সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লিয়াওনিং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে বহুমুখী উন্নয়ন চালু হওয়ায় আঞ্চলিক অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফলে কৃষকদের আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেড়েছে। লিয়াওনিং প্রদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকার কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য বর্তমানে আরো ভালো ও কার্যকর পদ্ধতি অনুসন্ধান করছে।
লিয়াওনিং প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের ফাখু জেলায় ২০০১ সালে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নয়ন এলাকা গড়ে তোলা হয়। স্থানীয় আবহাওয়া এবং জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফাখু জেলার অর্থনীতি ও প্রযুক্তিবিদ্যা উন্নয়ন এলাকায় বিপুলভাবে গাঁদা ফুল ও বৈচিসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশী পুঁজি আকর্ষণ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং চীনা-মাটি তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এসব পণ্য দেশে বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। আঞ্চলিক অর্থনীতির উন্নয়ন শুধু কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে, তাই নয়, বরং স্থানীয় কৃষির উত্পাদন পদ্ধতি বদলে ফেলেছে এবং স্থানীয় কৃষকদের আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে।
লিয়াওনিং প্রদেশের অর্থনীতি বরাবরই ভারী শিল্প নির্ভর ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্পের সঙ্গে কৃষির স্থিতিশীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন বাস্তাবায়নের জন্য প্রাদেশিকসরকার অর্থনীতির বহুমুখী উন্নয়নে উত্সাহ দিয়ে আসছে। লিয়াওনিং প্রদেশের ফোংছেং শহরের তা লি শু গ্রাম যৌথ অর্থনীতি উন্নয়নের মাধ্যমে সারা গ্রামের কৃষকদের সচ্ছল হওয়ার পথে নিয়ে গেছে।
তা লি শু গ্রামের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে পাহাড়। প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভাল নয়। কিন্তু সেই গ্রামের মানুষ পার্টি সম্পাদক মাও ফোংমেই-এর নেতৃত্বে জমির অবস্থা অনুযায়ী ফলের চাষ করেন। এ গ্রামের ১৮০০ হেক্টরপাহাড় পরিণত হয় ফলের বাগান। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ফলের বাগান ফুল ফুলে যায় এবং শরতকাল এলেই পরিপক্ক হয়ে ওঠে ফল। প্রতি বছর অনেক পর্যটক তা লি শু গ্রাম ভ্রমণ করেন এবং গাছ থেকে ফল পেড়ে খান। পর্যটন খাতে আয় বাড়ানোর জন্য গ্রামে হোটেল, সম্মেলন কেন্দ্র, বাস্কেট-বল মাঠ এবং সিনেমা ও টিভি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। তা ছাড়া, গ্রামে সাত শতাধিক হেক্টর জায়গাজুড়ে ভেষজ ঔষুধ উ ওয়েই জি'র ঘাটি এবং রাসায়নিক সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি গাড়ির সাজ-সরঞ্জাম কারখানা এবং বাজারসহ সেবা শিল্পেরও উন্নয়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্প তা লি শু গ্রামের গ্রামবাসীদের জন্য কল্যাণ ব্যয়ে এনেছে।
বর্তমানে তা লি শু গ্রামের ৪ শতাধিক পরিবারের কৃষকরা পাকা বাড়িতে বসবাস করেন। ৪০টিরও বেশি পরিবার গাড়িও কিনেছে। লি ছিংচোং হচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রামে যৌথ অর্থনীতির উন্নয়নের কারণে জীবনযাপনের পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
আমাদের পরিবারে মোট ৬ জন সদস্য। প্রতি বছর মাথাপিছু নিট আয় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার রেনমিনপির মতো। আমরা প্রধানত উ ওয়েই জি'র চাষ করি। আমাদের এখন ৪ হেক্টর জমি আছে। প্রথমে সবজি ও ফলের চাষ করেছিলাম। এখন উ ওয়েই জির চাষ করছি। এখন স্বচ্ছল হওয়ার পথে রয়েছি। গাড়ি এবং পাকা বাড়ি আছে।
