতির স্পষ্টতই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দিনে দিনে অবনতি হওয়া তালিবানের আত্মঘাতী বোমা হামলা ও অপহরণ তত্পরতা মোকাবিলায় আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী আর আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে বেশ কিছু নতুন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। মিলিব্যান্ড উল্লেখ করেন, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোর দেশগুলো আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আফগান সরকারেরও একই দায়িত্ব পালন করা উচিত। এমন কি আফগান সরকারকে এ ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করা উচিত।
রাইসের আফগানিস্তান সফরের সময় লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর ২৬টি সদস্য দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের অনানুষ্ঠানিক অধিবেশন চলছে। তারা এপ্রিল মাসে রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবারের অধিবেশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ন্যাটোর গৃহীত কর্মসূচী কার্যকরসহ সম্মুখীন চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনা করা। আফগানিস্তানে ন্যাটোর অভিযান হচ্ছে এবারের অধিবেশনের প্রধান আলোচ্য বিষয়। স্নায়ুযুদ্ধের পর ঐতিহ্যিক প্রতিরক্ষা অঞ্চলের বাইরে ন্যাটোর সর্বাধিক সামরিক অভিযান হিসেবে আফগানিস্তানের শান্তি রক্ষা তত্পরতা হচ্ছে ন্যাটোর অস্তিত্বের পরশপাথর। এখন আফগানিস্তানে ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা ৪২ হাজার। কিন্তু আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নত হয় নি। গত দু'বছর ধরে তা ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। তালিবানসহ বিরোধী শক্তিগুলো পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ক্যানাডা ও নেদারল্যান্ডের ২৬ হাজার সেনা আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে তালিবানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করছে। সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর কাছে বিশেষ করে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু মিত্র দেশগুলো নানা কারণে এ আহ্বানে সাড়া দেয় নি।
৭ ফেব্রুয়ারীর অধিবেশনের পর মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেটস বলেন, তিনি ন্যাটোর মিত্র দেশগুলোকে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর ব্যাপারে রাজি করার জন্য এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, এটা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। ন্যাটোর মহাসচিব জাপ দ্য হুপ শেফার একই দিন উল্লেখ করেন, যদিও আফগানিস্তানে ন্যাটোর অভিযানের পর বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তারপরও আরো বেশি সৈন্য ও প্রয়াস চালানো প্রয়োজন।
দক্ষিণ আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটোর মিত্র দেশগুলোর মধ্যকার অসংগতি দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে চাইলে ন্যাটোর উচিত তালিবান সশস্ত্র যোদ্ধা ও চরমপন্থীদের ওপর আরো বেশি আঘাত হানা। কিন্তু কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ মনে করে, আফগান সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উপায়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের কথা অবহেলা করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াসের কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বাধ্য হয়েই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। জার্মানী ৬ ফেব্রুয়ারী ঘোষণা করেছে, এ বছরের গ্রীষ্মকালে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তারা ২৫০ জন সৈন্য পাঠাবে। তবে তারা আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে কোন সৈন্য পাঠাবে না। ফ্রান্সও আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর কথা ভাবছে, কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয় নি। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|