২০ বছর আগে, জেং ইয়ুয়েন চিয়ে'র লেখা গল্প "সুখ আর বেটা" শিশু এমনকি বড়দের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল। সুখ আর বেটা হলো দুটি সুন্দর আর সাহসী ইঁদুর। তারা অনেক দুঃসাহসী ভ্রমণ করেছে।
৫৩ বছর বয়স্ক জেং ইয়ুয়েন চিয়ে শিশুদের বই লেখেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর ৭০'র দশক থেকে রূপকথা লিখতে শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি নিজের ম্যাগাজিনের প্রকাশনা করতে শুরু করেন। এই ম্যাগাজিনের নাম "থুং হুয়া তা ওয়াং" অর্থাত "রূপকথার রাজা"। তাতে শুধু জেং ইয়ুয়েন চিয়ের নিজের লেখা রূপকথাগুলো প্রকাশিত হতো। ২৩ বছরে এই ম্যাগাজিন প্রায় ১০ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। মাত্র একজনের লেখা নিয়ে এতো দীর্ষ সময় ধরে একটি ম্যাগাজিনের এতো বিপুল পরিমান বিক্রি চীনে ইতিহাসে একমাত্র। এবং বিশ্বে বিরল। জেং ইয়ুয়েন চিয়ে বলেন, তার পরিবারিক শিক্ষা তাকে উত্সাহ যুগিয়েছে। তিনি বলেন:
"আমার এই অনুপ্রেরণা পরিবারের শিক্ষা থেকেই পেয়েছি। আমার মা একজন খুব বৈশিষ্টময় নারী। ছোটবেলা থেকে তিনি যে কথাগুলো আমাকে বলেছেন তা অন্য পরিবারের বাবা মা থেকে আলাদা। তাই ছোটবেলা থেকে আমার চিন্তাধারার সঙ্গে অন্য ছেলেমেয়েদের পার্থক্য আছে। আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা আমার সারা জীবনের উপর প্রভাব ফেলেছে। যেমন আমি নিজের ম্যাগাজিন বের করে, তাতে শুধু নিজের লেখা প্রকাশ করেছি। এটি আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষার ফলাফল। এই শিক্ষার মূল অনুপ্রেরণা ছিল, অন্যদের থেকে ভিন্ন কাজ করা, নিজের বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলা।"
জেং ইয়ুয়েন চিয়ে'র জীবনের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। তিনি হোপেই প্রদেশের একটি সামরিক অফিসার পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। পরে তার পরিবার পেইচিংয়ে চলে আসেন। তিনি স্কুলে মাত্র ৪ বছর লেখাপড়া করেছেন, পরেবিমান বাহিনীতে ৫ বছর চাকরি করেছেন। বিমান নিয়ে উপরে জেং ইয়ুয়েন চিয়ে খুব আগ্রহী। তিনি বিমান বাহিনীতে চাকরি করার সময় বিমান মেরামতের কাজ করেছেন। বিমান বাহিনীর চাকরি শেষে তিনি একজন সাধারণ শ্রমিকের কাজ করেছেন। এই সময় তিনি প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন।
বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ লেখার পর জেং ইয়ুয়েন চিয়ে রূপকথা লেখার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন:
"আমি রূপকথা ভাল লিখতে পারি। যদিও মাত্র ৪ বছর পড়াশোনা করেছি। এটাও ভাল হয়েছে মনে করি। কারণ স্কুলে কম পড়ার কারণে আমার কল্পনা শক্তি বেঁচে আছে। এটি আমার জন্য একটি সুবিধা। কষ্ট না করেই আমি পুরষ্কার পেতে পারি এমনভাবে আমার আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে।"
জেং ইয়ুয়েন চিয়ে'র লেখা বই'র মধ্যে "ফি ফি লু'র গল্প", "লু সি সি'র গল্প" এবং "সুখ ও বেটা'র অভিযাত্রা" সবচেয়ে বিখ্যাত। ফি ফি লু ও লু সি সি হলো ভাই আর বোন। তারা সরল এবং দুষ্টুমিতে ভরা। সব কিছুতেই তাদের আগ্রহ। ইঁদুর সুখ ও বেটা হলো ঐ দুই ভাইবোনের ভাল বন্ধু। তারা মানুষের ভাষা বলতে পারে। তাছাড়া খুব বুদ্ধিমান, সাহাসী এবং দয়ালু। সুখ বিমান চালায় এবং বেটা ট্যাংক চালায়। তারা সব সময় অন্যদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
