আজ হচ্ছে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যিক উত্সব – বসন্ত উত্সবের আগের দিন । এদিন চীনারা পুরনো বছরকে বিদায় দেয়া এবং নববর্ষকে বরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন । এ বছর চীন সরকার এ দিনকেও সাতদিনব্যাপী ছুটির অন্তর্ভূক্ত করেছে । এভাবে বসন্ত উত্সবের প্রস্তুতির জন্য চীনারা আরো বেশি সময় পাচ্ছেন ।
চীনাদের জন্যে বসন্ত উত্সবের তাত্পর্য পশ্চিমাদের বড় দিনের মত গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিবছর বসন্ত উত্সব আসার প্রাক্কালে চীনের বিভিন্ন স্থানের লোকজন নানা ধরণের খাবার কেনা , বসন্ত উত্সবের শ্লোক ও লন্ঠন টাংগানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন । এ বছর বসন্ত উত্সব আগমনের আগে দক্ষিণ চীনের বেশ কয়েক অঞ্চল স্মরণকালের মধ্যে প্রবল তুষার ও বৃষ্টিপাত এবং হিমবাহ কবলিত হলেও চীনাদের এ ঐতিহ্যিক উত্সব পালনের উত্সাহে এতটুকু ভাটা পড়ে নি । যেসব যাত্রী খারাপ আবহাওয়ার কারণে সময়মত নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছতে পারেন নি , চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় সরকার তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে , যাতে তারা একটি সুখী উত্সব পালন করতে পারেন ।
দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের রাজধানী হাই খৌর মিস্টার ওয়াং ওন সুয়ান হাই নান মোবাইল কোম্পানির একজন কর্মী । অতীতে তিনি সবসময় বসন্ত উত্সবের আগের দিনে ছুটি হওয়ার পর তাড়াহুড়া করে কর্মস্থল থেকে তার দেশের বাড়ি – ওয়ান নিং শহরে যেতেন । তিনি বলেছেন , আগে তিনি কোনোদিন বসন্ত উত্সবের জন্যে খাবার-দাবার কেনার অবসর পেতেন না । তবে এ বছর এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে । তিনি বলেন ,
অতীতে বসন্ত উত্সবের আগের দিন ছুটি ছিল না । আমার বাবা মা সবসময় খাবার-দাবার কিনে নিতেন । এ বছর ছুটির সময় একদিন এগিয়ে নেয়া হলো । এটি আমার জন্যে খুব সুবিধাজনক হয়েছে । এবার বাড়ির জন্যে আমিও কিছু করতে পারছি । আনন্দের সংগে উত্সব পালনের জন্যে এবার আমি অবশ্যই বেশি বেশি আতশবাজি কিনে নেবো । ওয়াং ওন সুয়ানের মত অধিকাংশ চীনা বিশেষ বিশেষ জরুরী কাজ না থাকলে প্রায়সই বসন্ত উত্সবের আগের দিনে বাড়িতে পৌঁছে আপনজনদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেন ।
ওয়াং চি মিন এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে পেইচিংয়ে চাকরী পেয়েছে । এবার তিনি বহু আগে থেকে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ি চিয়াং সু প্রদেশের ছাং সুতে ফিরে আসল এবং আপনজনদের সংগে উত্সব পালন করবে । আজ সকালে সে বাবা মার সংগে দাদীর বাড়িতে এসে সন্ধ্যার খাবার তৈরির কাজ শুরু করে । তিনি বলেন ,
আমার দাদী , ফুপু মা ও চাচী রান্নার কাজ করেন । আমার মা খুব সকাল থেকে প্রস্তুতির কাজ শুরু করেন । মাছ , মাংস ও মুরগী কয়েকদিন আগে কেনা হয়েছে । আমার দাদীও রান্না ঘরে ব্যস্ত রয়েছেন । আমার চাচা গ্রাম থেকে একটি বেশ বড় মাছ নিয়ে এসেছেন । স্থানীয় রীতিনীতি অনুসারে বসন্ত উত্সবের আগের দিনের খাবারে হাস-মুরগী , মাছ ও মাংস অবশ্যই থাকতে হবে । ওয়াং চিয়ে মিন বলেন , তার পরিবারে চার প্রজন্মের সদস্য রয়েছেন । এদিনে গোটা পরিবারের বিশ বাইশজন সদস্য সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করবেন ।
বস্তুত চীনের বিভিন্ন স্থানে নিজের নিজের উত্সব পালনের রেওয়াজ রয়েছে । যেমন হুনান প্রদেশের অধিবাসীরা সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়ার পর টিভি সেটের সামনে বসে চীনের কেন্দ্রীয় টিভি কেন্দ্রের চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পছন্দ করেন । দক্ষিণ – পশ্চিম চীনের কুয়াং সি চুয়াং জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসন্ত উত্সবের সময় চুয়াং জাতির লোকেরা নিজেদের বাড়ির সামনে অগ্মুত্সবে মেতে উঠেন । তখন আগুণ সারা রাত জ্বলতে থাকে । শেন সি প্রদেশের রাজধানী সি আনে অনেক লোক উত্সবের সময় শহরের ঘন্টা ভবনের নিচে গিয়ে নববর্ষের ঘন্টার আওয়াজ শুনতে যান এবং নতুন বছরের জন্যে নিজেদের শুভ কামনা করেন । হাইখৌর ওয়াং ওন সুয়ানের ছেলে ওয়াং রেন হান আমাদের সংবাদদাতার সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় তার আন্তরিক আকাংক্ষার কথা ব্যক্ত করেছেন । আমাদের সংবাদদাতা তাকে প্রশ্ন করেন , ২০০৮ সালে আপনার কি আকাংক্ষা আছে ? উত্তরে তিনি বলেন , আমি পেইচিংয়ে যাবো । সংবাদদাতা প্রশ্ন করেন , পেইচিংয়ে কি থাকবে ? উত্তরে তিনি বলেন অলিম্পিক গেমস । সংবাদদাতা প্রশ্ন করেন , আপনি কি খেলোয়াড়দের জন্যে উত্সাহ দেবেন ? তিনি বলেন , হার্ডলস রেসের প্রতিযোগিতায় আমি লিউ সিয়াংকে উত্সাহ দেবোই ।
|