ভারত থেকে চীনে আসা যুবক চৌধুরী দিলিপ গীরিধর মধ্য চীনের সান সি প্রদেশের থাই ইয়ান শহরকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন । তিনি সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী ভাষা শেখান , এর পাশা পাশি তিনি ভালোভাবে চীনের কুংফুও শিখেছেন ।
আমার চীনা নাম হল ছেন আই লুং । কারণ লুং এ শব্দটি মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি ও শিল্পের রূপ পায়। লুংও আমার প্রিয় নায়ক ব্রুস লি'র প্রতীক । আমি চীনের সংস্কৃতিকে খুব পছন্দ করি , আমি ব্রুস লিকেও অনেক পছন্দ করি । অবশ্যই চীনকেও ভালোবাসি । তাই আমার চীনা নাম হল ছেন আই লুং ।
অনেক বিদেশিদের মত চীনের কুংফু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দিলীপ চীনের সংস্কৃতিকে ভালোবেসেছেন । তিনি বলেন
আমি আসল চীনা সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করতে চাই , আমি চীনের কুংফু শিখতে আগ্রহী । আমি কোনো এক দিন সত্যিসাত্য চীনে আসার স্বপ্ন দেখতাম । সেটা ছিল আমার স্বপ্ন । আমি চীনে আসতে এবং নিজ চোখে চীনকে দেখতে খুবই আগ্রহী ছিলাম ।
২০০২ সালে মধ্য চীনের সান সি প্রদেশের নর্মোল স্কুলের একটি আমন্ত্রণ পত্র দিলীপের চীনে আসার স্বপ্নকে পূরণ করেছে । তিনি মৌখিক ইংরেজী ভাষার একজন শিক্ষক হিসেবে চীনে এসেছেন । চীনে আসার আগে তিনি শুধু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চীনের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব সামান্য জানতেন । তাই যখন তিনি পেইচিং আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বাইরে এলেন তখন তিনি খুব অবাক হয়েছেন ।
যখন আমি প্রথম বারের মত ভারত থেকে চীনে আসি , তখন আমি ভেবেছিলাম যে হয়তো রাস্তায় ঐতিহাসিক নির্মাণ দেখা যাবে , লোকজন হয়তো ঐতিহ্যিক কাপড় পরে হাটছে । তবে যখন আমি পেইচিংয়ে এলাম , দেখলাম এ পেইচিং চলচ্চিত্রের সেই পেইচিং একদম আলাদা । এ শহর খুবই আধুনিক এবং আন্তর্জাতি মানের ।
প্রথম চীনে এসে চন্দ্রারি এখানকার জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হয়েছে । চীনে আসার প্রথম সপ্তাহেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন । সে সময় তিনি চীন ছেড়ে যাওয়ার কথাও চিন্তা করতেন । তবে তাঁর চীনা বন্ধু সক্রিয়ভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার অনেক যত্ন নেন । এর কারণে দিলীপের চীনের জীবনের প্রতি আস্থাব্যঞ্জক হয়ে উধেন । স্থানীয় জীবনের সঙ্গে খাপ খাপওয়ানোর জন্য দিলীপ চীনা ভাষা শেখা শুরু করেন এবং চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো বেশি শেখেছেন ।
নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দিলিপ অবসর সময়ে কুংফু শিখতে শুরু করেন এবং চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করেন । কুংফু শেখার পাশাপাশি তিনি নিজের উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং চীনের কুংফুর মর্মকথা উপলব্ধি করেছেন । তিনি বলেন
কুংফু শিখলে তার নিজের মনে শান্তি লাগবে । অন্যকে আঘাত করার জন্য কুংফু শিখেছি তাই নয় , কুংফু শেখার কারণ হল যে মানুষকে ভালোবাসে , তাকে রক্ষা করা । কুংফু নিজেকে আরো প্রাণাবন্ত করে তুলতে পারে । আমার কাছে কুংফুর উদ্দেশ্য তাই । আমার মনে হয় তা ড্রাগন মর্মেরও প্রকাশ ।
এখন চীনে দিলীপের চাকরি ও জীবনও আরো সুষ্ঠু হয়েছে। ২০০৬ সালে পেইচিইং টেলিভিশন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে বিদেশিদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দিলীপের অভিনীত কুংফু অনুষ্ঠান তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এরপর চীনা দর্শকদের কাছে ভারতীয় এ যুবকের পরিচয় হয়েছে । দিলীপের গাওয়া ভারতীয় গান , তার অভিনয় ভারতীয় নাচ , ইউগা এবং চীনের ঐতিহাসিক কুংফু দর্শকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে । একজন চীনা দর্শক দিলীপের অভিনয় দেখার পর নিজের অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন
আমার মনে হয় দিলীপের অভিনয় দেখার সময় আমার মন মুগ্ধ ছিল । মুগ্ধ হওয়ার কারণ হল চীনের কুংফুর প্রতি একজন বিদেশির ভালোবাসা এবং চীনা সংস্কৃতির প্রতি একজন বিদেশির এতো আগ্রহ ।
গত দু'বছরে চীনের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল দিলীপকে টি ভি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে । চীনের কুংফু পারা এ ভারতীয় যুবকের অভিনয় চীনা দর্শকদের পছন্দ হয়েছে এবং প্রশংসা পেয়েছে । এত প্রশংসার পরও দিলীপের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পদযাত্রা থেমে যায় নি । এখন প্রতিদিনই অনেক ব্যস্ত থাকেন দিলীপ । ক্লাস নেয়ার পর তিনি অভিনয়ের নতুন পদ্ধতি শেখার প্রয়াস চালাচ্ছেন ।
দিলীপ বলেন , চীন ও ভারত হল সুপ্রতিবেশি দেশ । দু'দেশই উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ । ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে ভারতের একজন ডাক্তার কোতনিস দ্বারকানাথশান্তারাম ভারতের চিকিত্সা দলের সঙ্গে চীনে আসেন এবং চীনের জাপান বিরোধী যুদ্ধকে সমর্থন করেন । তিনি এখনও দু'দেশের জনগণের কাছে মহা বীর । দিলীপ বলেন , তিনিও ডাক্তার কোতনিস দ্বারকানাথ শান্তারামের মত ভারত ও চীনের মৈত্রী বাড়ানোর জন্য নিজের ভূমিকা পালন করতে চান । তিনি বলেন
ভবিষ্যতে আমি একটি কোম্পানী খুলতে চাই । এ কোম্পানীর মাধ্যমে দু'দেশের সংস্কৃতি , শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিনিময় করা সম্ভব হবে । আমি চীন ও ভারতের একটি সেঁতু হতে চাই এবং চীন সম্পর্কে ভারতীয় জনগণের উপলব্ধি বাড়ানোর জন্য দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক । আমিও আশা করি আরে বেশি ভারতীয় ছাত্রছাত্রী চীনে লেখাপড়া করতে আসবে । যাতে তারা চীনের সংস্কৃতি ও শিল্প সম্পর্কে জানতে । চীনা ছাত্রছাত্রীরা ভারতে গিয়ে আই টি ও প্রযুক্তিগত বিজ্ঞানও শিখতে পারবে । এমন বিনিময়ের ফলে খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালিত হবে ।
|