লি ছিংচোং ঔষুধ চাষের মাধ্যমে ধনী হয়েছেন। কুয়ানসিন নামে আরেকজন গ্রামবাসী চাষ ছাড়াও, পরিবহণের মাধ্যমে নিজের জীবনকে স্বচ্ছল করে তুলেছেন। তিনি বলেন,
আমাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৪ জন। প্রতি বছর মাথাপিছু নিট আয় বিশ হাজার রেনমিনপির মতো। আমাদের কয়েকটি মালবাহী লরি আছে। আমরা অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি নিজের গ্রামের জন্যেও মালামাল ও পরিবহণ করি। প্রতি বছর আয় ভালো।
লিয়াওনিং প্রদেশের ফোংছেং শহরের তা লি শু গ্রামের পার্টি সম্পাদক মাও ফোংমেই মনে করেন, যৌথ অর্থনীতির উন্নয়ন তার গ্রামের কৃষকদের সচ্ছল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তিনি বলেন,
আমি মনে করি, যৌথ অর্থনীতি বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ের অর্থনীতি উন্নয়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যত আরো সুন্দর হবে। আমার লক্ষ্য শহরবাসীর চেয়েও কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
লিয়াওনিং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ অর্থনীতির মাধ্যমে উন্নয়ন এবং কৃষকদের আয় বাড়লেও আমাদের সংবাদদাতা সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় উপলব্ধি করেছেন যে, সেখানকার কৃষির ভিত্তি এখনো কিছুটা দুর্বল। গ্রামের উন্নয়নের ধীর গতির পুরোপুরি পরিবর্তন হয়নি। লিয়াওনিং প্রদেশের কৃষি কমিশনের উপ-পরিচালক লি চোংকুও সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় বলেন, লিয়াওনিং প্রদেশের যেখানে যৌথ অর্থনীতির উন্নয়ন ভাল, সেখানকার কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। তিনি বলেন, লিয়াওনিং প্রদেশের কৃষি উন্নয়ন একটি নতুন ঐতিহাসিক সূচনা-বিন্দুতে রয়েছে। কিভাবে কৃষকদের আয় বাড়ানো যায় এবং কিভাবে গ্রামের যৌথ অর্থনীতির উন্নয়ন করা যায় তা এখনো তাদের চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন,
গ্রামাঞ্চলে সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে কমপক্ষে দুটি শক্তির সম্মিলিত চেষ্টা দরকার। একটি হচ্ছে বহিঃশক্তি। আরেকটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ শক্তি। বহিঃশক্তি হচ্ছে সরকারের শক্তি এবং সমাজের শক্তি। তাহলে অভ্যন্তরীণ শক্তিটা কি? এটা কৃষক নিজেই। গ্রামাঞ্চলে যৌথ অর্থনীতি কিভাবে উন্নয়ন করা যায়? আমরা বাস্তবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসের মর্ম অনুযায়ী চেষ্টা করছি।
তা লি শু গ্রামের পার্টি সম্পাদক মাও ফোংমেই বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার কৃষির জন্য সহায়ক অনেক নীতি গ্রহণ করেছে এবং বরাদ্দও ব্যাপক বাড়িয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নকে সমর্থন করার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে তিনি এবং গ্রামবাসীরা আনন্দ বোধ করেন। তাঁরা আশা করেন, এসব নীতিমালা সবাস্তবায়িত হবে। যাতে কৃষকদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে নিরসন করা যায়। তিনি আরো বলেন,
পার্টির সপ্তদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর কৃষির উন্নয়ন ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করা।
মাও ফোংমেই বলেন, খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় কৃষকদের উপকার হয়েছে। কিন্তু বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষুধসহ উত্পাদন উপকরণের দামও বেড়েছে। ফলে কৃষকদের আয়ের প্রবৃদ্ধির মোট পরিমাণ কমে গেছে। তিনি আশা করেন, সরকার কৃষি উত্পাদনে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদেরকে আরো বেশি সুবিধা দেবে। ফলে আরো বেশি কৃষক চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাফল্য ভোগ করতে পারবেন। (লিলি)
|