v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-02-01 16:05:08    
আমি জানি, আমি পারি

cri
    ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ব বিশেষ অলিম্পিক গেমস চীনের বৃহত্তম সাংহাই শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । বিশেষ অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত এক টিভি বিজ্ঞাপন ছবিতে আমরা দৌঁড়প্রিয় মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে চাও চেনচেনের পরিচয় পাই । এখন এই ১৯ বছর বয়সী মেয়ে চীনের বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় ইয়াও মিং ও দৌড়বিদলিউ সিয়াংয়ের মতো সাংহাই শহরের বাড়িতে বাড়িতে বিখ্যাত তারকা হয়েছে । তার হাসিমাখা ছবি সাংহাই শহরের প্রতিটি অলিতে-গলিতে টাঙানো রয়েছে। একটার পর একটা তার গল্প সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । সে একশ' মিটারের দ্রুতগামী দৌঁড়বিদ পাওয়ারের সঙ্গে খেলেছে। বাস্কেটবল খোলোয়াড় ইয়াও মিংয়ের হাত থেকে তার স্বাক্ষরসম্বলিত জুতা গ্রহণ করেছে । লাংলাং এবং চাও ওয়েই ও মো ওয়েনওয়েইসহ বিখ্যাত তারকার সঙ্গে সে বিশ্ব বিশেষ অলিম্পিক গেমস সম্পর্কিত সংবাদসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে । মাত্র ৬ বছর বয়সী শিশুর আই কিউসম্পন্ন চাও চেনচেন তার আত্মবিশ্বাস ও নির্মল হাসি দিয়ে সবার মন জয় করেছে । তবে খুব কম লোক তাকে ভালভাবে জানেন ।

    ১৯৮৮ সালে চীনের সাংহাই শহরের একটি অতি সাধারণ পরিবারে চেনচেনের জন্ম হয় । বাবা মা চেনচেনকে খুবই আদর করতেন । তার বয়স যখন দু বছর তখন এক দিন বাবা মা চেনচেনকে নিয়ে এক ডাক্তার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যান । চেনচেনকে কিছু ক্ষণ মনোযোগের সঙ্গে দেখার পর এই ডাক্তার বন্ধু একটি কথা বললেন , মনে হয় চেনচেন বুদ্ধিমতি মেয়ে নয় । চেনচেনের বাবা মা কথাটা শুনে বিস্মিত হন , তবে তারা ভাবতে পারেননি যে, চেনচেনের অবস্থা এত গুরুতর ।

    সে বছরের বসন্ত উত্সব ছুটির পর মা মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে যান । ডাক্তার তাকে বলেন , চেনচেন বুদ্ধিমতি লোকের চেয়ে বোকা, তবে বোকা মানুষের চেয়ে চেনচেন বুদ্ধিমতি । নিজের আদুরের মেয়ে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে কথাটা মা চেনই গ্রহণ করতে পারেননি। তিনি মেয়েকে নিয়ে সাংহাই শহরের সব কটি হাসপাতালে ঘুরে বেড়িয়েছেন । ডাক্তারের কাছ থেকে চেনচেনের মা জানলেন, এ ধরণের জন্মগত রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর বুদ্ধি অতি ধীরধারেবাড়ে । বড় হলে তারা নিজেরা সব কিছু করতে সক্ষম হবে না । মেয়ে চেনচেনের ভবিষ্যত ভেবে মা চেন ই খুব দুঃখ পেলেন। চেনচেনের বাবা চেনচেনকে অনাথ আশ্রমে পাঠানোর প্রস্তাব করেন ।

    স্বামীর কথা শুনে চেনই মনে করেন, যদি চেনচেনকে অনাথ আশ্রমে পাঠানো হয় তাহলে তার ভাগ্য একেবারে পরিবর্তিত হবে । মেয়ে জন্মগত রোগে আক্রান্ত হলেও স্বামীর কথা শুনে চেন ই বুঝতে পারলেন , তিনি মেয়ে চেনচেনকে ছাড়তে পারবেন না । তিনি মনেমনে সিদ্ধান্ত নিলেন, যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে হলেও তিনি নিজের সব ভালবাসা দিয়ে মেয়েকে ব্যবহার করবেন ।

    কিন্তু চেনই জানেন না যে নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে কীভাবে শিক্ষাদান করতে হবে। চেনচেনের চরিত্র দিনদিন খারাপ হয়ে ওঠে । রাগ হলে সে এদিকে ওদিকে জিনিস ছুড়ে ফেলে এবং অন্য লোকের গায়ে থু থু ছিটিয়ে দেয় । তার দুষ্টুমি আশেপাশে লোকের মধ্যে অসন্তোষ জাগিয়ে তোলে । গালি এবং সমালোচনার কথা চেন ইর কানে আসতে থাকে । এই সব কথা শুনে চেন ই রেগে চেনচেনকে একদিন মারপিট করেন । মার খেয়ে চেনচেন উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করে । সে জানে, সে ভুল করেছে ।

