v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-07 21:12:39    
আমার দেখা চীন

cri
    -আ বা ম ছালাউদ্দিন

    বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজতে গিয়ে অপার সৌন্দর্যের আধাঁরে হারিয়ে যেতে হয় অবচেতনভাবেই । প্রকৃতিও ঠেলে ফেলে না দিয়ে নিজের মাঝেই আপন করে নেয় আলতো করে ঠিক তার মতই । বিশ্ব প্রকৃতির রূপ- রস রহস্যময়তার জালে নিবিঢ়ভাবে বেড়ে উঠে মানুষ সৃজনশীল চেতনা নিয়ে এগিয়ে যায় তার ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে, যার যার জাতি গোষ্ঠির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময়তার মধ্য দিয়ে । তিনভাগ পানি বেষ্টিত ভূ-ভাগের এক ভাগে তাই এত বৈচিত্রময়তা । দেশ - কাল - পাত্র ভেদাভেদে গড়ে উঠে স্ব- মহিমান্বিত অঞ্চল । সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকেই মানুষ আশা নিরাশার দোলনায় দুলে দুলে স্বপ্ন দেখে আগামী দিনের । আজকের এই আমি আর আগামী দিনের আমির মধ্যে বিরাট ফারাক । আমিত্বের আভিনবত্বের মধ্য দিয়ে তখন ছুটে চলার তৃষ্ণার সঙ্গে সঙ্গে ব্যকুলতাও বাড়তে থাকে ক্রমাগত। দু' চোখ ভরে নিতে চায় পার্থিব সব সুষমাকে । দূর্বার এক ইপ্সা তাকে টেনে নিয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে । আমার আমিত্বের মধ্যেও যেন একটা প্রবল ভাবনা আন্দোলিত হয় ; শুধু ভাবনাই নয়, একটা ব্বপ্ন সেলুলয়েডের ফিতের মত জড়িয় রাখে হাজারো সব রঙিন দৃশ্যাবলি । রঙিন দেশ । রঙিন মানুষ আর তার জীবন প্রণালী । তার কর্মধারা ও অগ্রযাত্রার অবারিত পথ ।

    সেই কবেকার কথা । এক্কা-দোক্কা ও মোরগ লড়াই খেলার বয়স তখনও পার হয় নি । বলা চলে কৈশোরের শেষ ধাপ পার হচ্ছি মাত্র । সেই বয়সেই পূবের মানুষ ; পশ্চিমের মানুষ ; উত্তরের মানুষ আর দক্ষিণের মানুষ ও তাদের জীবন ধারার কথা জানার অদম্য বাসনাটা বাড়তেই থাকে বইয়ের পোকার মত বইয়ের পাতায় ঘুরে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে । ভালো লাগতে শুরু করে নিজের গ্রাম, শহর আর দেশকে । আমার দেশ । আমার নিজের দেশ । এ যেন পরম অহঙ্কারের, গর্বের এবং আত্ম- চেতনার বিকাশে এক দৃপ্ত সঙ্গী । সোনা ঝরা সকাল, দুপুরের রোদ আর শরষে ফুলের হলুদ বিকেল পেরিয়ে আলো-আঁধারীর আবছায়া সন্ধ্যার লুকোচুরি । নিকষ কালো রাতের বুক জুড়ে অসংখ্য জোনাকীর জ্বলতে জ্বলতে পথ চলা যেন আমায় টেনে নিয়ে যায় অনবদ্য এক কাব্যের ভূবনে । আমি অনুভবের ভেতর দিয়ে বুঝতে শিখি ভালো লাগার স্বত্বাকে । ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে দেখা আর জানার প্রবল বাসনা ।

