৫ ফেব্রুয়ারী শাদের রাজধানী এনজামিনা মোটামুটি শান্ত ছিল। কিন্তু সরকার-বিরোধী বিদ্রোহিদের নতুন আক্রমণের ভয়ে ৫০ হাজারেরও বেশী লোক রাজধানী এনজামিনা থেকে প্রতিবেশী দেশ ক্যামেরুনে চলে গেছে। তা ছাড়া আরও কয়েক হাজার লোক এনজামিনার পাশাপাশি এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। রাজধানী এনজামিনায় খাদ্য ও পানীয় জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টায় শাদের পরিস্থিতি এখন কিছুটা প্রশমিত হতে যাচ্ছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির আন্র্তজাতিক যৌথ কমিশন ৫ ফেব্রুয়ারী জেনিভায় ঘোষণা করেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারী থেকে এনজামিনা থেকে ক্যামেরুলনের খুসেরিতে আশ্রয় নেয়া শাদের শরণার্থীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২০ হাজারে । এসব শরণার্থীকে সাহায্য করার জন্য এই যৌথ কমিশন তার জরুরী ত্রাণ তহবিল থেকে ৩ লাখ সুইস ফ্রাংক বরাদ্দ করেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, শরণার্থীদেরকে প্রতিহত করার লক্ষ্যেশাদ সরকার ৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় শাদ সীমান্তের দুটো সেতু বন্ধ করে দেয়। শাদে সম্ভবত মানবিক সংকট দেখা দেবে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ানের উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা বিষয়ক সদস্য লুইস মাইকেল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, শাদের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের শরর্ণাথী ও অন্যান্য দরিদ্রদের জন্য ইইউ ২০ লাখ ইউরো প্রদান করেছে। জাতিসংঘ শরণার্থী কার্যক্রমও সাহায্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে। অন্য দিকে শাদের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রয়েছে। সংতরাং শাদের পরিস্থিতি এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। ৪ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শাদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর প্রকাশিত এক চেয়ারম্যান বিবৃতিতে শাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব , ঐক্য ও ভূভাগীয় অখন্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য চালানোপ্রয়াসকে সমর্থন করা হয়েছে ।এই বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের অনুরোধ করা হয়েছে। তা ছাড়া, এই বিবৃতিতে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার প্রবণতা প্রতিহত করার জন্য এ অঞ্চলের সকল দেশকে সহযোগিতা জোরদার করার জন্যওতাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নাউ কুছনার একই দিন শাদের সরকার-বিরোধী বিদ্রোহীদেরকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইদ্রিস দেরির নেতৃত্বে শাদ সরকার একটি বৈধ সরকার । সরকার-বিরোধী বিদ্রোহীরা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে না ।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোর্জ বলেন, ফ্রান্স তার দায়িত্ব বহন করবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, শাদে মোতায়েন ফ্রান্সেরসেনাবাহিনী সম্ভবত শাদ সরকারকে সশস্ত্র সহায়তা দিতে পারবে। বতর্মানে শাদে ফ্রান্সের মোতায়েন সেনাবাহিনীর সংখ্যা ১৪৫০ । এ ছাড়া, বেশ কয়েকটি জঙ্গী বিমানও আছে। সম্প্রতি শাদের সরকার-বিরোধী বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ নোরি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, সরকার-বিরোধী বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল ফ্রান্সের সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট দেবি নন। তিনি আরও বলেন, গত ২ ও ৩ তারিখের মধ্যে তুমুল লড়াইতে অনেক গাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও এনজামেনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মোতায়েন করছে। শরণার্থী ও গৃহহারীদেরকে রক্ষার জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে ইইউ শাদ ও মধ্য আফ্রিকায় ৩৭০০ সদস্যের একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাবে। আইজল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলি ওদেয়া ৫ ফেব্রুয়ারী বলেছেন, বতর্মানে শাদের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে বলে ইইউর শান্তিরক্ষী বাহিনী সম্ভবত ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শাদে পৌঁছুবে।
স্থানীয় প্রচার মাধ্যমগুলোর খবরে জানা গেছে, সরকার-বিরোধী বিদ্রোহীর কয়েক জন নেতা যুদ্ধ-বিরতিকে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, যুদ্ধ-বিরতির শর্ত হল ডেবির ক্ষমতা চ্যুতি।এক সাক্ষাতকারে শাদের প্রধানমন্ত্রী নুরু দ্দিন কৌমাকোয়ে দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ-বিরতি নিয়ে আলোচনার সত্যতা সম্পর্ককে করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত কয়েক দিনের যুদ্ধ-বিরতি থেকে বোঝা যায়, শাদের পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। বতর্মানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ ও মধ্যস্থতা অব্যাহত রয়েছে।
|