v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-06 20:30:52    
চীনের ছুং ছিং শহরে কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের কাহিনী

cri

    পম্চিম চীনের ছুং ছিং শহর হচ্ছে চীনের সবচেয়ে তরুণ কেন্দ্রশাসিত মহানগর । বর্তমানে ছুং ছিং ধাপে ধাপে ইয়াং সি নদীর উচ্চ অববাহিকার একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ছুং ছিংয়ের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে । এখন ক্যানাডা , জাপান , বৃটেন , কাম্পুচিয়া ও ডেনমার্ক ছুং ছিংয়ে তাদের কনস্যুলেট খুলেছে । এভাবে পশ্চিম চীনে এ শহরে বিদেশী কনস্যুলেটের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি । বিদেশী কূটনীতিকদের চোখে ছুং ছিং শহর কি রকম ? তারা কেমন করে সেখানে জীবনযাপন করছেন ? এ সম্পর্কে জানার জন্যে আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি ছুং ছিংয়ে জাপানী ও বৃটিশ কনস্যুলেট জেনারেলে গিয়েছেন । এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন শোনাচ্ছি আমি শি চিং উ ।

    ছুং ছিংয়ে জাপানী কনস্যুলেট জেনারেল শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি বাণিজ্যিক অফিসভবনের ৩৭তলায় অবস্থিত । তাদের অফিস সরল ও অমায়িক । বৈঠকঘরে আমাদের সংবাদদাতা সহকারী কনস্যুল জেনারেল শিগেরু তোইয়ামার সাক্ষাত্কার নিলেন । তিনি ধুষর রংয়ের স্যুট পরেন । তিনি শান্তশিষ্ট ও ভদ্র ছিলেন । ভালো করে না দেখলে আপনি মনে করবেন , তিনি একজন চীনা লোক । তিনি প্রায় এক বছর আগে ছুং ছিংয়ে আসেন । এখন তিনি ছুং ছিংকে আরো বেশি করে পছন্দ করে ফেলেছেন । তিনি বলেন ,

     ছুং ছিংয়ে প্রায় দু' শ' জাপানী নাগরিক স্থায়ীভাবে বসবাস করেন । সাধারণভাবে বলতে গেলে , জাপানীরা এখানে আসার পর প্রথম দিকে এখানকার গরম আবহাওয়া , ঠান্ডা শীত মৌসুম ও ঝাল খাবারে অনভ্যস্ত ছিলেন । তবে কিছু দিন পর তারা ছুং ছিয়ের মনোরম নিসর্গ , সুস্বাদু খাবার ও সুন্দরী মেয়েকে উপভোগ করতে শুরু করেন । আমিও তাদের ব্যতিক্রম নই ।

    ১৯৭২ সালে চীন ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠিত হয় । জাপানী সরকার চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে দূতাবাস খুলেছে এবং তর পর পরই শাংহাইসহ তিনটি শহরে কনস্যুলেট জানারেল খুলেছে । গত শতাব্দির শেষ দিকে জাপানী সরকার চীনের চতুর্থ কেন্দ্রশাসিত মহানগর ছুং ছিংয়ে একটি কার্যালয় খুলে । ২০০৫ সালে কার্যালয়টি কনস্যুলেট জেনারেলে উন্নীত হয় । এ কনস্যুলেট জেনারেল ছুং ছিংয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান , কুই চৌ ও ইয়ুন নান প্রদেশের ব্যাপারাদিও দেখাশোনা করে । গত শতাব্দির আশির দশক থেকে জাপানের মোটর গাড়ি ও মোটর সাইকেল উত্পাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছুং ছিংয়ে কারখানা স্থাপন করতে শুরু করে । আজ ছুং ছিং শহরে মোটর গাড়ি , মোটল সাইকেল , আইটি ও রাসায়নিক শিল্পসহ শতাধিক জাপানী পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে । তাছাড়া জাপানের কিছু ছোটখাটো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও ছুং ছিংয়ে চালু আছে । জাপানের কনস্যুলেট জেনারেল মাঝেমধ্যে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও চীনে পুঁজি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অন্য জাপানী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ছুং ছিংয়ের অর্থনৈতিক অবস্থা , পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ ও নীতিমালা সম্বলিত তথ্য সরবরাহ করে থাকে ।

    ছুং ছিংয়ে জাপানের সহকারী কনস্যুল জেনারেল তোইয়ামা পেইচিং ও শাংহাইয়েও স্থায়ীভাবে কাজ করেছেন । তাছাড়ি তিনি প্রায়সই চীনের অন্য শহরগুলোতেও ভ্রমণ করতে গেছেন । তিনি মনে করেন , কিছু ক্ষেত্রে উপকূলীয় শহরের তুলনায় ছুং ছিংয়ের দুর্বলতা থাকলেও তার ভালো দিকও খুবই উল্লেখযোগ্য । তিনি বলেন ,