    এমনি করেই হঠাত্ একদিন বেড়িয়ে পড়া দেশের মানুষের কাছা কাছি গিয়ে মাটির সোদা গন্ধের স্বাদ নি:শ্বাসে বুক ভরে নিতে । এ ভাবেই সন্তর্পণে ভিন্ন দেশ আর ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও কৌতুহল বেড়ে যায় । বিভিন্ন দেশের মানুষের গল্প পড়ার সময় একদিন চীনের মানুষ ও তার জীবন যাত্রার বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে নাড়া দেয় । মনের ভেতর চীনের একটা ছবি ষ্পষ্ট থেকে ষ্পষ্টতর হয়ে ওঠতে থাকে । কৌতুহল জাগে তাদের সংগ্রামী জীবনের ওপর । নিত্য নতুন বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক পরিবেশে হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বুকে ধারন করে রাখা চীনের মানুষের কথা উদ্বেলিত করে তোলে । জানতে পারি দেশটিতে শোষণের বিরুদ্ধে শোষীতের লড়াইয়ের কথা । অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কথা । সামন্ত্রতন্ত্রের বিরুদ্ধে আর হানাদারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা । তারা লড়ছে সমাজতন্ত্রের জন্য, লড়াই করছে একটি সুষম সমাজ গঠনের লক্ষ্যে। ভেদা-ভেদহীন একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট সম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার জন্য । অবাক বিষ্ময়ে জানতে পারি বিভিন্ন দেশের হানাদারদের বিরুদ্ধে একনিষ্ঠ সংগ্রামী, দেশের জন্য নিজেকে উত্সর্গ করতে প্রস্তুত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত , শোষিত ও দারিদ্রতার ছোবলে ক্ষত বিক্ষত অসহায় মানুষের জন্য যার প্রাণ কাঁদে, যার বৈপ্লবিক চেতনা ও বলিষ্ঠ সংগ্রাম কৃষক-শ্রমিকসহ চীনের সাধারণ মানুষের মুক্তির পথকে করেছিল উজ্জ্বল । অতুলনীয় সেই মহান বিপ্লবী মানুষটির কথা । শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়ে তার উদ্দেশ্যে সালাম জানাই অকৃপণভাবেই ।

    রাশিয়ার জারের বিরুদ্ধে অকুতোভয় বিপ্লবী লেনিন-ষ্ট্যলিনের কথা আমার আগেই জানা ছিল । কার্ল মার্কস এবং এঙ্গেলসের কথাও জানি সমাজতন্ত্রের অমূল্য পুস্তক দাস ক্যাপিটেলের জন্য। যদিও তখন পর্যন্ত কয়েক পৃষ্ঠা মাত্র পড়া হয়েছে । বলতে গেলে সেই সময়েই সমাজতন্ত্রের প্রতি আমার একটা ধারনা গড়ে উঠতে শুরু করে । যা আমি আমার মনের ভেতর লালন করতাম অতি সযত্নে । আমার দেশের দারিদ্র ক্লিষ্ট ও নিষ্পেষিত সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করতে গিয়ে ধীরে ধীরে একসময় মহান নেতা মাও সে তুঙ-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি । নীতি ও আদর্শিক দিক থেকে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে শুরু করি । এরই মধ্যে আমি কলেজের রাজনীতিতেও নিজেকে সম্পৃক্ত করে ফেলি । এ সময় কলেজ ক্যাবিনেটের নির্বচনে আমি সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দিতা করি । আর নির্বাচিত হয়ে যাই মহান বৈপ্লবিক নেতার আদর্শকে সম্বল করেই । আমার জীবন ক্ষেত্রে এটা একটা মাইল ফলক ।

    পথ পরিক্রমায় কলেজ জীবনের সাহিত্য সম্পাদকের সুত্র ধরেই চীনের প্রকাশনা সংস্হা কোয়াজি সুদিয়ান এব পিকিং বেতারের ইংরেজী বিভাগের সংগে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়ে যায় । চীনে তখন হরদম প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাভাষায় মহান চীনা নেতার বাণী সমৃদ্ধ বই পত্র । আর আমিও তা বিনামূল্যেই পেতে থাকে নিয়মিতভাবে । এর মধ্যে মাও সে তুঙ-এর কোটেশন সমৃদ্ধ ছোট্ট লাল রঙের বই, মাও সে তুঙ-এর নির্বাচিত লেখা সমুহের ভলিউমগুলোসহ কবিতার বই । একই সঙ্গে পেতাম খুব পাতলা কাগজে সহজ ও সাবলীল ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত পিকিং রিভিউ এবং চায়না পিকটোরিয়ালসহ অনেক পত্র-পত্রিকা । আরো পেয়েছি কয়েক হাজার মাও সে তুঙ-এর ছবি এবং থিয়েন আন মেন স্কোয়ারসহ কোটপিন । যা তখন আমি বিলি করে দিয়ে ছিলাম সারা দেশে । এ ছাড়াও চীনের সংষ্কৃতি ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য পিকিং অপেরার গ্রামোফোন রেকর্ডসহ চীনা সংগীতের বহু রেকর্ড। যা আমাকে চীনকে জানতে ও বুঝতে ভীষণভাবে সহায়তা করেছে ।