প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা ভালো আছেন তো? আজ চীনের ঐতিহ্যবাহী চান্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন। আপনাদেরকেও জানাচ্ছি চীনা নববর্ষের শুভেচ্ছা। সারা চীন জুড়ে চলছে উত্সবের জোয়ার আর পরিবারিক পুনর্মিলনী। গত রাত থেকে চীনের আকাশ আতশ বাজির আলোয় আলোকিত। টানা সাত দিন ধরে চলবে সব অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে দেওয়ার এই মহোত্সব। এমনই এক আনন্দময় শুভক্ষণে আমি খোং চিয়া চিয়া এবং আমার সহকর্মী অমিত হাবিব 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আজ আমরা আপনাদেরকে মধ্য হো নান প্রদেশের সিন ইয়াং শহরের 'মধ্য চীনের প্রথম হ্রদ' নান ওয়ান হ্রদে নিয়ে যাবো। আশা করি, অনুষ্ঠানটি মন দিয়ে শুনলে আপনারাও হ্রদটিতে বেড়াতে যেতে চাইবেন।
১৯৯১ সালে নান ওয়ান হ্রদ দর্শনীয় স্থানের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত এখানে নির্মিত হয়েছে ১২টি দর্শনীয় স্থান। ১৬বছরের নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ইউয়ান। ১২টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, পাখি দ্বীপ, গ্রীষ্ম অবকাশ দ্বীপ, বাঁদর দ্বীপ, জলক্রীড়া উদ্যান, পশ্চিম পাহাড় দর্শনীয় স্থান ও মত্স্যাধার। এ সব জায়গায় আরামে যাতায়াত করার জন্য রয়েছে ছয় ছয়টি পরিবহন রুট। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। আয় হয় ৩ কোটি ইউয়ানের মতো। দর্শনীয় স্থানে পানি, বিদ্যুত, সড়কপথ, পরিবহনসহ সব সেবা ব্যবস্থা ও পর্যটন অবকাঠামো পূর্ণাঙ্গ করে তোলা হয়েছে। সুতরাং বেড়াতে গেলে 'খাওয়া, থাকা, ভ্রমন, কেনাকাটা ও বিনোদন' কোনোটারই কোনো কমতি থাকবে না।
সমৃদ্ধ বন, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্য, সুদৃশ্য দ্বীপপুঞ্জ ও বন্দর এবং দারুণ প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও নান ওয়ান হ্রদে সিন ইয়াং-এর বিচিত্র চা সংস্কৃতি ও নান ওয়ান মত্স্য সংস্কৃতি বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদেরকে এখানে টেনে নিয়ে আসে। নান ওয়ান হ্রদ দর্শনীয় স্থান প্রশাসন ব্যুরোর উপ-পরিচালক লিউ বিন জানিয়েছেন—
আমাদের নান ওয়ান হ্রদ দর্শনীয় স্থান হচ্ছে চীনের চার এ শ্রেণীর পর্যটন অঞ্চল। এছাড়াও এখানে রয়েছে জাতীয় জলসেচ দর্শনীয় স্থান এবং জাতীয় অরণ্য উদ্যান। একে বলা হয় মধ্য চীনের প্রথম হ্রদ। নান ওয়ান হ্রদের জলসীমার আয়তন ৭৫ বর্গকিলোমিটার এবং তা হাং চৌ-এর পশ্চিম হ্রদের ১২ গুণ বড়। হ্রদে পাখি দ্বীপ, বানর দ্বীপ ও গ্রীষ্ম অবকাশ দ্বীপসহ মোট ৬১টি ছোট বড় দ্বীপ আছে। দেখতে খুব সবুজ ও সুন্দর।
বন্ধুরা, চলুন প্রথমে আমরা সবচেয়ে বিখ্যাত পাখি দ্বীপ থেকে ঘুরে আসি। হ্রদের তীর থেকে স্পিডবোটে করে প্রায় তিন চার কিলোমিটার দূরে গেলেই চোখে ভেসে উঠবে সবুজে সবুজে ছাওয়া নয়নাভিরাম এক দ্বীপ। স্থানীয় মানুষেরা এই দ্বীপটিকে বলেন অষ্টনকশা পাহাড়। অষ্টনকশা পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ৫ কিলোমিটার দূরেই আরেক আকর্ষণ নান ওয়ান হ্রদের পাখি দ্বীপ। স্থানীয়রা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, পাখি দ্বীপের আগের নাম ছিল স্মৃতি খিলান দ্বীপ। ছিং রাজবংশের শেষ দিকে, ছাও শি নামে একজন মহিলা পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর তার স্বামী মারা যান। তারপর তিনি নিজেই সন্তানটিকে লালন-পালন করতে থাকেন এবং দ্বিতীয় বার আর বিয়ে করেন নি। রাজকীয় সরকার তার এই ত্যাগী মানসিকতার সম্মানে ঐ স্মৃতি খিলানটি তৈরি করেছিল। সে সময় থেকেই এর নাম হয়ে যায় স্মৃতিখিলান দ্বীপ। পরে এটি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় পাখির কাককাকলি যেন দিনে দিনে দ্বীপের নামটিও কেড়ে নেয়, স্মৃতিখিলান হয়ে যায় পাখি দ্বীপ।
পাখি দ্বীপের, প্রতিটি জায়গায় পাখির অবাধ বিচরন। এমন কোনো সময় নেই যখন পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় না। প্রতি বছর প্রায় এক লাখ পাখি উড়ে এসে দ্বীপটিকে পরিণত করে পাখির অবন্যে। স্থায়ী পাখিদের সঙ্গে অতিথিদের এই মহামিলনের কারণে দ্বীপটি খুব বিখ্যাত। কৌতূহল জাগানোর মতো বিষয় হচ্ছে, নান ওয়ান হ্রদের ৬১টি দ্বীপের মধ্যে কেন পাখিগুলো মাত্র এই একটি দ্বীপে থাকে, অতিথিরাও কেনইবা এখানে আসে। এর উত্তর খুব কঠিন নয়। এখানকার গাছগাছড়া খুব সমৃদ্ধ। এখানে বিশেষ এক ধরনের গাছ আছে, যার সুগন্ধ পাখিকে মাতাল করে তোলে। এই গাছের আকর্ষণেই পাখি এখানে বাস করতে পছন্দ করে এবং এখানেই বাসা তৈরি ও বংশ বিস্তার করে। তাছাড়া এখানে শাখা নদী ও খাঁড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। পাখি এখানে ছোট মাছ বা চিংড়ি মাছ খেয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে থাকে। এ সব কথা সত্য অতিথি পাখিদের বেলায়ও। একই নেশা ও আকর্ষণে প্রতি বছরের মার্চ থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ পাখি উড়ে এসে এখানে বসে। কিছুকাল আনন্দময় জীবন যাপন করে আবার চলে যায়।
পাখি দ্বীপে বেড়াতে গেলে, পর্যটকদের অবশ্যই 'পাখির কথা উদ্যান' পার্কে যেতে হবে। ২০০৪ সালে নির্মিত এই উদ্যানটির আয়তন ১৫ হাজার বর্গমিটার। এখানে ৩শ' প্রজাতির ১ হাজারেরও বেশি পাখি আছে।
|