দক্ষিণ চীনের টানা বৃষ্টি ও তুষার দুর্গত অঞ্চলের অধিবাসীদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে এবং কিছু কিছু অঞ্চলের অর্থনীতিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । চীনের অর্থনৈতিক বিভাগের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেন , তুষার ও বৃষ্টিটি ব্যাপক ক্ষতি হলেও এ দুর্যোগ চীনের অর্থনীতির বিকাশকে ব্যাহত করতে পারবে না ।
১০ জানুয়ারীর পর দক্ষিণ চীনের অনেক স্থানে গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিরল নিম্ন তাপমাত্রা , বৃষ্টি ও তুষারপাত দেখা দেয় । এতে চীনের দশ-বারোটি প্রদেশ গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । প্রায় ৬০জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে , প্রত্যক্ষঅর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪ শ' কোটি ইউয়ান । দুর্যোগ পীড়িত অঞ্চলে সঙ্গে সঙ্গেই ত্রাণকাজ শুরু হয় । বর্তমানে কিছু অঞ্চলের জনজীবন ও উত্পাদন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে ।
চীনের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির অর্থনীতি বিভাগের উপপ্রধান চু হোন রেন বলেন , যদিও এবারের দুর্যোগের ক্ষতি গুরুতর , তবে এটা চীনের অর্থনীতির উপর বেশি প্রভাব ফেলবে না এবং চীনের অর্থনীতির উন্নয়নের প্রবণতা থমকে যাবে না । তিনি বলেন , এবারের দুর্যোগ প্রধানতঃ দক্ষিণ চীনের কিছু অঞ্চলে ঘটেছে , কাজেই গোটা দেশের অর্থনীতির ওপরে এর ক্ষতিকর প্রভাব সীমিত । এ বছর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুকূল উপাদান অনেক বেশি । এ বছর চীনে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হবে , সারা দেশের মানুষ এর জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষায় রয়েছেন । দুর্যোগ পীড়িত অঞ্চল ছাড়া চীনের অন্যান্য অঞ্চল দুর্গতদের সাহায্য করার পাশাপাশি উত্পাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে ।
চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীর অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ হান মেন একই মত পোষণ করেন । তিনি বলেন , সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীল ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে । জি ডি পির বৃদ্ধি দ্রুততর হচ্ছে এবং মাথাপিছু আয় বাড়ছে । চীনের খাদ্যশস্যের উত্পাদন টানা চার বছর বেড়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঠিকমতই এগিয়ে যাচ্ছে । তাই আমি মনে করি এবারের দুর্যোগে চীনের অর্থনীতির উপর ক্ষতির পরিমান সীমিত । তা ছাড়া দুর্যোগ শীতকালে ঘটেছে বলে কৃষি ও শিল্প উত্পাদনের উপর প্রভাব খুব বেশি হবে না এবং পুনরুদ্ধার করতে বেশি সময় লাগবে না।
জানা গেছে , দুর্গত অঞ্চলের ত্রাণ কাজ সুশৃঙ্খলভাবে চালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে । দুর্গত মানুষের জীবনযাত্রা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে । চীনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে , বহু স্থানের দুর্যোগ অনেকটা কমেছে । দুর্যোগের পর দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করার জন্য সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ , সরবরাহ বৃদ্ধি ও পরিচালনা জোরদার করার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রাথমিক ফল পেয়েছে । চীনের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির অর্থনীতি বিভাগের উপপ্রধান চু হোন রেন বলেন , কেন্দ্রীয় সরকার বিপুল পরিমান খাদ্যশস্য , মাংস ও শাকসব্জি সংগ্রহ করে দুর্যোগ অঞ্চলে পাঠিয়েছে । এটা দুর্গত অঞ্চলের পণ্যমূল্য স্থিতিশীল করতে সাহায্য করেছে । এখন দুর্গত অঞ্চলে খাদ্যশস্য ও মাংসের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ।
চীনের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের একটি খবরে বলা হয়েছে , আগামী এক সপ্তাহে দুর্গত অঞ্চলের আবহাওয়া ভালোর দিকে যাবে । এটা দুর্গত অঞ্চলের ত্রাণ কাজের জন্য সুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করবে । পরিবহণ বিভাগ অনুকূল আবহাওয়া কাজে লাগিয়ে সড়ক ও রেল পরিবহন পুরোপুরি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে এবং স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রী ও ত্রাণ সামগ্রী যথাসময় গন্তব্যস্থলে পাঠাবে । বিদ্যুত বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুত সরঞ্জাম মেরামত করবে এবং দুর্যোগ পরবর্তী উত্পাদনের জন্যপ্রস্তুতির কাজ চালাবে ।
অর্থনীতিবিদ হান মেন বলেন , জ্বালানী , শিল্প ও শহরের অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ক্ষেত্রে আমাদের আরো বেশি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জরুরী ভিত্তিতে দুর্যোগ মোকাবেলার ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে ।
|