চীনের আগের প্রবন্ধগুলোতে ইঁদুর সম্বন্ধে ভাল কথা খুব কম। জেং ইয়ুয়েন চিয়ে তাই একটি সুন্দর ইঁদুরের গল্প লিখতে চান। তিনি বলেন:
"ছোটবেলায় যে রূপকথাগুলি পড়েছি তাতে চরিত্রকে শুধু ভাল আর খারাপ দুই রকমে ভাগ করা হয়। নেকড়ে, ইঁদুর খারাপগুলোর মধ্যে, আর খরগোশ ও ভেড়া ভালগুলোর মধ্যে। আমার রূপকথা স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমি মনে হয়েছে আমি কি ইঁদুরের ভাবমূর্তি উন্নত করতে পেরেছি? আমার প্রথম ইঁদুর সংক্রান্ত গল্প হলো "হেলিকপ্টার চালক ইঁদুর"। যে ম্যাগাজিনে গল্পটি প্রকাশিত হয় তার সম্পাদকও পড়ে চোখে আটকে রাখতে পারেননি। তারপর আমি পুরষ্কার পেয়েছি। এরপর আমি সুক ও বেটার গল্প লিখতে শুরু করি।"
"হেলিকপ্টার চালক ইঁদুর" গল্পে সুক নামক একটি ইঁদুরের গল্প বলা হয়েছে। সুকের মা প্রতিদিন তার জন্য খাবার নিয়ে আসে, সুক শুধু উপভোগ করে। এক দিন তার মা তাকে নিয়ে খাবারের খোঁজে বের হয়। সুক তারপর বুঝেছে মা চুরি করে তাকে খাবার দেয়। সুক চুরি করতে চায় না, তাই একটি খেলনা হেলিকপ্টার চালিয়ে বাড়ি ত্যাগ করে। যাওয়ার পথে সবাই বলে ইঁদুর খুব খারাপ প্রাণী। এই কথা শুনে সুকের খুব মন খারাপ হয়। পরে সুক অনেককে সাহায্য করে সবার স্বীকৃতি আর বন্ধুত্ব আদায় করে নেয়।
"সুক ও বেটার গল্প" ১৯৮২ সাল থেকে জেং ইয়ুয়েন চিয়ে ১৩ বছর ধরে লিখেছেন। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সুক ও বেটা গল্প চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করা হয়। যেমন তাদের জার্মানী ভ্রমণ বা সফটওয়ার নিয়ে গল্প ইত্যাদি।
সুক ও বেটার গল্প ছাড়া জেং ইয়ুয়েন চিয়ে অন্য বিষয়ের গল্পও অনেক লিখেছেন। তার কল্পনা খুব সমৃদ্ধ। তার কল্পনার উত্স কী? এ নিয়ে জেং ইয়ুয়েন চিয়ে বলেন:
"আমি মনে করি মানুষ যত বড় হোক না কেন, শিশু'র মতো মন থাকা উচিত। নতুন জিনিসের উপর আগ্রহ, বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে যোগসূত্র তৈরির করার ক্ষমতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।"
জীবনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে মজার মজার বিষয় পাওয়া যায়। জেং ইয়ুয়েন চিয়ে মনে করেন আগ্রহ হলো সবচেয়ে ভাল শিক্ষক। সফল হওয়ার প্রক্রিয়ায় কল্পনা শক্তি দরকার। তার নিজের বাচ্চাকে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিও একেবারেই আলাদা। তিনি ছোটবেলায় বাচ্চাকে অনেক বেশি স্বাধীনতা দেন। তার ছেলে জেং ইয়া ছি এখন বড় হয়েছে, নিজেই "ফি ফি লু ক্লাস" খুলেছে। ক্লাসে শিশুদের প্রবন্ধ রচনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনেক বাবা মা ও শিশু ক্লাসে আসে। জেং ইয়ুয়েন চিয়ে তাদের কাছ থেকে অনেক আনন্দ পান। তিনি বলেন, চলতি বছর চীনের ইঁদুর বর্ষ, তিনি সুক ও বেটা অভিযান পুনরায় শুরু করতে চান। তিনি বলেন:
"যে গল্পটি আমি আবার শুরু করতে চাই তা হলো দুই প্রজন্মের গল্প। একটি ছেলের তার বাবা'র সঙ্গে সংঘাত হয়। এই সমস্যা সমাধানে সুক ও বেটা সাহায্য করে এবং এটি পরিবারের জন্য শিক্ষামূলক।"(ইয়াং ওয়েই মিং)
|