পার্কে আপনারা জলকেলিরত হংসমিথুন, রাজহংস এবং এক ধরনের ল্যাজ ঝোলা রঙীন পাখি দেখতে পাবেন। এখানে রয়েছে একটি পাখি থিয়েটার। সেখানে গেলে শুনতে ও দেখতে পাবেন পাহাড়ী ময়নার। অভিনন্দন, ময়ুরের নৃত্য। এ ছাড়াও পাখিগুলোর নানা ধরনের পরিবেশনা পর্যটকদের মুহুর্মুহু হাততালি পায়। পাখির কথা উদ্যানের দক্ষিণ-পূব দিকে রয়েছে একটি প্রাকৃতিক পাখি রাজ্য। ওপরে তাকালে পাখি গাছে পাখি, আকাশে উড়ন্ত পাখি, নীচে পানিতে ক্রীড়ারত পাখি শুধু পাখি আর পাখি। জানা অজানা বিচিত্র পাখি নিয়ে এ যেন এক পাখির স্বর্গ। পেইচিং থেকে আসা পর্যটক লি পিং বলেছেন—
প্রতি বছর এই দ্বীপে এতো পাখি মিলিত হয় যে এর মধ্যে অনেক পাখির নাম আমি জানি না। কিছু কিছু পাখি চিড়িয়াখানায়ও খুব কম দেখা যায়। এগুলো খুব বিরল।
পাখি দ্বীপ থেকে স্পিডবোটে করে কিছুটা গেলেই, বানর দ্বীপ উঁচু লাল-কাঠ গাছে, নীচু পাইন গাছে এবং পাথরে সারাক্ষণ বানরগুলো লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে। পর্যটকরা তাদের কাছে গেলে কিছু নির্ভীক বানর স্বাগত জানানোর ভঙ্গীতে তাদের কাছে গিয়ে চোখ বড় বড় করে পর্যটকদের হাতের জিনিস দেখে। পর্যটকরা বাদাম বা পানি মাটিতে রাখলে বানরগুলো তা খেতে থাকে। গাইড মি ইয়ে জানিয়েছেন—
এ গুলো থাই হাং শান পাহাড় থেকে আসা বানর। এটা হচ্ছে একটি গ্রুপ। এর মধ্যে রাজা বানর আছে। সাধারণত প্রতি ৪ বছর পরপর রাজা বানর নির্বাচন আয়োজিত হয়। সেখানে শক্তিশালী পুরুষ বানররগুলো প্রতিযোগিতা করে। যে বানর প্রতিযোগিতায় জেতে সে রাজা হয়। রাজা বানর কিছু কর্তৃত্বমূলক অধিকার আছে যেমন, খাবারে অগ্রাধিকার। রাজা বানর রাজার মতোই অন্য বানরদেরকে পাহারা দেওয়ার বা খাবার খুঁজে আনার জন্য হুকুমদারি করতে পারে। তাছাড়া, তার আরেকটি বিশেষ অধিকার হচ্ছে সুন্দর বানর নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা এবং অন্য বানর তাতে বাধ সাধতে কিংবা রাজার স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ প্রনয়ে জড়াতে পারবে না।
বানরদের ক্রীড়া পর্যটকদেরকে ভীষণ আনন্দ দেয়। অনেক পর্যটক সেখানে গেলে আর নড়তেই চায় না। প্রশ্ন হচ্ছে, থাই হাং শান পাহাড় থেকে আসা বানরগুলো কেন এখানকার পরিবেশের সঙ্গে এতো মানানসই এবং তাদের জীবন কেন পরম আনন্দময়? সংবাদদাতা এখানকার বানর পরিচর্যাকারী ওয়ান চিয়ান পিং-এর সঙ্গে দেখা করে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। ওয়াং চিয়ান পিং বলেছেন—
এখানকার নান ওয়ান জলাধারের পরিবেশ ও বৃক্ষরাজি বানরের বংশ বিস্তারের জন্য আদর্শ। এখানে গাছ অনেক বেশি। কয়েকশ' বছর থেকে কয়েক হাজার বছরের পুরনো গাছ রয়েছে। গাছের বৈচিত্র্যও অনেক ব্যাপক।
সিন ইয়াং-এর চা সংস্কৃতির কথা বলতে গিয়ে স্থানীয় মানুষ গর্ব করে সংবাদদাতাকে বলেন, সিন ইয়াং মাও চিয়ান হচ্ছে মূল্যবান সবুজ চা। এই চা-এর ইতিহাস ২ সহস্রাধিক বছরের। নান ওয়ান হ্রদে ছে ইয়ুন, চি ইয়ুন, লিয়ান ইয়ুন, ইয়ুন উ ও থিয়ান ইয়ুন মামের ৫টি পাহাড় আছে। এ ছাড়া, হেই বাই লোং থান ও শি হে কাং-এর উত্পাদিত সিন ইয়াং মাও চিয়ান চাও খুবই বিখ্যাত। এখানে চা উত্পাদন, চা তোলা, চা তৈরী, চা বিক্রি এবং চা পরিবেশনাসহ বহু ধরনের চা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
অবকাশ দ্বীপের আয়তন ১০হেকটর। আগে এই দ্বীপের নাম ছিল লি চিয়া মিয়াও দ্বীপ। ১৯৯১ সালে নান ওয়ান জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার পর, গ্রীষ্ম অবকাশ দ্বীপ বর্তমান নাম পেয়েছে। এই দ্বীপে গ্রীষ্ম অবকাশ কাটানোর জন্য কাঠের ঘর, ছুটি কাটানোর এলাকা, জাতীয় নাচগান পরিবেশন এলাকা, মাছ শিকার এলাকা, সাঁতার কাটার এলাকা ও স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের খাবারসহ বিভিন্ন ধরনের পর্যটন সুবিধা আছে। গ্রীষ্ম অবকাশ দ্বীপ হচ্ছে নান ওয়ান হ্রদ দর্শনীয় স্থানের সেরা দ্বীপ। প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। তাছাড়া, এই দ্বীপে সব ধরনের গাছ আছে। বসন্ত ও শরত দুটি ঋতুতেই, সুন্দর সুন্দর গাছের ছায়া হ্রদে প্রতিবিম্বিত হয়, যা নান ওয়ান পানিতে অতি প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
বন্ধুরা, এখন আমি নান ওয়ান হ্রদে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কয়েকটি টিপস দিচ্ছি। নান ওয়ান হ্রদ দর্শনীয় স্থান হো নান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এবং দক্ষিণ-পশ্চিম সিন ইয়াং শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। সিন ইয়াং শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ, পেইচিং-কুয়াং চৌ, পেইচিং-চিউলোং, ১০৬ ও ১০৭ জাতীয় মহা সড়ক এবং নির্মাণাধীন নিং সি (নান চিং—সি আন) রেল পথ শহরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। নান ওয়ান হ্রদ চীনের উত্তর ও দক্ষিণ জলবায়ু অঞ্চলের মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়া ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়। সুতরাং পর্যটকদের আবহাওয়ার খোঁজ খবর রেখে কাপড় পরতে হবে।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠানটি এখানই শেষ করছি। শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আগামীতে আবার দেখা হবে অন্য কোন দর্শনীয় স্থান থেকে।
|