    কিন্তু এ ধরণের শিক্ষার পদ্ধতির ফলাফল স্থায়ী হবে না । কিছু দিন পর চেনচেন আবার দুষ্টামি শুরু করল । মেয়ের বোকামীর ভাব দেখে চেন ই আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । স্বামী সান্ত্বনা দিয়ে তাকে বলেন, চেনচেনের দুষ্টামির দায়িত্ব আমরা বহন করি । অন্য লোক তাকে আদর করেন না । কিন্তু চেনচেন চিরকালই তাদের আদুরে মেয়ে । স্বামীর প্রেরণায় চেন ই মেয়ের শিক্ষার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে শুরু করলেন।

    চেনচেনের বোঝার শক্তি সীমিত । তাকে একটি কাজ বা একটি কথা শেখাতে চাইলে বারবার পুনরাবৃত্তি করতে হয় । অন্য লোকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেনচেনকে সম্ভাষণের কথা বলতে শেখানোর জন্য চেন ই প্রতিদিন চেনচেনকে পার্কে নিয়ে যান । চেনচেনকে সালাম দেয়ার কথা শেখানোর জন্য চেন ই অনেক বেশি চেষ্টা করেছেন ।

    একবার চেনচেনের সঙ্গে দৌঁড়ানোর সময় চেন ই লক্ষ্য করেছেন, চেনচেন দৌঁড়াদৌঁড়ি পছন্দ করে । দৌঁড়ানোর সময় চেনচেন খুব খুশি এবং স্বভাবিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে চেনচেনের কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না । সুতরাং চেন ই ধীরে ধীরে মেয়েকে দৌঁড়ানোর জন্য উত্সাহিত করার চেষ্টা শুরু করেন এবং তাকে কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেন । তিনি ভাবতে পারেননি , ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলোতে চেনচেন অনেক পুরস্কারও পেয়েছে । নানা তত্পরতায় অংশ নেয়ার প্রক্রিয়ায় সবাইর সঙ্গে চেনচেনের যোগাযোগ দিনদিন ভাল হয়ে ওঠে । চেনচেনের আস্থা বেড়ে যায় , সে আর দুষ্টুমি করছে না ।

    দুঃখের ব্যাপার হল এই যে , ৯ বছর বয়সে চেনচেনের বাবা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । মরে যাওয়ার আগে তিনি চেনচেনকে তার শয্যার সামনে ডেকে আনলেন । তিনি চেনচেনের ঘাড়ে হাত রেখে তাকে সঙ্গে নিয়ে এই পৃথিবী ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন । তাঁর ভয় যে, তিনি মরে যাওয়ার পর আর কেউই চেনচেনকে ভালবাসবেন না ।

    বাবা মারা যাওয়ার পর চেনচেনের মা একা মেয়েকে লালনপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । যাতে চেনচেন ভালভাবে বড় হয়ে উঠতে পারে তার জন্য এক সময় তিনি এক দিনে তিনটা কাজও করেছিলেন । একবার তার খুব জ্বর হয়েছিল । খাটে শুয়ে তিনি অসহায় অনুভব করছিলেন । ঠিক এই সময় মেয়ে চেনচেন মাকে চুমো দেয়, মাকে আলিঙ্গন করে সান্ত্বনা দেয়। সে মাকে পানি দিয়ে ওষুধ খাওয়ায় । সে দিন 'মা' দিবস । চেনচেন " মা , ছোট বোন আর চেনচেন" শিরোনামে তার আঁকা ছবি মাকে দেখাল, ছবিতে লেখা আছেঃ প্রিয় মা , 'মা' দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । মা চেন ই এত খুশি হলেন যে , নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে চেনচেন প্রয়োজনীয় মুহুর্তে তাকে অপরিসীম শক্তি এনে দিলো ।

    চেনচেন মাকে আরও বড় আশা দেখাল । মায়ের লালনপালনে চেনচেন জীবনযাপনের মৌলিক কৌশল শিখে নিল । চেনচেন এক দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন , আস্থাবান ও আনন্দিত মেয়েতে পরিণত হয়েছে ।

    ২০০৬ সালের গ্রীষ্মকালে চেনচেন মাকে একটি অতি সুখবর জানায় যে , সে বিশেষ অলিম্পিক গেমসের প্রতিমূর্তি দূত হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে । প্রথমে মা বিশ্বাস করেন নি। যখন শিক্ষক টেলিফোনে তাকে এই খবর জানান তখন তিনি বিশ্বাস করলেন, ব্যাপারটা সত্য । সেই সালে চেনচেন বিশেষ অলিম্পিক গেমসের প্রতিমূর্তি দূত হিসেবে এক টিভি বিজ্ঞাপন ছবি তোলে। ছবিটি থেকে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ চেনচেনের পরিচয় পেয়েছে । চেনচেন নিজের বড় হওয়ার কথা স্মরণ করে অকৃত্রিমভাবে মাকে বলে, মা, আমি আপনাকে ভালবাসি ।