    প্রথমত ছুং ছিংয়ের সুগভীর ও পূর্ণাগ শিল্পগত ভিত্তি রয়েছে । দ্বিতীয়ত ছুং ছিংয়ের ব্যাপক ভোক্তা বাজার রয়েছে । তৃতীয়ত ছুং ছিংয়ের শ্রম শক্তি সস্তা ও প্রকৃতি ভালো । গত কয়েক বছরে চীনের অধিকাংশ উপকূলীয় শহরের পুঁজি বিনিয়োগের দাম বেড়ে চলেছে । তাই কোনো কোনো জাপানী শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের পুঁজি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে । এটি ছুং ছিংয়ের জন্যে যেমন একটি চ্যালেঞ্জ , তেমনি একটি সুযোগও বটে । এখন অর্থনীতির বিশ্বায়ন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হচ্ছে । এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমি আশা করি , ছুং ছিংও নিজের অবস্থান দখল করতে পারে । আমি মনে করি যে , ভবিষ্যতে জাপান ও ছুং ছিংয়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মোটর গাড়ি ও মোটল সাইকেল শিল্পের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক তথ্য , পরিবেশ সংরক্ষণ , রাসায়নিক শিল্প ও খচরা বিক্রির ক্ষেত্রেও সহযোগিতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে ।

    অবসর সময় তোইয়ামা নানা উপায়ে ছুং ছিংয়ের বহু বন্ধুকে পেয়েছেন । তিনি ফুটবলকে পছন্দ করেন । তিনি সবসময় ছুং ছিংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগে নানা ধরণের ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন । একবার ফুটবল খেলার সময় অসাবধানবশত তার পা জখম হয় । চিকিত্সার জন্যে তিনি একটি হাসপাতালের সংগে যোগাযোগ করলেন । একজন চীনা চিকিত্সক তার জখম পার অবস্থা জানার পর স্বতস্ফুর্তভাবে তার জন্যে একজন শিল্য চিকিত্সকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন । শুধু তাই নয় , তিনি নিজের বান্ধবীকে পাঠিয়ে গাড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন এবং বাড়িতে নিয়ে যান । এ কথা স্মরণ করে আজও তিনি অভিভূত । ছুং ছিংবাসীদের উত্সাহ ও অতিথিপড়ায়ণতা তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেন ,

    সাধারণভাবে ছুং ছিংবাসী খুবই সংযমী ও উদার । তারা অতিথিপড়ায়ণ । এখানে বেশি দিন না থাকলেও আমি বেশ কিছু চীনা বন্ধু পেয়েছি ।

    ছুং ছিংয়ে ব্রিটিশ কনস্যুল জেনারেল নিক ওয়েটিংহামের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আরো বেশি সংখ্যক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের দৃষ্টিকে চীনের উপকূলীয় শহর থেকে ইয়াং সি নদীর উচ্চ ও মধ্য অববাহিকা এবং অসংখ্য পাহাড়ে আবদ্ধ ছুং ছিংয়ের দিকে আকৃষ্ট করা । তিনি বলেন ,

   এখন চীনে বৃটেনের পুঁজি বিনিয়োগ খুব বেশি । ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ব্রিটেশ পুঁজি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশী । তবে অধিকাংশ পুঁজি বিনিয়োগ পূর্ব চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে কেন্দ্রভূত রয়েছে । পশ্চিম চীনের তুলনায় ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা সেসব অঞ্চল সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন । আমার দায়িত্ব হচ্ছে পশ্চিম চীনের সুযোগ সুবিধা ও পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে তাদেরকে আরো বেশি তথ্য দেয়া ।

    ২০০০ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বৃটেন প্রথম ছুং ছিংয়ে কনস্যুলেট জেনারেল খুলেছে । ওয়েটিংহামের জন্যে চীনে তার কূটনীতিকের জীবনে একটি তার তৃতীয় ধাপ । ২০০৭ সালে কনস্যুল জেনারেল নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি কুয়াং চৌ ও পেইচিংয়ে ৫ বছর ধরে কাজ করেছেন । ছুং ছিং আসার পর তিনি সহজে কুয়াং ও পেইচিংয়ের সংগে ছুং ছিংয়ের পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন । ছুং ছিংয়ের অধীনে বিশাল গ্রামাঞ্চল রয়েছে । তিনি বলেন , চীনের কেন্দ্রীয় সরকার শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্যে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এটি বৃটিশ পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্যে একটি ভালো সুযোগ । তিনি বলেন ,

    প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওয়ের উত্থাপিত বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভংগী এবং সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তোলার ধারণা চীনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ । তার মধ্যে শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমানো একটি উল্লেখযোগ্য দিক । এ ক্ষেত্রে দু দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে ।