মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী কনডোলিত্জা রাইস ৬ ফেব্রুয়ারী থেকে তার লন্ডন সফর শুরু করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ বৃটেনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আফগান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে আফগানিস্তানে ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর দায়িত্ব ভাগাভাগি করা।
একই দিন বৃটেনের ডাউনিং ষ্ট্রীটের প্রধানমন্ত্রী ভবন জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ও রাইস দক্ষিণ আফগানিস্তানের দাঙ্গা কবলিত অঞ্চলে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে ন্যাটো দেশগুলোকে রাজি করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে তাঁদের বৈঠকের নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় নি। এর আগে রাইস ও বৃটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড মিলিব্যান্ডের মধ্যেও বৈঠক হয়। বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদিক সম্মেলনে রাইস বলেছেন, কিছু কিছু দেশ নিজের সেনাবাহিনীকে দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিপদজনক অঞ্চলে পাঠাতে চায় না। ফলে ন্যাটো একটি "সত্যিকারের পরীক্ষা"-এর সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনগণকে বুঝাতে হবে যে, আফগানিস্তানে ন্যাটোর দায়িত্ব শান্তি রক্ষার কাজ নয়, বরং সেখানকার সরকার বিরোধী সশস্ত্র ব্যক্তিদের দমন করা।
এরপর বৃটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিলিব্যান্ড জোর দিয়ে বলেন, আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনের জন্য বৃটেন যথেষ্ট পরিমান সৈন্য পাঠিয়েছে। বর্তমান সেখানে ৭৭০০ বৃটিশ সৈন্য রয়েছে। এই সংখ্যা পর্যাপ্ত। মিলিব্যান্ডের কথা থেকে বুঝা যায় যে, বৃটেনের আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা নেই।
রাইসের বৃটেন সফর করার কারণ হচ্ছে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বর্তমানে স্পষ্টতই উল্টো দিকে যাচ্ছে। বৃটেনের আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েন ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন "আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী" গুরুতরভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে আফগানিস্তানে চরমপন্থীদের অবস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশটি সন্ত্রাসবাদ ও মাদক দ্রব্য বিনিময়ের স্বর্গে পরিণত হচ্ছে। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন পর্যালোচনা গ্রুপের প্রকাশিত এক রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে, 'তালিবান' এর সামরিক অভিযানের ক্ষমতা এখন অনেক বেড়েছে। তালিবান আফগানিস্তানের অর্ধেকেরও বেশি ভূভাগ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আফগানিস্তান বিভক্ত হয়ে একটি 'ব্যর্থ দেশ' ও 'সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় দেশে' পরিণত হবে।
সুতরাং গত মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর কাছে আফগানিস্তানে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী ও সাজসরঞ্জাম পাঠানোর অনুরোধ জানায়। এর পরপরই রাইস ফ্রান্স, জার্মানী ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান। লন্ডনে যাওয়ার পথে রাইস সংবাদদাতাকে বলেন, বর্তমানে কেবল ন্যাটোর অল্পসংখ্যক দেশ দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিপদজনক অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করেছে। তিনি জরুরীভাবে আশা করেন, ন্যাটোর অন্যান্য মিত্র দেশগুলোও যৌথভাবে দ্রুত সেখানকার অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব পালন করবে।
কিন্তু ন্যাটোর কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুরোধে সাড়া দেয় নি। ফ্রান্স, ইতালি ও তুরস্ক আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সৈন্য পাঠাতে চায় না। কেবল বৃটেন দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিপদজনক অঞ্চলে সৈন্য পাঠিয়েছে। আফগান সমস্যার ব্যাপারে বৃটেনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। ২০০৮ সালের বসন্তকালে বৃটেন ইরাকে মোতায়েন তার সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে ২৫০০ জনে নিয়ে এসেছে। তারা ইরাক থেকে প্রত্যাহার করা সৈন্যদের আফগানিস্তানে পাঠিয়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে মোতায়েন বৃটিশ সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ৭৭০০। এ সংখ্যা ন্যাটো বাহিনীর মোট সংখ্যার ১৫ শতাংশ। ব্রাউন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে আরো কিছু হেলিকপ্টার ও অন্যান্য সাজসরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৃটেনসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠানোর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তি রক্ষা করা, যুদ্ধ করা নয়। কিন্তু আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির কারণে বৃটিশ সৈন্য ও তালিবানের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে বৃটেন সরকার বিরাট চাপেরও সম্মুখীন হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাউন সরকারকে ইরাক সমস্যায় টনি ব্লেয়ারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। ব্রাউনকে সযত্নে আফগানিস্তানসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। সব দিক সার্বিকভাবে বিবেচনা করলে আফগানিস্তান সমস্যায় বৃটেনের যুক্তরাষ্ট্রকে আরো অতিরিক্ত সাহায্য দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|